পাকিস্তানের সঙ্গে আপাতত সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুগবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ আপাতত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী এ কথা বলেছেন। এ ছাড়া প্রশ্নোত্তর পর্বে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের মন্তব্য, আফ্রিকায় জমি লিজ, কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি বন্দীর সংখ্যা বিষয়গুলো এসেছে।
এক সম্পূরক প্রশ্নে সরকারি দলের আবদুল মান্নান জানতে চান, বাংলাদেশে পাকিস্তান দূতাবাসের এক কর্মীকে আটকের পরপরই পাকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন নিখোঁজ হয়ে যান। পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশের নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এ অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা জরুরি কি না?
জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, ‘কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চললে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় না। যুদ্ধের সময়ও সম্পর্ক বজায় থাকে। আজ পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। আপাতত আমরা সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাচ্ছি না। সময়কে বিবেচনায় নিতে হবে। জাতীয় স্বার্থ মাথায় রাখতে হবে। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করি এবং পদক্ষেপ নিয়ে থাকি। পাকিস্তানের ​ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য হবে। ভবিষ্যৎই বলে দেবে সম্পর্ক কোন দিকে যাবে।’
ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রদান ও কার্যকর করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বরাবরই যথাযথ এবং জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অন্য দেশ হতেও একই ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করি। কিন্তু পাকিস্তান বারবার আমাদের হতাশ করেছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত বিবৃতি/মন্তব্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল, যা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। পাকিস্তানকে এ কথা কঠোরভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল আচরণ করবে আমরা আশা করি।’
আফ্রিকায় জমি লিজ
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রহিম উল্লাহর প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আফ্রিকা মহাদেশে কৃষি জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের নিটল নিলয় গ্রুপ উগান্ডায় ১০ হাজার হেক্টর ও ভাটিবাংলা এগ্রিটেক লি. তানজানিয়ায় ৩০ হাজার হেক্টর জমি লিজ গ্রহণের ব্যাপারে তাদের সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছে। এসব লিজ নেওয়া জমিতে বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এসব স্থানে খাদ্যশস্য উৎপাদন শেষে তা বাংলাদেশে বিক্রয় করা যাবে।
বিভিন্ন দেশে ১৩ হাজার বাংলাদেশি কারাবন্দী
বিভিন্ন দেশের কারাগারে বর্তমানে ১৩ হাজার ২৪ জন বন্দী রয়েছেন বলে নরসিংদী-৩ আসনের সাংসদ সিরাজুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ৩৭টি দেশে বাংলাদেশি বন্দী রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্দী ভারতের কারাগারে। সেখানে ৩ হাজার ৯৩২ জন বাংলাদেশি আটক আছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার কারাগারে ৩ হাজার ৫৩৬ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৫৮৪ জন, ওমানে ৯১২ জন, কাতারে ৪৪৭ জন আটক আছেন।
কোথাও বাংলাদেশি আটকের খবর পেলে সরকার প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দিয়ে তাদের মুক্ত ও দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করে বলে মন্ত্রী জানান।
কারাগারে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী
দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি বন্দী রয়েছে। দেশে বর্তমানে (২৪ জানুয়ারি ২০১৬) বন্দী ধারণক্ষমতা ৩৪ হাজার ৭৯৬ জনের। এর বিপরীতে ৬৯ হাজার ৭৭৪ জন বন্দী রয়েছেন।
সরকার দলীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ারের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংসদকে এ তথ্য জানান। বন্দী সংখ্যা বৃদ্ধি ও আটক বন্দীর গড় সংখ্যা বিবেচনায় কারাগারের বন্দী ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার হওয়া উচিত বলে মন্ত্রী এ সময় মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম-৪ আসনের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্লগার হত্যাকারীসহ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কারণে নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারী ও আক্রমণকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হয়েছে।