যুগবার্তা ডেস্কঃ চলতি বছরের জুলাই মাসের তুলনায় আগস্টে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। তবে আগস্টে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আর খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এক মাসের ব্যবধানে পয়েন্ট-টু পয়েন্টের ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কমেছে। জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ, আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অপরদিকে আগস্টে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। আগস্টে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। চলতিবছরে বাংলাদেশের জিডিপি দাড়বে ৮.২৫। ক্রয়ক্ষমতা সমতার দিক থেকে (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি- পিপিপি) ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিংগাপুরের, ইরাক, কলম্বিয়ার মত দেশগুলোকে পিছে ফেলে অর্থনৈতিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে দেশের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন।
ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ সম্পর্কে মাননীয়মন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের পথে হাঁটতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে এককথায় বলা যায়, ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন অপরিহার্য। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত, কারিগরি ও আর্থসামাজিক দলিল এই পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ, ইচ্ছা ও নির্দেশে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে এই পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার এই পরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং পানি, জলবায়ু, পরিবেশ ও ভূমির টেকসই ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলাসহ ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অর্জনের লক্ষ্যে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাংলাদেশের স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে।
মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী তার সাম্প্রতিক ভিয়েতনামের ভারতীয় মহাসগার সম্মেলন ২০১৮ কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সফরটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কেননা আগামী ২০৩০ সালের পূর্বেই ভারত হবে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। এই সম্মেলনে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে একটি অর্থনৈতিক জোটের কথা বলা হয়েছে এবং সবগুলো দেশ এই বিষয়ে একমত পোষন করেছে। পাশাপাশি এই সফরে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ বন্ধ করতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একতা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ প্রতিহত করতে হবে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের সব দেশকে বাণিজ্য যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ-দক্ষিণ বাণিজ্য পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে।
মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, ভারতীয় মহাসগার সম্মেলন ২০১৮ সফরে সাইড লাইনে তিনি শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন সে বিষটিতেও আলোকপাত করেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নিয়ে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও বেশি ফলপ্রসু করতে সব প্রকার বাণিজ্যিক বাধা দূর করাসহ বাংলাদেশের জ্বালানী খাতকে আরো বেগবান করতে ভারত বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তা অর্জনে সহযোগীতা অব্যাহত রাখা, চার দেশীয় পরিবহন নেটওয়ার্ক, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ, নতুন বিদুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানীর বিষয়ে চলমান আলোচনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানন। এছাড়া রোহিঙ্গ ইস্যু ও আসাম ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার এ বিষয়েগুলো নিয়ে ভারত সরকার আত্নরিক বলে সুষমা স্বরাজ আশ্বস্ত করেছেন।
মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বাংলাদেশে শ্রীলংকার একটি বড় জনগোষ্ঠী উৎপাদন ও সেবা খাতকে সহায়তা করতে প্রযুক্তি ও পরিচালনা পদে অত্যন্ত বন্ধুসুলভ পরিবেশে কাজ করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীতামুলক দ্বিপক্ষীয় বানিজ্য বাড়ানো, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বানিজ্য চুক্তি (এফটিএ বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) বাস্তবায়নের দ্রুতগতি আনয়নসহ গত তিন বছর ধরে ঝুলে থাকা উপকুলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান। দুদেশের মধ্যে দ্রব্য ও সেবা বাণিজ্য আরো বৃদ্ধির জন্য দ্বিপাক্ষীয় মুক্ত বানিজ্য চুক্তি (এফটিএ বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) এবং সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগতিা চুক্তি সহজতর করতে শ্রীলংকান সরকার অত্যন্ত যত্মবান হবে বলে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।