বরিশালের মডেল নারী প্রশাসক শতরূপা তালুকদার

কল্যাণ কুমার চন্দ,বরিশালঃ
’৮০র দশকে তৎকালীন গৌরনদী থেকে আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বারের মতো উপজেলার প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে একজন নারী এসিল্যান্ড নিয়োগের শুরুতে উপজেলার জনগন অস্বতিতে থাকলেও যোগ্যতা, সততা আর জনসেবার মাধ্যমে এখন আগৈলঝাড়াবাসীর আস্থার স্থল হয়ে দাড়িয়েছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) (ভূমি) শতরূপা তালুকদার।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র মতে, দীর্ঘ দিন শূন্য পদের পর ২০১৬ সালের ৩১মে এসিল্যান্ড হিসেবে শতরূপা তালুকদার যোগদানের পরই এক যুগের জঞ্জাল ভরা জট পাকানো ভূমি সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ভূমি অফিসকে দালাল ও জঞ্জাল মুক্ত করেন তিনি। শতরূপা নিজেকে দূর্নীতির উর্ধে রেখে সততা, নিষ্ঠা আর জনগনের সাথে সরাসরি কথা বলে উপজেলার ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার দ্রæত সমাধান করে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারের নাগরিক সেবা পৌঁছে দিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসকে এখন আগৈলঝাড়া উপজেলার মডেল প্রশাসন হিসেবে পরিচিতি দিয়েছেন।
ভূমি সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সর্বোচ্চ পদে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব পালন কালীন সময়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, দাপ্তরিক ন্যায় বিচার ও জনগনকে আন্তরিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনায় তার দক্ষতাকে নারী সাফল্যের অগ্রগতির ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখছেন উপজেলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাসহ নাগরিক সমাজ।
তিন যুগের পুরোনো উপজেলা আগৈলঝাড়া। রাজনীতি, স্বীয় সংস্কৃতি আর সমৃদ্ধ ইতিহাসের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলায় সাধারণ জনগনের বিপক্ষে অন্যায়ভাবে বিতর্কিত কাজ করে অনেক কর্মকর্তাই জনগনের আস্থা হারিয়েছিলেন। আবার অনেক কর্মকর্তার ছিল সমস্যা সমাধানে অনাগ্রহ। এসব কারণে উপজেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ দ্বিতীয় এই পদটিতে দেখা দেয় দীর্ঘদিন গতিহীনতা আর অস্বচ্ছতা। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি দাপ্তরিক কাজ করেন। এই সময়ের মধ্যে যে কোন সময় সাধারণ জনগন তার সাথে দেখা করার সুযোগ পান। কথা বলেন তাদের বিভিন্ন সমস্য নিয়ে।
উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর প্রথম এসিল্যান্ড হিসেবে ১৯৮৯ সালের ১৩ মে যোগদান করেন মতিনুল হক। সর্বশেষ সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে ১৯৯৯ সালের ১১ এপ্রিল আগৈলঝাড়ায় যোগদান করেন মীর খায়রুল আলম। তিনি ২০০১ সালের ৯ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশাসক হিসেবে নারী প্রশাসকের যোগ্যতা আর সাধারণ জনগনের আস্থা হিসেবে তাদের মনে জায়গা করা ও প্রশ্ন তোলা মানুষের নেতিবাচক ধারণা পাল্টাতে খুব বেশি সময় লাগেনি শতরূপা তালুকদারের।
শুধুমাত্র প্রশাসনের প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজই নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ, সংগীত প্রেমী, সাস্কৃতিমনা ও একজন ধর্মভীরু রমনী হিসেবে অল্প দিনেই উপজেলার সর্বত্র নিজেকে পরিচিতি করেছেন তিনি। বছর না ঘুরতেই উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে শতরূপা তালুকদারের পরিচিতি মিলেছে বরিশাল জেলায়ও।
৩০তম বিসিএস উত্তীর্ন শতরূপা তালুকদার আইন পেশার ছাত্রী। ২০১৬ সালের ৩১মে এসিল্যান্ড হিসেবে আগৈলঝাড়ায় যোগদান করেই স্বল্প মৃদুভাষী, নিষ্ঠাবান হিসেবে নারী তো বটেই, কর্মের গুনে যোগ্য প্রশাসক হিসেবেও জেলায় এখন মডেল হয়ে দাড়িয়েছেন।
বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সহকারী কমান্ডার ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত বলেন, উপজেলা প্রতিষ্ঠার পর ভূমি সেক্টরের বিশৃংখলা কোন প্রশাসক ফিরাতে পারেনি, শতরূপা তালুকদার একজন নারী প্রশাসক হয়ে নিজ দক্ষতা, সততার গুনে অল্প দিনেই প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছ গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। প্রশাসক হিসেবে বিশেষ করে নারী প্রশাসক হিসেবে তিনি আগৈলঝাড়াবাসীর আস্থা ও আশ্রয়ের একটি ঠিকানার মডেল প্রশাসক হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন।