পৌর নির্বাচনে ইসি’র বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ

যুগবার্তা ডেস্কঃ আসন্ন দেশব্যাপী পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কিছু ‘অস্বাভাবিক কর্মকান্ড’ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিশ্বাসযোগ্যতাকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ফেনীর তিনটি পৌরসভায় মনোনয়নপত্র দাখিল এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় কিছু ‘অস্বাভাবিক ঘটনা’ থাকার পরও নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে একই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের কারোটাই বাতিল করেনি কমিশন।
এর আগে ২৬ নভেম্বর কমিশন বলেছিল, একই দল থেকে দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলে তাদের একজনের প্রার্থীতা বাতিল করা হবে।
এই অবস্থায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলে ইসির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরী হয়েছে।
তবে নির্বাচন কমিশন বলছে, এসব বিষয় দেখাশোনার দায়িত্ব স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার। ৩০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয়ভিত্তিতে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শনিবার এবং রোববার কমিশন মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, রিটার্নিং কর্মকর্তারা এ পর্যন্ত বিএনপির ১০ এবং আওয়ামী লীগের ৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মোট ১০০ বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে তারা।
কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ সময়ই অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার (সাধারণ) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেনের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচনের কমিশনের নির্দেশনা আমলে নিতে চান না। তারা বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের নির্দেশনা মেনে কাজ করেন। এর পেছনে কাজ করে তাদের পদোন্নতির বিষয়টি।’
ফেনীর তিনটি পৌরসভায় মোট ৪৮টি কাউন্সিলর পদে একটি করে মনোনয়নপত্র জমা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিল না করতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তবে তিনটি মেয়র পদে তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা পরশুরামে বিএনপির মেয়র পদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে যাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করা যায়।
ফেনী সদর উপজেলায়ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগের সাথে লড়বে জাতীয় পার্টির এক প্রার্থী।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশ্চর্য হয়ে বলেন, তারা কমিশনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।
রোববার এ বিষয়ে কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হলেও তারা প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা নেননি। নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, ইসি ফেনী থেকে কোনো অভিযোাগ পায়নি। তাই এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বঞ্চিত হন, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন।’
সাবেক কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পরিবেশ সন্তোষজনক না হলে নির্বাচন কমিশন চাইলে যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। ‘তবে বর্তমান কমিশন তা করবে না।’
নির্বাচনী বিধি অনুসারে, এক পৌরসভায় একই দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে একজনের প্রার্থীতা বাতিল করা হবে। তবে তিনটি পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের পৌরসভায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও কারো প্রার্থীতা বাতিল করেনি।
বরগুনার বেতাগি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষর সংবলিত মনোনয়নপত্র নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান মেয়র আলতাফ হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া।
পরে দ্বিতীয়জনের প্রার্থীতা বাতিল করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া ফেনী, চাঁদপুর এবং কুমিল্লা জেলায় বিএনপির ১০ প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তারা। আমাদের সময়.কম