Home রাজনীতি রাশেদ খান মেনন ৭৯ বছরে পদার্পণ করলেন আজ

রাশেদ খান মেনন ৭৯ বছরে পদার্পণ করলেন আজ

39

সৈয়দ আমিরুজ্জামান:

ষাটের দশকের তুখোর ছাত্র নেতা ১৯৬৩-৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর ভিপি ও ৬৪-৬৭ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি ৭৯ বছরে পদার্পন করলেন আজ।
কমরেড মেনন ৬২ সালে নিরাপত্তা আইনে প্রথম কারাবন্দী হবার পর ৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন মেয়াদে নিরাপত্তা আইন, দেশরক্ষা আইন ও বিভিন্ন মামলায় কারাবরণ করেন। ৬৭-৬৯ সালে জেলে থাকাকালীন অবস্থায় জনাব মেনন বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ক্যান্টনমেন্টে নীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত জেলের বাইরে তাঁর যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ কায়েমের দাবি করায় ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ও তার অনুপস্থিতিতে সামরিক আদালতে জনাব মেননের ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও সম্পত্তির ষাট ভাগ বাজেয়াপ্তের দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে কার্যকর করতে তিনি সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার কাজ শুরু করেন। ২৫শে মার্চ পল্টনের শেষ জনসভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
২৫শে মার্চের কালো রাত্রে গণহত্যার পর তিনি ঢাকার অদূরে নরসিংদী শিবপুরকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের কাজ শুরু করেন।
১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করলে রাশেদ খান মেনন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। ১৫ ও ৭ দলের যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনায় ভূমিকার জন্য সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সময় তাকে আত্মগোপনে যেতে হয়েছে।
৫ দল হিসেবে সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য পুনঃস্থাপনে রাশেদ খান মেনন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং ৫ দল, ৭ দল ও ৮ দলের ঐতিহাসিক ৩ জোটের ঘোষণার ভিত্তিতে ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাহীর পতন হয়। এতেও জনাব রাশেদ খান মেনন অন্যতম ভূমিকা রাখেন।
১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট নিজ পার্টি কার্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রথমে ঢকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ও পরে লন্ডনে কিংস কলেজে দু’বার অস্ত্রোপচার হলে তিনি মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে আসেন।
জনাব রাশেদ খান মেনন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার জাতীয় সংগ্রামেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ২০০১ সালে বিএনপি, জামায়তা ৪ দলীয় জোট সরকার সরকার গঠন করে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক তান্ডব শরু করলে জনাব রাশেদ খান মেনন তার বিরুদ্ধে অন্যান্যদের নিয়ে প্রতিরোধ সংগঠিত করেন। বিএনপি জামায়াত জোটের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক নীতির বিরুদ্ধে এগারো দল ও পরে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ন্যাপ সহ ১৪ দলের আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৪ দলের ৩১ দফা নির্বাচনী সংস্কার ও ২৩ দফার নুন্যতম কর্মসূচি প্রণয়নে তিনি মূখ্য ভূমিকা রাখেন।
কমরেড রাশেদ খান মেনন ১৯৭৩ সনে ন্যাপ (ভাসানী) এর প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল থেকে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ও একটি আসনে বিজয়ী হলেও পরে পরাজিত ঘোষিত হন। পরবর্তীতে ’৭৯ সনে বরিশালে বাবুগঞ্জ ও গৌরনদী থেকে এবং ১৯৯১ সনে বাবুগঞ্জ উজিরপুর থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে ডিসেম্বরে নির্বাচনে তিনি ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ সময় তিনি সংসদে কার্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত বিশেষ কমিটিরও সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১২ সনের ১৩ সেপ্টেম্বর মহাজোট সরকারের পক্ষ থেকে জনাব রাশেদ খান মেননকে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি পার্টি সিদ্ধন্তে তা গ্রহন করেন নি। ২০১৩ সনের ১৮ নভেম্বর জনাব রাশেদ খান মেনন সর্বদলীয় সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারি পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি ঢাকা-৮ আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং মহাজোট সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। বর্তমানে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
কমরেড রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৪৩ সনের ১৮ মে পিতার কর্মস্থল ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ী বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে। পিতা স্পীকার বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান। সু প্রসিদ্ধ পারিবারিক ঐতিহ্যের অধিকারী রাশেদ খান মেনন এর ভাইদের মধ্যে মরহুম সাদেক খান, কিংবদন্তী কবি মরহুম আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ খান, প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম এনায়েতুল্লাহ খান, বোন বেগম সেলিমা রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক শহিদুল্লাহ খান বাদল। তাঁর স্ত্রী লুৎফুন্নেসা খান এমপি, মেয়ে ড. সুবর্ণা খান ও ছেলে আইনের ছাত্র আনিক রাশেদ খান।
রাশেদ খান মেনন ’৬০ দশকের সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা রাখার জন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ২০০৮ সনের ৮ অক্টোবর রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তা থেকে বাংলামটর রোড পর্যন্ত এই সড়কের নাম রেখেছে রাশেদ খান মেনন সড়ক। রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াও গবেষণার কাজ, প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা, বিশেষ করে জাতীয় দৈনিকসমূহে তার নিয়মিত কলাম লেখায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তার ঐ কলামসমূহ একত্রিত করে এ পর্যন্ত অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে রাশেদ খান মেননের আত্মজীবনী এক জীবন : স্বাধীনতার সূর্যোদয় (প্রথম পর্ব)।

কমরেড রাশেদ খান মেনন রাজনৈতিক বিভিন্ন সভা সম্মেলন সেমিনার উপলক্ষে ভারত, নেপাল, গণচীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, হলান্ড, লুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণ করেন।