গৌরনদীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে জামায়াতের দলীয় কার্যক্রম

বরিশাল প্রতিনিধি ॥
আল-আমিন টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজটি আ’লীগ সরকারের সময়ে এমপিওভুক্ত করা হলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন প্রভাবশালী কয়েকজন জামায়াত নেতা। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারীসহ সকল সদস্য, কর্মরত অধ্যক্ষ এবং অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীরা সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত।
এক্ষেত্রে আ’লীগতো দূরের কথা জামায়াতের শরিকদল বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদে রাখা হয়নি। শিক্ষার আড়ালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে জামায়াতের দলীয় কার্যক্রম। ফলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন জামায়াতের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ্ববর্তী গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে।
অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত নেতারা কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিজদলের নেতাদের নিয়ে পকেট কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো পরিচালনা করছেন। এনিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, আ’লীগ-বিএনপির নেতাকর্মী ও সুশীল সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বের গয়নাঘাটা ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে একটি এতিমখানা নির্মানের জন্য এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান ঠাকুর ৭৬শতক জমি দান করেন। ওইজমির ওপর স্থানীয় জামায়াত নেতাদের উদ্যোগে আল-আমিন এতিমখানা গড়ে তোলা হয়। ২০০৬ সালে ওই এতিমখানার জমি ও পাশ্ববর্তী সরকারি খালের জমি ভরাট করে ওইস্থানে তারা (জামায়াত নেতারা) গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বরিশাল জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজপর্যন্ত কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন জামায়াতের বরিশাল জেলা সুরা কমিটির সাবেক সদস্য ও বর্তমান মহানগর জনশক্তি কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন সিকদার। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন কলেজ অধ্যক্ষ মো. ইখতিয়ার উদ্দিন। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুবাদে তাকে অত্র কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সূত্রমতে, অধ্যক্ষ মো. ইখতিয়ার উদ্দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় শিবিরের সক্রিয় নেতা ছিলেন। গৌরনদীর স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়া সত্বেও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য করা হয়েছে বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ জামায়াত সমর্থিত মো. সেলিম ভুঁইয়াকে। শিক্ষানুরাগী অপর সদস্য হলেন, উজিরপুর উপজেলার ধামুরা ডিগ্রি কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন মিয়া। তিনি দীর্ঘদিন যাবত জামায়াতের গৌরনদী পৌর আমীর পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. সরোয়ার আলম সিকদারকে ম্যানেজিং কমিটির সেক্রেটারী করা হয়েছে। এছাড়া জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের গৌরনদী প্রতিনিধি নাসির উদ্দিনকে ছাত্র ও জামায়াতের নারী সদস্য আনোয়ারা বেগমকে ছাত্রী অভিভাবক সদস্য করা হয়েছে। এছাড়াও অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতির কন্যা ও অধ্যক্ষের স্ত্রীসহ জামায়াত নেতাদের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনদের স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক ও কর্মচারী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্য জামায়াতের নেতা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের সভার আড়ালে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসেই নিরাপদে তাদের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এখন জামায়াতের মূল ঘাঁটিতে পরিনত হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু অভিযোগ করেন, গৌরনদীর জামায়াতের নেতাকর্মীরা নাশকতামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে গৌরনদীতে ৫ জনকে জীবন্ত হত্যা করেছে। এছাড়া তারা সাতটি গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করে। এখনও দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল কলেজে বসে তারা (জামায়াত নেতারা) প্রায়ই সভা করছেন। বিষয়টি জানা সত্বেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেননা বলেও তিনি অভিযোগ করেন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী আল-আমিন টেকনিক্যাল কলেজের ম্যানেজিং কমিটি থেকে জামায়াত নেতাদের অপসারনের জোর দাবি করেন।
এ ব্যাপারে গৌরনদী আল-আমিন টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন সিকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত আল-আমিন ট্রাস্টের উদ্যোগে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একারণে জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়েই কলেজ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি নিজে বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নন বলেও উল্লেখ করেন। কলেজে জামায়াতের কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়না দাবি করে কলেজ অধ্যক্ষ মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, আমি বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নেই।