অশনীসংকেত!

বাপ্পাদিত্য বসুঃ
অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে আবারও দুর্যোগের ঘনঘটা। দীর্ঘ লড়াই করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক অপশক্তিকে পরাস্ত করা হয়েছিল, রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে অপসারণ করা সম্ভব হয়েছিল, আজ তাদেরই প্রেতাত্মা কোন অদৃশ্য ভূত হয়ে আবারও বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসার পাঁয়তারা করছে! আর ভূতকে ভয় পেয়ে নিজের ভবিষ্যৎ যেন অসহায়ভাবে ভূতেরই হাতে সমর্পনের দিকেই এগোচ্ছে আন্দোলনের অর্জন এই অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকার। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী অপশক্তি আর তার দেশি-বিদেশি দোসরদের হাজারো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মতো চরম সৎসাহসের পরিচয় দিয়েছিল এই সরকার। কিন্তু সেই মৌলবাদীদের আসল শক্তিও তো নয়, কিছু ছানাপোনার চিৎকার-হুংকারে ধার্মিক-অধার্মিক-নাস্তিক-আস্তিক ইস্যুতে খোদ সরকারপ্রধানের হতাশাজনক আত্মসমর্পণ জাতির সামনে অশনীসংকেতই বটে। আর তার সাথে আন্দোলনের মধ্যদিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া চার দলীয় জোট সরকারের অগণতান্ত্রিক কিছু আচরণের ভূত যেন এই সরকারের ঘাড়ে চেপে বসেছে। তাতে তৃণমূলের গণতন্ত্রের প্রথম সোপান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ক্রমেই ‘নির্বাচন নির্বাচন খেলা’য় পরিণত হচ্ছে। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে বহুলাংশে, কিন্তু উন্নয়নের পথে সাম্রাজ্যবাদী অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর কতিপয় দালাল সে পথকে রুদ্ধ করে দিতে চাইছে। যে সরকার সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক চক্রান্তকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের মতো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারে, সেই সরকারের ভিতরকার সাম্রাজ্যবাদী দালালদের বৃত্তে সেই সরকারই বন্দী হয়ে থাকবে- তাও উন্নয়নের পথে চরম বাধাই বটে। বড় মাপের দুর্নীতি আর সুশাসনের অভাব সরকারের শীর্ষ মহল থেকে শুরু করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ছে। উন্নয়নের সাথে সুশাসন এক তালে চলতে না পারলে উন্নয়নের গাড়ির চাকা পাংচার হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। এই সরকারের কাছে জনগণ দৃঢ়তা আশা করে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে যে দৃঢ়তা সরকার প্রদর্শন করেছে, সেই মাপের দৃঢ়তা। এর ব্যত্যয় সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে। দেখা গেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। এর সাথে বিশ্ব রাজনীতির হাওয়া যেভাবে বদলাচ্ছে, তাও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে আগামী বছরের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতির সম্ভাব্য পালাবদলের ধাক্কা বাংলাদেশকেও সামাল দিতে হতে পারে।
সাতচল্লিশে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত আর পাকিস্তান নামের দুটি দেশের জন্ম হয়। কিন্তু পাকিস্তান জন্মের পর পরই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ অনুধাবন করে- এ পাকিস্তান আমার নয়। ধর্মের ভিত্তিতে রচিত জাতীয়তাবাদ আমার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধারণ করে না। জন্মের পরপরই তাই নানা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগ্রামে মানুষ প্রমাণ করে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সার্বজনীন বাঙালি চেতনাবোধ। ভাষা আন্দোলনে তার উন্মেষ আর একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার সফল পরিণতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। ধর্মের ভিত্তিতে নয়- ধর্মনিরপেক্ষতা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনাবোধের ভিত্তিতে। অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদী সামরিকতন্ত্রকে পরাস্ত করে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে। বৈষম্যের রাষ্ট্রকাঠামোকে পরাজিত করে সাম্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আর পটপরিবর্তনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশবিরোধী পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমার পর লড়াই সংগ্রামের নতুন ইতিহাস গড়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির নয়া জোট ১৪ দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়।
প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া এগোয়। কিছু বিচ্যুতি সে পথে ঘটলেও তারুণ্যের সংগ্রামের নয়া উন্মেষের মুখে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডসহ বিচারের সাজা কার্যকর করেই এগোচ্ছে বর্তমান সরকার। সে পথে ধারালো কাঁটা হয়ে আবির্ভূত হয় পৃথিবীর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনকি জাতিসংঘ। বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার অসম্ভব রাজনৈতিক দৃঢ়তা সেসব কাঁটাকে উপড়ে ফেলে। এমন একটা সময় ছিল যে যুদ্ধাপরাধীরাই বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজের প্রধান নিয়ন্তা, প্রধান সামাজিক শক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের বিচার তো দূরের কথা, তাদের কারাবন্দী করা যেতে পারে- এমন ধারণাই ছিল বাড়াবাড়ি। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়েছে এই বাংলাদেশে।
ওই অপশক্তির প্রধান মূল কেটে ফেলা গেলেও তার শাখা-প্রশাখারই আজ নতুন করে শক্তি সঞ্চার করছে। সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ বাংলাদেশকে নতুন করে গ্রাস করতে উদ্যত। তাদের হুংকার আজ চাপাতির জোরে পরিণত। একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মুক্তচিন্তার মানুষদের খুন করছে ওরা। টার্গেট করে, তালিকা প্রকাশ করে এবং প্রকাশ্য দিবালোকেই। যেন তাদের থামানোর কেউ নেই। জঙ্গিবাদী অন্যান্য কার্যক্রম অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও এভাবে লক্ষ্য ঠিক করে ঘোষণা দিয়ে হত্যাকাণ্ডের মিশন থামাতে পারছে না সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পারছে না, নাকি চাইছে না- সে প্রশ্নও এখন উঠছে। কারণ সরকারের ভিতরেই ওই মৌলবাদীদের ভূত ভর করে আছে। শোনা যায়, তারাই নাকি আসল সরকারের রূপ ধারণ করছে দিনে দিনে। সে কারণেই আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে আজ আওয়ামী ওলামা লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে, সচিবালয় সংলগ্ন রাস্তায় প্রকাশ্য মিছিল করে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে। আর হুংকার ছাড়ে- ‘পয়লা বৈশাখের বেলেল্লাপনা বন্ধ করো, মুখোশ মিছিল নিষিদ্ধ করো।’ তাদের হুংকারেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা বর্ষবরণের চিরায়ত অনুষ্ঠানের লাগাম টেনে ধরে বিকাল পাঁচটার মধ্যে শেষ করে দেন। চিরায়ত সংস্কৃতির অংশ মুখোশ নিষিদ্ধ করে দেন। জামাত-শিবির তথা সাম্প্রদায়িক অপরাজনৈতিক শক্তির মতো কিংবা তাদের এ সময়কালের বৃহত্তর ছাতা হেফাজতে ইসলামের মতো করে একই সুরে কথা বলে আওয়ামী ওলামা লীগ। তাদের গর্জন শোনা যায়- ‘হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বন্ধ করো, পাঠ্য পুস্তকে হিন্দু লেখকদের রচনা নিষিদ্ধ করো, অমুসলিম প্রধান বিচারপতি বাতিল করো, সরকারি প্রশাসনের শীর্ষপদ থেকে অমুসলিমদের অপসারণ করো।’ তাদের দাবি মতোই অভিন্ন পাঠ্য পুস্তকের মাদ্রাসা সংস্করণের প্রচ্ছদ পাল্টে মুসলমানিকরণ করা হয়েছে, এমনকি কবিতা-সাহিত্যের মূল লেখা পরিবর্তন করে তথাকথিত হিন্দুয়ানি শব্দ বাদ দিয়ে ‘স্বরচিত রবীন্দ্রসংগীত’ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এই হেফাজতে ইসলাম ও ওলামা লীগ দাবি করছে- মুক্তচিন্তার নামে যারা লেখালেখি করেন, তারা সব নাস্তিক এবং ইসলামবিরোধী। তাদের ‘কতল’ করতে হবে।
এসব অপশক্তিকে দমন করাই কাম্য ছিল। অন্তত এই সরকারের আমলে এরা এভাবে প্রকাশ্য বেড়ে উঠবে- সেটা আশা করে না কেউই। তার উল্টোটাই দেখা গেলো বরং। ওলামা লীগের এহেন আস্ফালনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বললেন- ‘ওলামা লীগ খায় না মাথায় দেয়? দায়িত্ব নিয়ে বলছি এরা আওয়ামী লীগের কেউ না।’ আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বললেন- ‘ওলামা লীগ ভূঁইফোড়। প্রশাসনকে বলছি- এদের দমন করুন।’ বাংলাদেশ আশান্বিত হয়েছিল- সরকার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু ওলামা লীগ পাল্টা বলল- ‘হানিফ ও শাকিলের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানাব।’ নালিশ আর জানানোর দরকার হলো না। পয়লা বৈশাখের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে খোদ প্রধানমন্ত্রীই বললেন- ‘মুক্তচিন্তার নামে ঘৃণ্য কাজ হয়। ধর্মবিরোধী কোনো লেখার কারণে সমাজে কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় সরকার নেবে কেন?’ তিনি পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে লাগাম পরানোর পক্ষেও নিজের তথা সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করলেন। প্রকারান্তরে তিনি হেফাজতে ইসলাম, ওলামা লীগ তথা মৌলবাদীদের অবস্থানের সাথেই নিজের তথা সরকারের সম্পূরক ও সমান্তরাল অবস্থান ব্যক্ত করলেন। আসলেই এ বড় অশনীসংকেত। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যদি এ ধরনের কথা বলা হয়, তাহলে আশাবাদের আর কোনো জায়গা থাকে না। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে মুক্তচিন্তার লেখক-কর্মীদের হত্যা করা জঙ্গিবাদীদের জন্য জায়েজ হয়ে পড়ে। এ কারণেই বোধ হয় ইতোপূর্বে সংঘটিত লেখক, প্রকাশক, ব্লগার কিংবা রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যাকাণ্ডগুলোর কোনো বিচার বা সেগুলোর কোনো কূলকিনারা হয় নি। বরং নতুন করে অধ্যাপক রেজাউল, জুলহাস মান্নান ও তনয় হত্যার ঘটনা ঘটে গেলো। মানে এভাবেই চলতে থাকবে। সরকারের এহেন অবস্থানের কারণেই বোধহয় নাজিমউদ্দিন সামাদ খুনের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন- ‘সে ব্লগে বা ফেসবুকে কি লিখেছিল তা খতিয়ে দেখা হবে।’ জুলহাস মান্নান খুনের পর বলেন- ‘সে সমকামী ছিল। বাংলাদেশের সমাজ সমকামিতা গ্রহণ করে না।’ অর্থাৎ খুনের জন্য জঙ্গিবাদী খুনীরা নয়, খুন হওয়া ব্যক্তির লেখা বা কর্মকাণ্ডই দায়ী। এ কারণেই বোধ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী খুনের পর পুলিশ বলছে- ‘ব্লগার খুনের সাথে এ হত্যাকাণ্ডের মিল আছে।’ অর্থাৎ বার্তা পরিষ্কার- ব্লগার হত্যার মতো এ ঘটনারও কোনো বিচার হবে না।
মনে রাখা দরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। গুলি করে, বোমা বা গ্রেনেড মেরে। কারা সেই চেষ্টা করেছিল? পরিষ্কার- এই মৌলবাদী জঙ্গিরাই। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীন বাংলাদেশকেই হত্যা করেছিল কারা? পরিষ্কার- ওই পাকিস্তানপন্থীরাই। আজ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলার আসামীদের ধরা ও সত্য উদ্ঘাটনের প্রক্রিয়া চলছে। কারা তাতে আসামী? উত্তর- শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান গং। ওরাই তো শাহবাগে তারণ্যের উত্থান দমাতে নাস্তিক-আস্তিক বিতর্ক তুলে ঘোলা জলে মাছ শিকারের উস্কানি দিয়েছিল। এরাই তো বক্তব্য-বিবৃতি বা লেখায় টার্গেট কিলিং-এর পথ দেখিয়ে দিয়েছিল। ওরাই হেফাজতে ইসলাম সৃষ্টি করেছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর খুনী বা শেখ হাসিনার হত্যাচেষ্টাকারী বা জয়ের হত্যাচেষ্টাকারীদের সাথে লেখক-শিক্ষক-প্রকাশক-ব্লগার-রাজনৈতিক কর্মী হত্যাকারীদের কোনো তফাৎ তো নেই। তাই খুনের জন্য লেখাকে দায়ী করে মৌলবাদ তোষণের পথে হেঁটে আরো বড় বিপদকেই তো সামনে ডেকে আনছে সরকার। এটাই তো বড় অশনীসংকেত। আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কে কাবু হয়ে তাড়াতাড়ি ধর্মীয় আচ্ছাদন গায়ে জড়িয়ে তো গা বাঁচবে না। যে ভোটব্যাংকের চিন্তায় প্রধানমন্ত্রীর ঘুম হচ্ছে না, সেই মোল্লাতন্ত্রীদের ভোট কখনও নৌকার বাক্সে পড়বে না। বরং ভোট দেওয়ার অধিকার অবাধ করা হলে ওই ভোট দলে দলে সব দাঁড়িপাল্লা কিংবা তার অনুপস্থিতিতে ধানের শীষের বাক্সই ভর্তি করবে। এটাই বাস্তবতা।
নাস্তিক-আস্তিক বিতর্ক বাংলাদেশে তো নতুন নয়। ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের নাস্তিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একই প্রবণতা ছিল। ফলে আজকের চলমান যুদ্ধেও মৌলবাদী জঙ্গিবাদীরা যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যোদ্ধাদের নাস্তিক আখ্যা দেবে- এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে? কিন্তু যে দৃঢ়তা দিয়ে এই অপশক্তিকে দমন করা দরকার ছিল, তার উপস্থিতি কোথায়? নেই। আজ প্রধানমন্ত্রী খুনের জন্য অবিশ্বাসীদের লেখাকে দায়ী করছেন। কিন্তু অধ্যাপক রেজাউল তো বিশ্বাসী ছিলেন। অপরাধ- সংস্কৃতি চর্চা, সাহিত্য চর্চা করতেন। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে প্রগতিবাদের চর্চা যারাই করবেন, তাদের উপরই জঙ্গিদের চাপাতির কোপ পড়বে। আজ এদের যতই উস্কানি দেওয়া হবে, এরা ততোই শক্তিশালী হবে। শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর উপর ১৯ বার পরিচালিত ব্যর্থ হামলা ২০তম বার সফল যে হবে না, তা কে বলতে পারে! সেই দিনের অপেক্ষায় হাত গুটিয়ে বসে থেকে কোনো লাভ নেই। চাই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর যুদ্ধ।
কিন্তু রাজনৈতিক যুদ্ধের কোনো উপস্থিতি নেই। যুদ্ধ যেটুকু চলছে তা কেবলই প্রশাসনিক, কেবলই পুলিশী। পুলিশ দিয়েই কেবল অপশক্তিকে দমন করা চলছে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক যুথবদ্ধ লড়াই দরকার ছিল, তা নেই। মাঠে রাজনীতি নেই। শুধুই পুলিশ-নির্ভরতা। পুলিশের উপর এই অতি নির্ভরশীলতা ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশকে দানবীয় শক্তি দিচ্ছে। পুলিশের উপর যখন সরকার ও রাজনৈতিক শক্তির এতো নির্ভরশীলতা থাকে, তখন পুলিশ অসততার দিকে ঝোঁকে বেশি। কারণ তারা নিজেদেরকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মনে করে। আজকের বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই এই ধরনের অশনীসংকেত দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বটে। একেও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
পুলিশের এহেন ‘সব পেয়েছি’র স্বাধীনতা’ দেশের মানুষ ও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির জন্য গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ তৈরি করে। যদিও মূল বিরোধী রাজনৈতিক দল জনগণের প্রতি ক্রমাগত অপরাধ করে নিজেরাই নিজেদের গণতান্ত্রিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে। যুদ্ধাপরাধী মিত্রদের বাঁচাতে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের নাম দিয়ে আবার কখনও বা অবরোধের মতো গণতান্ত্রিক কর্মসূচির লেবাসে তারা একের পর এক মানুষ মেরেছে আগুনে পুড়িয়ে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির প্রধান আশ্রয়স্থল হয়েছে বিএনপি। ফলে ওই অপশক্তির জন্য গণতন্ত্রের পথ খোলা রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এই অপশক্তিকে দমন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির রাজপথ দখলে রাখা উচিৎ ছিল। কিন্তু রাজনীতি দিয়ে রাজনীতির মোকাবিলা না করে সরকার এবং সরকার দলীয় রাজনৈতিক জোট পুলিশ ও প্রশাসননির্ভর দমন নীতির পথেই হেঁটেছে। ফলে রাজনীতিশূন্য মাঠে পুলিশের শক্তির দাপট বেড়েছে। ফলত যেটা ঘটেছে, সেটা হচ্ছে মাঠে আর গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য কোনো জায়গা নেই। বিএনপি নিজেদের দেশবিরোধী অপশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যদিয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা পুরোপুরিই হারিয়েছে। আর অন্যরা রাজনীতি করার সুযোগটি হারিয়েছে হেলায়। ফলে দেশে এখন ‘আওয়ামী লীগই সব, বাকি সব মিথ্যা’। আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে তৃণমূল- সবার ভিতর এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে মাঠে যেহেতু আর কোনো বিরোধী দল নেই, তাই আমরা যা করব, তাই সই। আর অবশিষ্ট যেটুকু আছে তাকে পুলিশ ও প্রশাসন দিয়েই দমন করে রাখা যাবে। আর তাদের সহায়তা করতে তৈরি হয়েছে বিশাল ও বিস্তৃত মাস্তানতন্ত্র। এই মাস্তানতন্ত্র আজ সবকিছু দখলে রাখতে চায়। দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই মাস্তানতন্ত্রের বড় প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যেভাবেই হোক মেরে কেটে সব আসন দখল করাই চাই। পুলিশ ও প্রশাসন যথারীতি মাস্তানতন্ত্রেরই লেজুড়। প্রতিরোধের কোনো শক্তি নেই। প্রতিশোধের শক্তি না থাকাটাই দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যতের জন্য অশনীসংকেত। সেখানে অগণতান্ত্রিক ভূতের আছর।
গণতন্ত্রহীনতার সাথে সুশাসনের অভাব, বৃহৎ আকারের দুর্নীতি আর লুটপাটতন্ত্রও কায়েম হচ্ছে। শেয়ারবাজার লুটপাটের কোনো কূলকিনারা কয়েক বছরেও হলো না। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংকের লুটপাট রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকিং খাতকেই ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করাচ্ছে। এসবের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তহবিলের ৮ শতাধিক কোটি টাকা গায়েব। এসব লুটপাট যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। জনস্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে পচা নষ্ট গম আমদানির মতো জনবিরোধী কাজ করে খাদ্যমন্ত্রী টিকে যাচ্ছেন। ব্যাংকিং খাত ধ্বংস করেও অর্থমন্ত্রীর জন্য কোনো জবাবদিহিতার প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রশাসনের কর্মকর্তা পিটিয়ে কিংবা রাস্তায় পুলিশ পিটিয়েও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আছেন বহাল তবিয়তেই। সর্বোচ্চ আদালতে সাজা ভোগ করেও খাদ্যমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আছেন স্বদায়িত্বেই। ত্রাণমন্ত্রী দুর্নীতির মামলায় আসামী হয়েছেন, নিম্ন আদালতে তার ১৩ বছরের সাজা ঘোষিত হয়েছে, হাইকোর্ট সে সাজা খারিজ করলেও সর্বোচ্চ আদালত সাজা বহাল রেখে হাইকোর্টে পুনঃবিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তবুও তিনি এখনও মন্ত্রীই। নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই-ই নেই। দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বাড়ানোর সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রেই ঘুষের হারও যেন বেড়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় এতো মারাত্মক ও প্রকট রূপ ধারণ করেছে যে মায়ের হাতে শিশু খুনের মতো ঘটনাও যেন আজ গা সওয়া। পরিত্রাণের যেন কোনো উপায়ই নেই।
দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। তবে তা যেন একটি নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে। উন্নয়নের পথে, বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার পথে যারা বরাবরই প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়িয়েছিল, তারাই শুধু আজ উন্নয়নের সহযাত্রী। তাহলে তো উন্নয়ন একটা সময় গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা তাদেরই বশংবদ সংস্থা ও রাষ্ট্রগুলোর ছকে, ঋণে, দানে উন্নয়ন বৃত্তবাঁধা। এ যে বাংলাদেশের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাওয়া দেশকে ভয়ংকর বিপত্তির মুখে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে। কারণ যখনই ওইসব সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের রাজনৈতিক এজেন্ডা এখানে বাস্তবায়নের পথে কাঁটা দেখা দেবে, তখনই ওইসব উন্নয়ন প্রকল্পও আটকে যাবে। পদ্মাসেতুতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে আমরা তো সে রকমই দেখেছি। শেষ পর্যন্ত পদ্মা সেতু হচ্ছে এবং তা বাংলাদেশের নিজের টাকায়। এই সেতু নির্মাণের পথে দুটি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করছে চীন দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান। চীন আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযাত্রী হতে পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশি আগ্রহী। বিশ্ব রাজনীতির নয়া মেরুকরণেও সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাল্টা কেন্দ্র গড়ে তুলতে চীন-রাশিয়া বাংলাদেশের নতুন কৌশলগত মিত্র হতে পারে। কিন্তু নতুন এই কেন্দ্রকে সহযাত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে বাংলাদেশ সরকারের কোথায় যেন মস্ত বাধা। আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এর মতো শোষক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে জনগণের বিশ্বায়নের পাল্টা কেন্দ্র হতে পারে ব্রিকস ব্যাংক কিংবা চীনকেন্দ্রিক নয়া অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ এসব কেন্দ্রে যুক্ত আছে বটে, কিন্তু তার বেশি আগ্রহ যেন মার্কিন অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কিংবা ওআইসি অথবা ওদের বংশবদ কেন্দ্রগুলোর দিকে। কিন্তু এসব শক্তি যে বাংলাদেশের বন্ধু ছিল না এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে না- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের ইতিহাসের পরেও তার আর কী প্রমাণ দরকার আছে? মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সাড়ে চার দশকে পাকিস্তানকে অনেক পিছনে ফেলে যে বাংলাদেশ উন্নয়নের সব সূচকে অনেক এগিয়েছে, শুধুমাত্র সরকারের ভুলনীতির কারণে এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নয়া বৈশ্বিক সংগ্রামে সম্ভাব্য নতুন মিত্রের প্রতি শিথিল মনোভাব বাংলাদেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহায়তাকে ঠেলে দিতে পারে সেই পাকিস্তানের দিকে। ফলে ওরা আবার এগোবে, পিছাবো আমরা। কিন্তু কারা সরকারকে এই ভুল পথে পরিচালিত করছে? সরকারের ভিতর থাকা আরেক সরকার। তারা সাম্রাজ্যবাদী অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের দালাল। ওইসব প্রতিষ্ঠানে কেরানীগিরি করে এসে আজ বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী। অর্থ পরিকল্পনার নীতি নির্ধারক। পদ্মাসেতুতে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংকের লেজ ধরে ঝুলে ছিল তারাই। না হলে হয়তো আরো কম সময়ে নিজস্ব অর্থায়নের নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ততোধিক কম সময়ে স্বপ্নের সেতুর বাস্তব রূপ দেখা যেতো। এইসব দালাল চক্রই বাংলাদেশের উন্নয়নের পথের অশনীসংকেত।
আর বাংলাদেশ কেবল নয়, তাবৎ দুনিয়ার সব মানুষের জন্যই চিরায়ত অশনীসংকেত তো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী। দেশটিতে ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকান যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, নীতিগত খুব একটা পরিবর্তন তাদের ঘটে না। যুদ্ধবাজি আর নয়া উপনিবেশবাদী ক্ষমতাবাজিই তাদের স্বাভাবিক চরিত্র। তবে তার মাঝেও ওদের ক্ষমতার কেন্দ্রে অধিষ্ঠিত ব্যক্তির উপর কিছু ভাল-মন্দ নির্ভর তো করে বটেই। আসছে বছরের শুরুতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বরাবরের মতোই ডেমোক্রেট আর রিপাবলিকানরাই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। বিদ্যমান বাস্তবতা হচ্ছে ডেমোক্রেটদের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন হিলারী ক্লিনটন আর রিপাবলিকানদের পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেই হোক প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশের জন্য বিপদের সম্ভাবনা আরো বেশি ধেয়ে আসছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত যা মনোভাব তা চরম আগ্রাসীই বটে। মার্কিন মুলুক যে এতোদিন একটি অভিবাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল, তাকে পারলে খণ্ডন করেন ট্রাম্প। অথচ জাতিগতভাবে নিজেও তিনি আমেরিকার আদিবাসী নন। বরং অভিবাসীই বটে। এর বাইরে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের জন্য ঢালাওভাবে ইসলামকে দায়ী করে কার্যত তিনি ইসলামবিরোধী যুদ্ধের আগাম ডাক দিয়ে বসে আছেন। এরই মধ্যে তিনি নিজের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেছেন। সেখানে তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ঘোষণাই দিয়েছেন। এমন কট্টর শাসক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে দেশটি আরো বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠবে। সে বিপদের আগুন থেকে বাংলাদেশ বাঁচবে কিনা কে জানে? অন্যদিকে হিলারী ক্লিনটন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ভিতরগত ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত তাদেরই আন্তরিক দোসর বলেই তার মূল পরিচিতি। ফলে হিলারী ক্ষমতায় আসলে তার পরিণতিও বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছু হবে না।
তবে আশাবাদের কথা হলো বাংলাদেশ লড়াই করতে জানে। কারণ হিলারী ক্লিনটন বর্তমানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতে কিংবা বিএনপি-জামাতের পক্ষে তার আমলে মার্কিন মুলুকের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা তো কম ছিল না। পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধের পিছনেও মার্কিনীদের তৎপরতা সবার জানা। কারণ বিশ্বব্যাংক যে মার্কিনীদের বশংবদ তা কে না জানে। বাংলাদেশ সাহসের সাথেই এসব চক্রান্তকে প্রতিহত করেছে। লক্ষ্যের দিকে এগিয়েছে। আগামী দিনের সম্ভাব্য অশনীসংকেতও মোকাবিলা করা অসম্ভব নয়। তবে তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক শত্রু-মিত্র চিহ্নিত করতে হবে সর্বাগ্রে। মার্কিন-সৌদি জোটের আশ্রয় যে বাংলাদেশের জন্য শুভ কোনো ফল বয়ে আনবে না- সেই জানা সত্যকে আত্মস্থ করা দরকার। আত্মস্থ করতে হবে সরকারপ্রধানকেই। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও ওই মার্কিন-সৌদি-পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ কঠোরভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুনের জন্য লেখা নয়, খুনীই দায়ী- এই চরম সত্যকে অস্বীকার করে সাময়িক আপোসের পথ ভয়ঙ্কর হবে। সাপকে একবার ঝাঁপি খুলে বেরোনোর সুযোগ দিলে আর কিন্তু বাক্সে ভরা যাবে না। সাপুড়েকেও ওই সাপের ছোবলেই মরতে হবে। তখন অশনীসংকেতই বাস্তব হবে। আজ লেখক-প্রকাশক-শিক্ষক-ব্লগার-রাজনৈতিক কর্মী মরছে, আপোসের দোদুল্যমানতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে পুরো বাংলাদেশই মরবে। সেইদিন বাংলাদেশের জন্য কাম্য নয়।-লেখকঃ সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী