যুগবার্তা ডেস্কঃ এবার জার্মানিও বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল। গত রবিবার এ-সংক্রান্ত একটি ই-মেইল পায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সিভিল এভিয়েশন। ইউরোপের প্রভাবশালী দুটি দেশ ও অস্ট্রেলিয়া এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের রপ্তানি খাত বিশেষ করে গার্মেন্ট খাত। বাংলাদেশ থেকে বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট পণ্য জার্মানিতে রপ্তানি করা হয়। ঢাকা থেকে জার্মানির এয়ারলাইনস লুফথানসা এককভাবে এই কার্গো পরিবহন করে বলে জানা গেছে। প্রতি সপ্তাহে বিমানের কার্গো হাউস থেকে ৬০ টন গার্মেন্ট পণ্য নেয় লুফথানসা।
এদিকে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপে আরো একটি নতুন দেশ যুক্ত হওয়ায় যুক্তরাজ্যের কম্পানি রেডলাইনকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা তদারকির কাজ দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেডলাইন গত তিন মাসে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে যে দাবি করছে, জার্মানির নিষেধাজ্ঞা তো এরই বিপরীত চিত্র প্রমাণ করে।
বিমান পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, একটি ই-মেইলের মাধ্যমে জানতে পারি জার্মানি ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ই-মেইলে তারা কার্গো ভবনের ইমপ্লুসিভ ডিটেকশন টেস্ট (ইডিটি) নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে এ কাজটা করে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। ইটিডি দেখভাল করার দায়িত্ব তাদের। তার পরও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু বিমান নয়, দেশেরও ক্ষতি। আমরা চেষ্টা করছি, এ সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করতে।’
সিভিল এভিয়েশন ও বিমান সূত্র জানায়, গত রবিবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউসে মজুদ বিপুল পরিমাণ গার্মেন্ট পণ্য লুফথানসা এয়ারওয়েজের কার্গোতে তোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। ঠিক ওই মুহূর্তে জানানো হয়, জার্মানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এখন ঢাকা থেকে জার্মানিতে সরাসরি কোনো কার্গো পণ্য পাঠাতে হলে তৃতীয় কোনো দেশে তা আবারও পরীক্ষা করতে হবে।
জানা যায়, গত ৯ মার্চ ঢাকা থেকে বিমানের সরাসরি লন্ডনের কার্গো ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এখন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। এরও আগে অস্ট্রেলিয়া ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো জার্মানিও অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা, কার্গো গ্রাউন্ডে যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবকে দায়ী করে বলেছে এত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। লন্ডনের কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করায় বিমানকে বড় ধরনের মাসুল গুনতে হচ্ছে। সপ্তাহে ঢাকা থেকে চারটি ফ্লাইটে যে পরিমাণ কার্গো বহন করা হতো, তাতে মাসিক কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে ওই আয় থেকে বিমান বঞ্চিত হচ্ছে। বিমান এ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করে আসছে সিভিল এভিয়েশনের উদাসীনতা ও গাফিলতিকে। বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, কার্গো হাউসের নিরাপত্তা, যন্ত্রপাতি সরঞ্জামাদিসহ অন্য অবকাঠামোগত স্থাপনার তত্ত্বাবধানের একক কর্তৃপক্ষ হচ্ছে সিভিল এভিয়েশন। সিভিল এভিয়েশন যদি ব্রিটিশ অডিট টিমের পর্যবেক্ষণগুলো মেনে সময়মতো সব পদক্ষেপ নিত তাহলে এ বিপর্যয় এড়ানো যেত। তবে সিভিল এভিয়েশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এবার জার্মানি যা করেছে তাতে বিমানকেই দায়ী করা হয়েছে। চিঠিও দেওয়া হয়েছে বিমানকেই।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল এলাইট প্রোডাক্ট এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে বছরে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি সবজি রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। এর বেশির ভাগই যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এ বাণিজ্যে আমরা ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছি।’কালেরকন্ঠ