বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড গুম ব্লগার হত্যা, গণমাধ্যমের ওপর কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণকে বাংলাদেশের মানবাধিকারের বড় সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার দেশটির বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণমাধ্যম পরিস্থিতি, আইনের শাসন ও শ্রম পরিস্থিতির চিত্র। এ প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন দেশের বেশ কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী। তাদের মতে, সরকারের উচিত এ প্রতিবেদনের সুপারিশ গ্রহণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে যে সব সুপারিশ করা হয় সরকার তা গ্রহণ না করলে জনমনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিবেদনের সাথে একমত পোষণ করেছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আ্নুরোধ করেন।
মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সরকারি বাহিনীর হত্যাকা-ের বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই। আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় সন্দেহজনক মৃত্যু, ক্রসফায়ার, গুমের উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিনের উধাও হয়ে যাওয়া এবং ভারতের শিলংয়ে তার রহস্যজনক আবির্ভাবের বিবরণও রয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি এবং সরকারের কাজকর্মের অস্বচ্ছতাকে মানবাধিকারের সমস্যা হিসেবে প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন এবং স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তার, বিচার বিভাগের দুর্বল সক্ষমতা ও স্বাধীনতা এবং বিচারপূর্ব দীর্ঘ বন্দীদশাও মানবাধিকার সমস্যা হিসেবে রয়ে গিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে কারাগারগুলো অবস্থা করুণ। ঠাসাঠাসি করে থাকা, অপর্যাপ্ত স্যানিটেশনের কারণে স্থানীয় একটি এনজিও বাংলাদেশের কারাগারগুলোকে ‘হেফাজতে মৃত্যু’র সাথে তুলনা করেছে। কারা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, গত আগস্টে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা ছিল ৬৯,৭১৯ জন যেখানে ধারণ ক্ষমতা ৩৪,৬৮১ জন। এদের মধ্যে ৭৪ ভাগই বিচারাধীন অথবা বিচারের জন্য অপেক্ষমান। সরকার কোনো এনজিওকে কিংবা রেড ক্রিসেন্টকে কারাগার পরিদর্শনের অনুমতি দেয় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক সংঘাত এবং সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিও সমস্যা হিসেবে রয়ে গিয়েছে। কিছু বেসরকারি সংস্থাৃ তাদের কার্যক্রম চালাতে আইনি এবং অনানুষ্ঠানিক বাধার অভিযোগ করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন এবং যুব সংগঠনের সহিংসতাও দেশটিতে একটি সমস্যা।
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিবেদনের সাথে একমত পোষণ করেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আ্নুরোধ করেন।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র পরিচালক নাসিরুদ্দিন এলান বলেন, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্টে যে সব সুপারিশ করা হয় সরকার তা গ্রহণ না করলে জনমনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হবে।
৪০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর বিশ্বের দেশগুলোর মানবাধিকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। কংগ্রেসে প্রণীত আইনের ফলে মার্কিন সরকারের এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। এর ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। সারা বিশ্বের মানবাধিকারকর্মী, সরকারি মহল, শিক্ষা ও গবেষণায় এই প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে কাজ করে। মাছুম বিল্লাহ, পঅামাদের সময়.কম