নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত। এ লক্ষ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাত আদালতে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়েছে।
ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে নূর হোসেন ও তাঁর দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বারাসাতের আদালতে মামলা চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। এ অবস্থায় গতকাল এই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন উত্তর চব্বিশ পরগনার প্রধান সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শান্তময় বসু।
গতকাল সোমবার ছিল নূর হোসেনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন। দুপুর ১২টায় কলকাতার দমদমের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁকে বারাসাতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রবীর কুমার মিশ্রের আদালতে আনা হয়। তবে মামলার অপর দুই আসামির মধ্যে জামিনে থাকা তাঁর সহযোগী খান সুমন অনুপস্থিত ছিলেন। আদালতে হাজিরা দেন নূরের অপর সহযোগী ওয়াহেদুজ্জামান সেলিম।
কিন্তু শুনানি শুরু হওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়। এরপর নূর হোসেনের পক্ষে শিশির নন্দীসহ চার আইনজীবী আদালতে একটি আরজি জানান। এ আরজিতে তাঁরা বলেন, মামলার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মামলা প্রত্যাহার করা যাবে না।
এই বক্তব্য শোনার পর বিচারক নূর হোসেনের এ আবেদন ও সরকারের মামলা প্রত্যাহারের আবেদন বিবেচনার জন্য শুনানি করতে বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিমের আদালতে পাঠিয়ে দেন। মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিম আগামী ২১ সেপ্টেম্বর আবেদন দুটির বিষয়ে রায় দেবেন।
পিপি শান্তময় বসু প্রথম আলোকে জানান, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলা তুলে নিয়ে নূর হোসেনকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এ নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছায়। একইভাবে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে নূর হোসেনকে ফেরত পাঠানোর আবেদন আসে ভারত সরকারের কাছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এ মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, নূর হোসেন নিজে কোনো উকিল দেননি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ধরা পড়া খান সুমনের হয়ে মামলা লড়ছেন আইনজীবী অনুপ ঘোষ। মামলা প্রত্যাহারে সরকারের আবেদনের বিষয়ে তিনি বিবিসিকে বলেন, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, সরকারপক্ষ চাইলে এ রকম আবেদন করতে পারে।
অনুপ ঘোষ আরও বলেন, ‘সরকারি উকিল তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ আছে। এ জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাতে চায় সরকার। তবে যে আদালতে আবেদনটি করা হয়েছে, সেই বিচারকের এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিম ২১ সেপ্টেম্বর এ আবেদন শুনে রায় দেবেন।’
প্রসঙ্গত, কলকাতায় নূর হোসেন গ্রেপ্তারের ১৪ মাস পার হলেও দীর্ঘ এই সময়ে তাঁর পক্ষে কোনো জামিনের আবেদন জানানো হয়নি। তবে তাঁর দুই সহযোগী বারাসাতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারকের আদালত থেকে জামিন না পেলেও জেলা দায়রা জজ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
১৮ আগস্ট নূর হোসেন ও তাঁর দুই সঙ্গীর বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র পেশ করলেও বিচারকাজ শুরু হয়নি। হাজিরার প্রতিটি তারিখে কোনো না কোনো আসামি অনুপস্থিত থাকায় অভিযোগ গঠন করতে পারেননি বিচারক। গত বছরের ১৪ জুন রাতে দুই সঙ্গীসহ নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে বিধাননগর পুলিশের বিশেষ বাহিনী।
গত বছরের ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এ ঘটনার তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং এর পরের দিন ১ মে একজনের বস্তাবন্দী লাশ শীতলক্ষ্যায় ভেসে ওঠে। লাশ উদ্ধারের আগেই নূর হোসেন আত্মগোপন করেন। পরে পালিয়ে ভারত চলে যান।