Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি সরকারি দপ্তরে টাকা ছাড়া কাজ হয় না

সরকারি দপ্তরে টাকা ছাড়া কাজ হয় না

24

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কাজের জন্য গেলে দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতে হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, টাকা খরচ না করলে কাজ ঝুলিয়ে রাখা হয়। তাই ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের প্রবণতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও জার্মান সাহায্য সংস্থা জিআইজেড আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেন কয়েক ব্যবসায়ী।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা অনেক বিরূপ পরিস্থিতিতে ব্যবসা করছেন। ব্যবসা পরিচালনার পদে পদে দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বন্ড কমিশনারেট দপ্তরে একটা কাজের জন্য গিয়েছিলাম। সেখানকার শীর্ষ এক কর্মকর্তা আমার বন্ধু। তারপরও কাজের জন্য ওই দপ্তরের অন্য কর্মকর্তারা আমার কাছ থেকে টাকা চাইলেন। তাঁরা আমাকে বললেন, “আপনার বন্ধুর অংশের টাকা আপনি না দিতে পারেন, কিন্তু আমাদের টাকা দিতে হবে।”’ শুধু ওই দপ্তর নয়, ব্যবসায়ীরা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে এ রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।

সরকারি দপ্তরে কাজ করতে গিয়ে একই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘একটি প্রত্যয়নপত্রের জন্য একজন ব্যবসায়ী বিসিকের একটি দপ্তরে আবেদন করেন। কিন্তু এক মাসেও সেই প্রত্যয়নপত্র দেয়নি। উল্টো ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন সেই দপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে আমি সেখানকার পরিচালককে ফোন করলে তিনি প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করে দেন। কিন্তু সেই স্বাক্ষর করা প্রত্যয়নপত্রটিও ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আনতে হয়েছে।’

আরেকটি উদাহরণ দিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এক মেগাওয়াট বা তার ওপরের জেনারেটর স্থাপন করতে হলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নিবন্ধন লাগবে। আমার একটা ইউনিটে ৫০০ কিলোওয়াটের একটা জেনারেটর বসালাম। কিন্তু সরকারি অডিটের সময় কর্মকর্তারা এসে বললেন, এটার জন্য বিইআরসির নিবন্ধন লাগবে। আমি বললাম, এটা তো এক মেগাওয়াটের নিচে। তখন আমাকে বলা হলো, এক মেগাওয়াটের নিচে জেনারেটরের জন্য যে নিবন্ধন লাগবে না, এ মর্মে একটা সত্যায়ন লাগবে। তখন আমাকে বাধ্য হয়ে এ সত্যায়ন নিতে হলো। এর মানে হলো আপনি যা-ই করেন, কর্মকর্তাদের ভাগটা যদি তাঁদের না দেন, তাহলে আপনি ব্যবসা করতে পারবেন না।’

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার জটিলতার কারণে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনায় অনেক সমস্যা হয়। বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়েন সবচেয়ে বেশি।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দপ্তরে দপ্তরে নিবন্ধন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানির শিকার হন ব্যবসায়ীরা। এটা বন্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম ও জিআইজেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাইকেল ক্লোডে প্রমুখ।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত।
প্রথমআলো