পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হুংকারে উত্তেজনা

যুগবার্তা ডেস্কঃ ক্ষমতাসীন জোট ও বিএনপির একই দিনে রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি এবং সেটি নিয়ে পরস্পরের প্রতি হুমকিতে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে রাজনীতির অঙ্গন ছাপিয়ে জনমনেও। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল আগামী শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে কর্মী সমাবেশ করবে।

একই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আহ্বান করেছে বিএনপি। ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এরই মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন যাতে প্রতিপক্ষকে মাঠে নামতে দেওয়া না হয়। ১৪ দলের সমাবেশ আহ্বানকে উসকানি হিসেবে দেখছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত সোমবার ১৪ দলের এক বৈঠক থেকে শনিবার মহানগর নাট্যমঞ্চে কর্মী সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যদিকে বিএনপি ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার জন্য পুলিশের অনুমতি মেলেনি এখনো। ফলে কর্মসূচি দুই দিন পেছানো হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, পুলিশের অনুমতি না মিললেও আগামী শনিবার তারা সমাবেশ করবেই। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতেই মূলত দুই পক্ষের এ লড়াই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ওই দিন উভয় পক্ষ রাজপথে থাকলে অঘটন ও সংঘর্ষ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিএনপির দাবি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা বলছে, সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। এতে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।

সরকারের নতুন প্রতিপক্ষ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার ২২ সেপ্টেম্বরের নাগরিক সমাবেশের পর আগামী শনিবার বিএনপির সমাবেশ হতে যাচ্ছে। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১ অক্টোবর থেকে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ঐক্যপ্রক্রিয়ার সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা। গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১ অক্টোবর থেকে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান; যদিও এরই মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশি হয়রানি ও ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছে। নির্বাচনের আগে পুলিশি তৎপরতা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা বিএনপির।

১৪ দলের আগামী শনিবারের সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রস্তুতি সভা করে আওয়ামী লীগ। সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আগে থেকেই ঢাকা দখলে ছিল, ইনশাআল্লাহ আগামীতেও ঢাকা দখলে থাকবে। ’ তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুত থাকবেন, যেন ওই (বিএনপি) অপশক্তি মাঠে না নামতে পারে। ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন। চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। আমরা দেখব, কারা মাঠে নামবে আর কে নামবে না। আগামী এক মাস আপনাদের কোনো কাজ নেই। ১৪ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাড়া-মহল্লায় সজাগ থাকবেন। কোনো নৈরাজ্য হলে জনগণকে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। ’

আগের দিন ১৪ দলের বৈঠক শেষে মোহাম্মদ নাসিম বলেছিলেন, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ১৪ দলের শনিবারের সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া অক্টোবর মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁদের যে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল সেটি ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন (শনিবার) মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের সমাবেশ আহ্বানকে উসকানি বলে অভিহিত করা হয়। রিজভী জানান, তাঁদের শনিবারের সমাবেশের অনুমতির জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আশা করেন, সরকার এই সমাবেশের অনুমতি দেবে।

অবশ্য গতকাল পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি মেলেনি। তবে অনুমতি না দিলেও বিএনপি ওই সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

১৪ দলের মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশও নির্ধারিত দিনে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে এক জনসভায় তিনি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি হুঁশিয়ারিও ব্যক্ত করেন।

১৪ দলের সমাবেশ আহ্বানকে বিএনপি ‘সরকারের উসকানি’ বলে অভিহিত করেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘এখানে উসকানির কী আছে! তারা (বিএনপি) তাদের সমাবেশ করবে, ১৪ দলও তাদের সমাবেশ করবে। দুই স্থানের দূরত্ব চার-পাঁচ কিলোমিটার হবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘অবান্তর কথাবার্তা বলে নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শঙ্কার পরিবেশ তৈরি করছে বিএনপি—এটা দুঃখজনক।বিএনপি ও ১৪ দলের শনিবারের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে কোনো অঘটনের আশঙ্কা করছেন কি না—জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন, তার আগেই সমন্বয় হয়ে যাবে।-কালেরকন্ঠ