Home জাতীয় রাজধানীর ৩৮৬ রুটের ২৫৮টিতেই চলছে না গণপরিবহন

রাজধানীর ৩৮৬ রুটের ২৫৮টিতেই চলছে না গণপরিবহন

40

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর গণপরিবহনে কোনোভাবেই ফেরানো যাচ্ছে না শৃঙ্খলা। কাগজে কলমে রুটের তালিকায় অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে বেশির ভাগ রুটেই চলছে না বাস। অন্যদিকে রুট পারমিট ছাড়াই চলছে দেড় হাজার বাস। বেসরকারি পরিবহনের সঙ্গে সমন্বয় করতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। একদিকে রুট পারমিটহীন বাস চলাচল, অন্যদিকে অনুমোদন নিয়েও বাস না চালানো, অন্য পরিবহনের কারণে নগরপরিবহন কোণঠাসায়। ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।

ডিটিসিএ-এর তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির অনুমোদিত রুটের সংখ্যা ৩৮৬টি। এর মধ্যে সর্বশেষ মাঠ পর্যায়ে বিআরটিএ তদন্ত করে মাত্র ১২৮টি রুটে বাস-মিনিবাস চলাচলের প্রমাণ পেয়েছে। অন্যদিকে ২৫৮টি রুটেই বর্তমানে কোনো বাস-মিনিবাস চলছে না। এসব রুটে যেমন যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে, অন্যদিকে এসব রুট বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। বর্তমানে ১২৮ টি রুটে ৭ হাজার ৯১টি বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট রুটে নিয়ম অনুযায়ী চলে ৩ হাজার ৪২৭টি। আর অন্যান্য রুটে চলছে ২০১৮টি বাস-মিনিবাস। এর মধ্যে রুট পারমিট ছাড়াই চলাচল করছে ১ হাজার ৬৪৬টি পরিবহন। ফিটনেস ছাড়াই চলছে ৯৯২টি পরিবহন। অন্যদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির তথ্যানুযায়ী রাজধানীতে মাত্র ৯৭টি রুটে বাস চলাচল করে। এর মধ্যে মহানগরীতে ৬০টি রুটে আর গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে চলে এমন রুট ৩৭টি।
পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর প্রভাবশালী কিছু লোক এসব রুটের অনুমোদন নিয়ে বিক্রি করে দেয়। কাগজে কলমে এসব রুটের অনুমোদন নিয়ে রাখে যেন এ নিয়ে ব্যবসা করা যায়। আবার এক রুটে অনুমোদন নিয়ে অন্য রুটেও বাস চলাচল করার নমুনা রয়েছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান জানান, এগুলো হচ্ছে অনেকটা গোয়ালের গরু খোয়ারে আছে, বাস্তবে নেই। তেমনি ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির অনুমোদিত রুটের তালিকায় এসব থাকলেও বাস্তবে এসব রুটে বাস চলে না। তারা সুপারিশ করলে বিআরটিএ এসব রুট বাতিল করতে পারে। অনেকে বাস পরিচালনা না করলেও এসব রুটে অনুমোদন নিয়ে রেখেছে বলে তিনি জানান।

এদিকে রাজধানীতে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আনতে ঢাকা নগর পরিবহন চালুর উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। যার আওতায় ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত (২১ নম্বর) একটি পাইলট রুট চালু করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৩ অক্টোবর আরও দুটি রুট (২২ ও ২৬) চালু হয়। কিন্তু এসব রুটে নগর পরিবহন চালু করতে গিয়েও বাসের সংকটে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। বেসরকারি বেশির ভাগ কোম্পানি নগর পরিবহনে তাদের বাস নিয়ে এগিয়ে আসেনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে বাস পরিচালনা করলে নিয়মকানুনের মধ্যে বাস পরিচালনা করতে হবে। যার কারণে বেশির ভাগ কোম্পানি এটি এড়িয়ে চলেন বলে তারা জানান।

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল—ঢাকা ও আশপাশের জেলায় বাসের রুট ৪২টিতে নামিয়ে আনা হবে। বাসগুলো সরকারনিয়ন্ত্রিত ২২টি কোম্পানির অধীনে থাকবে। অপ্রয়োজনীয় বাস-রুট বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখন শত শত রুট রয়েছে যার কোনো প্রয়োজন নাই।

এছাড়া একটি রুটে যতগুলো কোম্পানি বাস-মিনিবাস চালায় তাদের সবাইকে একসঙ্গে একটি কোম্পানিতে রূপান্তর করে একটি যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানি করা হবে। কিন্তু বেশির ভাগ বাস মালিক তাতে সাড়া দেয়নি। এত প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনটি রুটে নগর পরিবহন চালু হলেও এখন দেখা দিয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। একই রুটে নগর পরিবহন ছাড়াও বেসরকারি অনেক কোম্পানির বাস চলছে। একই সঙ্গে নগর পরিবহনের নির্ধারিত স্টপেজে অন্য বাস দাঁড়িয়ে থাকায়ও কিছু স্টপেজ অকার্যকর রয়েছে। এসব রুটে চলা বেসরকারি পরিবহন মালিকদের কয়েক বার চিঠি দিলেও কোনো সাড়া মিলছে না।

বর্তমানে নগর পরিবহন চালু হওয়া রুটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘাটারচর থেকে কদমতলী ও স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত সড়কে স্বস্তি ফিরছে। যাত্রীদের ভোগান্তিও কমেছে। ঘাটারচর থেকে স্টাফ কোয়ার্টার ও কদমতলী রুটে ১৫টি কোম্পানির যাত্রীবাহী বাস চলতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন বলেন, বর্তমানে অনেকগুলো রুটেই বাসের অনুমোদন দেওয়া আছে, কিন্তু এর বেশির ভাগ রুটেই বাস চলছে না। এসবের আদৌ দরকার আছে কি না, সেটি দেখতে হবে। এসবের মালিক কারা তা নিয়েও ভাবার সময় এসেছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য বিআরটিএ পরিচালক শহীদুল্লাহ ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারকে একাধিকবার কল ও বার্তা পাঠালোও তারা সাড়া দেননি।
ইত্তেফাক