Home কুটনৈতিক ও প্রবাস সিন্ডিকেটের কবলেই থাকল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

সিন্ডিকেটের কবলেই থাকল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

30

ডেস্ক রিপোর্ট: বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল হওয়া জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতেই বাংলাদেশের ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এক বিবৃতিতে দ্ব্যর্থহীনভাবে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেছেন, মালয়েশিয়ার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঢাকায় যারা প্রতিবাদ করছেন, তাদের কর্মকান্ড অনাকাঙ্ক্ষিত। তারা যেন মালয়েশিয়াকে ধমক না দেয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া ১ হাজার ৫২০টি বৈধ এজেন্সির মধ্যে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর বাছাই করা ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর ছাড়পত্র দেওয়ার কারণে সেই সিন্ডিকেটের কবলেই থাকল মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে ১০ টি এজেন্টের সিন্ডিকেটের ব্যাপক অনিয়ম ও পাঁচ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহাথির মুহাম্মদ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেন। জিটুজি প্লাস বাতিল করেন। সেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ১০ সিন্ডিকেটের ৬ টি এজেন্সি বাদ পড়লেও বাকি চারটি থেকে গেছে নতুন ২৫ টির তালিকায়। তবে এই চারটি বিতর্কিত রিক্রুট এজেন্সির মধ্যে তিনটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভিন্ন নামে। এর একটি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫৪৯) এবারও রয়েছে। ক্যাথারসিসের মালিক রুহুল আমিন স্বপন জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব।

মালয়েশিয়ার মিডিয়া ‘মালয় মেইল’ জানায়, গত ১২ জুন ক্লাং শহরের এমপি চার্লস সান্টিয়াগো জানান, আমিন নামের এক ব্যক্তির হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাই করেছে। মূলত বেস্টিনেটের প্রতিষ্ঠাতা দাতুক সেরি মোহাম্মদ আমিন আবদুল নুরের কথা উল্লেখ করেন চার্লস। যে কোম্পানিটি মালয় সরকারকে কেন্দ্রীয়ভাবে বিদেশি কর্মী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে সহয়তা প্রদান করে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই আমিনের বিরুদ্ধে একটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পৌনে তিন লাখ কর্মী নিয়োগ করে দেশটি। তারা একেকজন শ্রমিকের নিকট থেকে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। আগের সিন্ডিকেটে থাকলেও এবার বাদ পড়া রাব্বি ইন্টান্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ বশির বলেছেন, আগেরবার কর্মী পাঠানোর নামে অনৈতিক ব্যবসা হয়েছে। জিটুজি প্লাসে কর্মী প্রতি সরকার নির্ধারিত ব্যয় প্রথমে ছিল ৩৭ হাজার টাকা। পরে তা হয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু তিন থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। নামে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট হলেও ব্যবসা ও মুনাফা করেছে তিন চারটি প্রতিষ্ঠান। বাকিরা কলঙ্কের ভাগীদার হয়েছে। তিনি বলেন, আগের মতো এবারও নিয়োগ প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ ও অনৈতিক। অনিয়ম হয়েছিল বলেই ২০১৮ সালে শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছিল। অনৈতিক পদ্ধতির পুনরাবৃত্তিতে আবার একই পরিণতি হতে পারে।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানান, বর্তমানে যারা মালয়েশিয়া যাবেন কর্মী প্রতি খরচ বা অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার কম হবে। অথচ মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেছেন, শূন্য অভিবাসন ব্যয়ের কথা। এজেন্সি নির্ধারিত ব্যয়ের বেশি টাকা নিলে এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইমরান আহমদ।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু:এদিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে গমনেচ্ছুদের বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বিএমইটি জানায়, জেলা কর্মসংস্থান অফিস কিংবা অনলাইনে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। বিএমইটির আওতাধীন সব জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস (ডিইএমও) অথবা নির্ধারিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) সরাসরি উপস্থিত হয়েও নিবন্ধন করা যাবে। প্রতিটি সফল নিবন্ধনের জন্য ২০০ টাকা সরকারি ফি (অফেরতযোগ্য) পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য নিকটস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস (ডিইএমও) বা টিটিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।-ইত্তেফাক