Home রাজনীতি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

36

ডেস্ক রিপোর্ট: সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রহস্য। মঙ্গলবার রাত থেকেই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রচার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। কোনো কোনো মিডিয়া বলছে, হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে তিন মাস আগে মারা গেছেন। সেখানেই তার দাফন হয়েছে। আবার কোনো কোনো মিডিয়া বলছে, তিন মাস আগে তিনি ঢাকায় মারা গেছেন এবং ঢাকায় তার দাফন হয়েছে। তবে হারিছ চৌধুরীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর বিষয়ে গণমাধ্যমকে কিছু বলা হয়নি।

বিএনপির কোনো নেতাই হারিছ চৌধুরী মৃত না জীবিত, সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না। হঠাৎ তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। যদি তিনি মারাই যান তাহলে তিন মাস পর কেন হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর প্রচার হলো? হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটা রটে তার চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরীর একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে। মঙ্গলবার রাতে হারিছ চৌধুরী ও তার ছবি সংযুক্ত করে তিনি লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন’। এরপর ঐ স্ট্যাটাসের নিচে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরাসহ অনেকে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ ও শোক প্রকাশ করে মন্তব্য করেন। এসব মন্তব্যের পরপরই হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

আশিক চৌধুরী জানান, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়ে বাসায় ফেরেন। পরে আবার অসুস্হ হয়ে পড়েন। গত সেপ্টেম্বর মাসের দিকে তিনি যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্হায় মারা যান। এত দেরিতে মৃত্যুর খবর প্রকাশের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা জিজ্ঞাসা করেন, তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। হারিছ চৌধুরীর খোঁজখবর রাখার মতো কেউ নেই। এ জন্য বিষয়টি এত দিন জানাজানি হয়নি।

আশিক চৌধুরী জানান, যে সময় তিনি মারা যান, তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্হান করছিলাম। চাচাতো ভাই মারা যাওয়ার বিষয়টি ফোনে জানতে পারি। হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোসনা আরা চৌধুরী, ছেলে নায়েম শাফি চৌধুরী ও মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। সিলেটের কানাইঘাটের দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামে হারিছ চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি। বাড়িতে কেউ থাকেন না।

তার মৃত্যু প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল কাহের শামীম বলেন, ‘এটা তো অন্তত তিন মাস আগের কথা। উনি মারা গেছেন ঢাকায়। পারিবারিকভাবে এটা জানানো হয়নি। হারিছ চৌধুরীকে ঢাকাতেই দাফন করা হয়।’ তবে কোথায় দাফন করা হয় তা তিনি বলতে পারেননি।

এদিকে তার মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সট মেসেজ দিলেও জবাব দেননি। তবে পরিবারের সূত্রের বরাত দিয়ে হারিছ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ একজন জানান, হারিছ চৌধুরী অসুস্হ। তিনি মারা যাননি। বর্তমানে হারিছ চৌধুরী ইরানে তার ভাইয়ের বাসায় অবস্হান করছেন। তার ভাই একজন চিকিত্সক। সেখানে তিনি চিকিত্সাধীন আছেন।

২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। বর্তমানে সেই মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্হা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে যান। রাত ১২টার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মোবাইল ফোনে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু তার আগেই তিনি সটকে পড়েছিলেন। কিছুদিন সিলেটে এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকার পর ঐ বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে ভারতে চলে যান তিনি। ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি। সেখানেই তিনি ওঠেন। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন।-ইত্তেফাক