Home সাহিত্য ও বিনোদন সংস্কৃতি অঙ্গন এখনো নীরব

সংস্কৃতি অঙ্গন এখনো নীরব

40

ডেস্ক রিপোর্ট: করোনা মহামারির প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কমে আসায় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করায় মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অফিস-আদালত, হাটবাজার সব চালু হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রক্রিয়াও চলছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক অঙ্গন আগের মতোই নীরব রয়েছে।

শিল্পকলার মিলনায়তনগুলো ফাঁকা। কোনো অনুষ্ঠান বা নাটকের প্রদর্শনী হচ্ছে না। অথচ বিধিনিষেধ শিথিলের পর ২০ দিন পেরিয়ে গেছে। শিল্পকলা ছাড়াও বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ছায়ানট, পাবলিক লাইব্রেরি, বেইলি রোড কোথাওই সাংস্কৃতিক আয়োজনের কোনো আলামত নেই। হাতে গোনা দুই একটি অনলাইন অনুষ্ঠান হলেও দর্শকের উপস্থিতিতে মঞ্চে অনুষ্ঠানের আগ্রহই যেন হারিয়ে ফেলেছে সংগঠনগুলো।

এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, করোনা মহামারির এই দীর্ঘ সময়ে সংস্কৃতিকর্মীরা কষ্টে আছে। একই সঙ্গে সংগঠনগুলোও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মীদের যেমন সহযোগিতা প্রয়োজন তেমনি সংগঠনগুলোকেও প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। এই সংকটকালে সংস্কৃতি মানুষকে আনন্দ দেবে, বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগাবে। যারা এবং যে সংগঠনগুলো এই কাজগুলো করে তাদের হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। দেখা যাচ্ছে, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো অনলাইনে অনুষ্ঠান আয়োজনেই বেশি আগ্রহ।

করোনার সময়ে বিপুল টাকা খরচ করে মঞ্চে অনুষ্ঠান করার চাইতে অনলাইনে অনুষ্ঠান যেমন অর্থ সাশ্রয়ী সেই সঙ্গে শ্রোতা-দর্শকের সাড়াও পাওয়া যায় বেশি। অনলাইনে অনুষ্ঠান করলে সারা বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই দর্শকরা যুক্ত হতে পারেন। মঞ্চে সে সুযোগ কম। তবে, এ ক্ষেত্রে সমস্যায় রয়েছে নাট্য সংগঠনগুলো। কেননা, মঞ্চনাটক তো আর অনলাইনে করা যাচ্ছে না।

সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর একটি অনুষ্ঠান করতে গেলে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। লাইট, সাউন্ড, মঞ্চ সাজানো ও ব্যবস্থাপনার সব কিছুই সংগঠনগুলোকে করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে আগামী দুই মাস মিলনায়তনের ভাড়া না নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

সংগঠক শিল্পী বিশ্বজিৎ রায় জানালেন, তিনি করোনাকালীন এ পর্যন্ত অনলাইনে ১৫০টি গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এতে শ্রোতাদের আগ্রহ রয়েছে। মানুষের চলতি পথে, কাজের ফাঁকে অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। যদিও মঞ্চের আবেদন ভিন্ন তারপরেও এখন পরিস্থিতি বিচারে অনলাইনে অনুষ্ঠান সাশ্রয়ী।

সাংস্কৃতিক কর্মীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সংগঠনগুলোর আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নেই। এ ধরনের সংগঠনগুলো সদস্যদের চাঁদা আর বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। করোনার কারণে এখন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারছে না। আর নাটক মঞ্চায়ন ও অনুষ্ঠানের আয়োজনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা বর্তমানে সংগঠনগুলোর নেই। তারপরও শিল্পাঙ্গন সচল রাখার স্বার্থে ও সংস্কৃতির ধারা বহমান রাখতে তারা অনুষ্ঠান আয়োজনে ইচ্ছুক। বিনা ভাড়ায় হল শিল্পকলার মঞ্চগুলো বরাদ্দ পেতে তারা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ইতোমধ্যে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের পক্ষ থেকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বরাবর একটি চিঠিও প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘বিনা ভাড়ায় হল পাওয়ার জন্য গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আবেদন করেছে। আমরা সংগীত সংগঠন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনও এ দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। আমরা এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দিকেই তাকিয়ে আছি। আশা করি, মন্ত্রণালয় থেকে একটা ইতিবাচক সাড়া পাব।’-ইত্তেফাক