বার্ধক্যভাতা পেতে মায়ের কঙ্কাল ৯ মাস আগলে রাখল ছেলেরা!

যুগবার্তা ডেস্কঃ বার্ধক্যভাতা বন্ধ হয়ে ‌যাবে এই আশঙ্কায় মায়ের কঙ্কাল ৯ মাস আগলে বসে ছিল তার ছেলেরা! এই ঘটনা কলকাতার নদীয়ার হরিণঘাটার। রবিবার পুলিশ গিয়ে কঙ্কালটি উদ্ধার করে। আটক করা হয়েছে বৃদ্ধার দুই ছেলেকে।

হরিণঘাটার সিমহাটের বাসিন্দা ননীবালা সাহা (৮৬) মারা গিয়েছিলেন গত জানুয়ারি মাসে। তবে তার মৃত্যুর খবর কাউকে দেওয়া হয়নি। সৎকারও করেনি দুই ছেলে। এর বদলে মায়ের দেহ ঘরের খাটে রেখে প্রায় ৯ মাস ধরে আগলে রেখে জীবন কাটাচ্ছিল তারা।

ননীবালার দুই ছেলে অরুণ ও অজিত। দুজনেরই বয়স হয়েছে। অরুণ প্রাইভেট টিউশন পড়াতেন। তবে এখন আর অনেকদিন পড়ান না। এদিকে অজিত বেকার মানুষ। দুজনেরই মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ।

পুলিশি জেরায় দুজনে জানিয়েছে, জানুয়ারির ঠাণ্ডায় ননীবালা দেবী মারা যাওয়ায় দুজনে ভেবেছিলেন কয়েকদিন পরে দেহ দাহ করবেন। কারণ সেসময়ে একজনের পায়ে ও একজনের দাঁতে ব্যথা ছিল। এই ভেবে দেহ কয়েকদিন বাড়িতে রেখে দিতেই পোকা ধরে যায়।

এরপরে তারা আর দেহ বাড়ির বাইরে নিয়ে যাননি। এতদিন ধরে দেহ বাড়িতে রেখে দেওয়ায় কঙ্কাল বেরিয়ে গেছে। বাড়িতে এই মাঝের কিছুদিনে কাউকে ঢুকতে দেননি দুই ভাই। কেউ ননীবালা দেবীর কথা জিজ্ঞাসা করলে বলতেন মা ভালো আছে। কেউ দেখা করতে চাইলে কখনও বলতেন মা অসুস্থ, দেখা করা যাবে না। এমন জিনিস দীর্ঘদিন ধরে চলায় প্রতিবেশীদের মনে সন্দেহ জাগে। পুরসভার পক্ষ থেকে একজন বাড়িতে আসেন কয়েকটি সরকারি কাজের তদারকির জন্য। তাদেরও বাড়িতে ঢুকতে দেননি দুই ভাই। এরপরই সেই পুর কর্মকর্তা দল বেঁধে রবিবার সকালে সাহা বাড়িতে হানা দেন। সঙ্গে ছিলেন পাড়ার অন্যান্যরাও।

অন্ধকার ঘরে ঢুকতে গেলে দুই ভাই বাধা দেন। বলেন, মা অসুস্থ, ঘুমোচ্ছেন। তবে সকলে জোর করে ঢুকে দেখেন নোংরা ঘরের খাটে কম্বল জড়ানো কিছু একটা রয়েছে। কম্বল সরাতেই ননীবালার কঙ্কাল বেরিয়ে আসে। তারপরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ননীবালার স্বামী কুঞ্জমোহন সাহা বেঙ্গল কেমিক্যালে চাকরি করতেন। কুড়ি বছর আগে তার মৃত্যু হয়। দুই ভাইয়ের মধ্যে অরুণ বিএসসি পাশ। চাকরি না পেয়ে টিউশন পড়াতেন। তবে গত দশ বছর সেসবও ছেড়ে দেন তিনি। দুই ভাইয়ের খেয়ে-পরে বাঁচার অবলম্বন মায়ের বার্ধক্যভাতা। আর এই বার্ধক্যভাতা বন্ধ হয়ে ‌যাবে বলে মায়ের মৃত্যুর খবর কাউকে জানায়নি তারা। -ইত্তেফাক