যুগবার্তা ডেস্কঃ তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ১৭তম সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন স্টারলিং গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান। গত মাসে দায়িত্ব নেওয়া নতুন এই সভাপতি তাঁর কার্যালয়ে বুধবার বিকেলে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, কারখানা সংস্কার ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন
প্রথম আলো: ইতালি ও জাপানের দুই নাগরিক হত্যাকান্ডের পর তৈরি পোশাকের ক্রেতারা আতঙ্কিত। অনেকেই তাঁদের নির্ধারিত বাংলাদেশ ভ্রমণ বাতিল ও স্থগিত করেছেন। ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে বিভিন্ন দেশে ছুটছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি পোশাকশিল্পে কি বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে?
সিদ্দিকুর রহমান: বিদেশি নাগরিক হত্যাকান্ডের ঘটনা দুটি দুঃখজনক। বিশ্বের অনেক দেশেই সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। উন্নত দেশে এ ধরনের ঘটনা কিন্তু অহরহ ঘটছে। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক নিরাপদ। আমাদের দেশে বিদেশিরা খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস কিংবা ভ্রমণ করেন। তাই হঠাৎ করে দুটি ঘটনা ঘটায় দেশে-বিদেশে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া (ওভার রিঅ্যাকশন) হয়েছে। তবে বিদেশিরা উদ্বিগ্ন নন। অনেক ক্রেতাই দেশে আসছেন। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক কেনে সুইডেনভিত্তিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম। সেই ব্র্যান্ডের গ্লোবাল প্রডাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গত মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন। তাঁর সঙ্গে আমার বুধবার বৈঠক হয়। তিনি জানান, তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন না, বরং বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি পোশাক কেনার পরিকল্পনা করছেন। তাই আমার মনে হয়, নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যারা ওই দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা দরকার। তাহলেই মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।
প্রথম আলো: ব্যবসায়িক দিক দিয়ে সাময়িক কোনো ক্ষতি হয়েছে কি?
সিদ্দিকুর রহমান: দেশের বাইরে গিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া ভাবমূর্তির সংকট হয়েছে। তবে সরকার শিগগিরই দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এই সমস্যা কেটে যাবে।
প্রথম আলো: রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শন শেষ। এখন সংস্কারকাজ চলছে। তবে অভিযোগ আছে, অনেকের সংস্কারকাজই ধীরগতিতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার নেতৃত্বে নতুন কমিটি কোনো উদ্যোগ নেবে?
সিদ্দিকুর রহমান: পোশাক কারখানার সংস্কারকাজ ধীর হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স অনেক সময় কারখানাগুলোকে সংস্কারের পরিকল্পনা দিতে বিলম্ব করছে। এ ছাড়া ফায়ার ডোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এগুলো আবার মানসম্মত কি না, সেটিও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হচ্ছে। তা ছাড়া অর্থায়নের সমস্যা তো আছেই। সব মিলিয়ে কিছুটা সময় লাগছে। তবে আমরা ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানাগুলোকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে চাই। এ বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।
প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ টিপিপি চুক্তি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রর বাজারে জিএসপি স্থগিত। এ ধরনের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ, অবকাঠামোর অভাব ও কম উৎপাদনশীলতা নিয়ে দেশের পোশাক খাতকে আর কতটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব?
সিদ্দিকুর রহমান: পোশাক খাতের সম্ভাবনার পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। এটি সত্য যে আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা আছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আশপাশে সরকার যদি তাদের খাসজমিতে ছোট ছোট ক্লাস্টার করে পোশাক কারখানার জন্য জায়গা করে দেয়, তবে এই শিল্প সম্প্রসারণ সহজ হবে। এ ছাড়া আমাদের সরকারকে টিটিপি প্লাসে প্রবেশ করতে এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি, নতুন বাজার খোঁজা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের দিকে যেতে হবে।
প্রথম আলো: দেশে তো গ্যাসের তীব্র সংকট। সরকার ইতিমধ্যে ক্যাপটিভ জেনারেটরে গ্যাস দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে পোশাকশিল্প সম্প্রসারণ কতটা সম্ভব হবে?
সিদ্দিকুর রহমান: সরকার যদি কোয়ালিটি বিদ্যুৎ দিতে পারে, তবে ক্যাপটিভের প্রয়োজন নেই। তবে যাঁরা ইতিমধ্যে ক্যাপটিভ জেনারেটরের জন্য গ্যাসের অনুমতিপত্র পেয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদের অবশ্যই দেওয়া উচিত। আর ভবিষ্যতে অবশ্যই বয়লারের জন্য গ্যাস দিতেই হবে। সরকার সেটি দেবে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আর এটি অব্যাহত থাকলেই শিল্পের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হবে না। এ ছাড়া যেসব কারখানা ঢাকার বাইরে স্থানান্তর হচ্ছে বা যাঁদের কারখানা সম্প্রসারিত হচ্ছে, তাঁদের গ্যাসের পুনঃসংযোগ ও লোড বৃদ্ধি করা দরকার। এ বিষয়টি নিয়ে মালিকদের ভোগান্তিতে না ফেলতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি। প্রথম আলো