বরিশাল অফিস ॥
আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলায় চোর আতঙ্কে জনমনে চরম আতংক দেখা দিয়েছে। পুলিশের খাতায় চুরির কোন তথ্য, মামলা ও আটক না থাকলেও দুই উপজেলার ৩০ গ্রামের মানুষ চোর আতঙ্কে গত দুই মাস থেকে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন।
অপরদিকে রাতে ফেলে যাওয়া একটি চিঠি নিয়ে সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। এলাকার সুশীল সমাজের দাবি এলাকার চিহ্নিত মাদক সেবী ও জুয়ারীদের দমন করতে পারলেই চুরি-ডাকাতি কমে যাবে।
সূত্রমতে, আগৈলঝাড়ার কালুপাড়া গ্রামে গত ৩১ ডিসেম্বর প্রহ্লাদ দাস, মাখম হালদার, মন্টু মন্ডল, দিলীপ দাসের বসত ঘরের বাহির থেকে শিকল আটকে রেখে সংঘবদ্ধ চোরেরা ওই বাড়ির গোপাল দাসের পুত্র গৌরাঙ্গ দাসের বসত ঘরে চুরির সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকারে চোরেরা পালিয়ে যায়। একই রাতে জেলা উত্তর বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লাল্টুর সুজনকাঠী গ্রামের বাড়িতে এনজিও ওয়ার্ল্ডভিশনের কড়া নিরাপত্তার মধ্যে লাল্টুর বোন কামরুন্নাহার রুবি, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া ওয়ার্ল্ডভিশন কর্মকর্তা লিমন রায়, মার্গারেট দাসের ঘরের একাধিক তালা ভেঙ্গে চোরের দল ঘরে প্রবেশ করে। এসময় ওইসব পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে এলাকাবাসি এগিয়ে আসলে চোরেরা পালিয়ে যায়। ওইদিন রাতেই উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল লতিফ মোল্লা ও মান্নান খলিফার বাড়িতে চোরেরা দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করলে লোকজন টের পেয়ে চিৎকার করায় চোরেরা পালিয়ে যায়। একইরাতে ওই গ্রামের ঠিকাদার ফরহাদ সরদারের বাড়িতে লোকজন না থাকায় চোরের দল ঘরের তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে চুরি করে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন রাতেই চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, অতিসম্প্রতি উপজেলার নগরবাড়ির হারুন জমাদ্দারের ঘরের সামনে থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়। ওই চিঠিতে লেখা রয়েছে “পাঁচ নং বিপদ সংকেত! আমরা আসছি প্রস্তুত থাকিস। তোদের এলাকায় অনেক প্রভাবশালী লোক আছে, তারা আমাদের কিছু করতে পারবেনা। এমনকি তোদের পুলিশও আমাদের কিছু করতে পারবেনা। আমাদের দল অনেক ভারি”। এই চিঠি পাওয়ার পরে এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরে।
এসব ঘটনা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও থানায় কোন মামলা রেকর্ড হয়নি, আটকও হয়নি কেউ। এদিকে বিভিন্ন গ্রামেরপাড়া মহল্লার বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চোর আতঙ্কে উপজেলা সদর বাজার, রাজিহার বাজার, বাশাইল বাজার, নগড়বাড়ি, জবসেন, গৈলা, শিহিপাশা, বড়ইতলা, দক্ষিণ গৈলাসহ বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার ও গ্রামের পাড়া মহল্লায় স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন। পাহারা দেয়া গৈলা ইউনিয়নের উজ্জল হোসেন জানান, গত এক মাস ধরে তারা এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন। তবে এই সময়ের মধ্যে কোন পুলিশের সাথে তাদের দেখা হয়নি। গৈলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন বলেন, তিনি ইউপি সদস্যদের ডেকে তাদের নেতৃত্বে সকল এলাকায় পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি চুরির ঘটনাগুলো শুনেছেন। বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, একটি অসাধু চক্র আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব করে আসছে। একইভাবে গৌরনদী প্রায় প্রতিটি গ্রামে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দুই মাস থেকে এ উপজেলায় পাহারা বসিয়েছেন এলাকাবাসী।