Home কৃষি সুগন্ধি ছড়াবে নতুন ধান, তাড়াবে পোকাও

সুগন্ধি ছড়াবে নতুন ধান, তাড়াবে পোকাও

41

ডেস্ক রিপোর্ট : একের পর এক ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। তাদের এই অর্জনে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও এক চমকপ্রদ সাফল্য।

দেশে ধানের জিন পরিবর্তনে সফল হয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গবেষকরা। তাদের এই সফলতার মূলে রয়েছে ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ পদ্ধতির ব্যবহার। এটি মূলত ফসলের জিন পরিবর্তনের আধুনিক ও বিতর্কমুক্ত একটি প্রযুক্তি।

ব্রি’র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ‘ক্রিসপার ক্যাস-৯’ পদ্ধতিতে সুগন্ধি এবং মাজরা ও বাদামি ঘাসফড়িং (কারেন্ট পোকা) প্রতিরোধী জিন ঢুকিয়ে মিলবে ধানের নতুন জাত।

ব্রি সূত্র জানিয়েছে, ফসলের জাত উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ইনট্রুডাকশন, ক্রসিং ও সিলেকশন, হাইব্রিডাইজেশন, মিউটেশন ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। পরে জেনেটিক্যাল মডিফাইড ক্রপস (জিএমও) প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়। কিন্তু এসব প্রযুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে সারাবিশ্বে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

এদিক থেকে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তিটি আধুনিক এবং বিতর্কমুক্ত। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ২০২০ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান জার্মানির বিজ্ঞানী ইমান্যুায়েল চার্পেনিয়ার ও আমেরিকার জেনিফার দোদনা। এরপর থেকেই ফসলের জাত উন্নয়নে কৃষি বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি।

২০২০ সালের শুরুতে ব্রি’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কীটত্ত্ববিদ ড. মো. পান্না আলীর নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সম্প্রতি তারা সফলও হয়েছেন। সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশ করে তারা ধানের ২৪টি গাছ পান। তারপর থেকেই উজ্জিবিত ব্রি’র বিজ্ঞানীরা।

কীটত্ত্ববিদ ড. পান্না আলী বলেন, ‘সুগন্ধি চাল এবং মাজরা ও বাদামি ঘাসফড়িং পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। কারণ প্রচলিত জাতগুলোর চেয়ে সুগন্ধি চালের ফলন অনেক কম। এ কারণে আমাদের দেশের কৃষকরাও সুগন্ধি ধানের জাত চাষ করতে চায় না।’

তবে তিনি জানান, সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেশি। মধ্যপ্রাচ্যে এই চালের রয়েছে বিশাল বাজার। তা ছাড়া মাজরা ও কারেন্ট পোকার কারণে কৃষকরা প্রায় ১০-১৮ ভাগ ফলন হারান। এই পোকা দমনে কৃষকদের প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক কিটনাশক ব্যবহার করতে হয়। যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এসব চিন্তা থেকেই সুগন্ধি চাল এবং পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা শুরু করেন গবেষকরা।

এ অবস্থায় দেশে বহুল চাষকৃত ব্রি ধান ৮৭, ব্রি ধান ৮৯ ও ব্রি ধান ৯২ জাতের ধানে ক্রিসপার ক্যাস-৯ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য ঢুকানো হয়। সেই সঙ্গে জিন পরিবর্তন করে মাজরা পোকা ও বাদামি ঘাসফড়িং প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রবেশ করানো হয়।

ড. পান্না আলী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ২৪টি গাছ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ধানের শীষগুলো পাকতে শুরু করেছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বীজ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এ সফলতায় আমারা দারুণ আনন্দিত ও উজ্জিবীত।’

গবেষক দলটির প্রধান আরও বলেন, ‘ধানে BADH2 জিন সক্রিয় থাকলে এসিটাইল-১ পাইরোলিন (2AP) উৎপাদন ব্যাহত করে সুগন্ধি তৈরীতে বাধা দেয়। সব ধানেই সুগন্ধি বৈশিষ্ট আছে কিন্তু BADH2 জিন থাকার কারণে সুগন্ধি বৈশিষ্ট প্রকাশিত হতে পারে না।’

তিনি জানান, ক্রিসপার ক্যাস-৯ পদ্ধতিতে জিনটি নিষ্ক্রিয় করে অধিক ফলনশীল যে কোনো ধানের জাতে সুগন্ধি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা যায়। একই পদ্ধতিতে ধান গাছে সেরোটোনিন উৎপাদনে বাধা দিয়ে পোকা প্রতিরোধী ধানের জাতও উৎপন্ন করা যায়।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্রি উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন প্রকার ধানের ১০৬টি জাত উদ্ভাবন করেছে। তবে মুজিববর্ষে এসে তাদের সফলতার ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুগন্ধি ও পোকা প্রতিরোধী ধানের জাত। এটি ব্রি’র একটি যুগান্তকারী সফলতা। –আমাদের সময়.কম