Home জাতীয় বিমানবন্দরগুলোতে সুরক্ষিত গেট, অরক্ষিত রানওয়ে

বিমানবন্দরগুলোতে সুরক্ষিত গেট, অরক্ষিত রানওয়ে

41

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর রানওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। কোন কোন বিমান বন্দরের রানওয়ে পুরোপুরি অরক্ষিত। উড়োজাহাজ ওঠানামার সময় কিছুটা নিরাপত্তা থাকলেও অন্য সময় বন্দরগুলো হয়ে পড়ে অরক্ষিত। তখন চাইলে যে কেউ বিনা বাধায় ভেতরে ঢুকতে পারে। কক্সবাজার নতুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে পাইলটদের অভিযোগ অনেক পুরানো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাইলট জানান, বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণ ও উড্ডয়নের সময় নানা সমস্যা নিয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে আমরা অভিযোগ দিলেও তা আমলে নেয় না কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরগুলোর সীমানা প্রাচীরের ভাঙা অংশ ও সংস্কারহীন অংশ দিয়ে অবাধে লোক চলাচল ও গবাদি পশুর বিচরণ করে। ফলে প্রায়ই কোন কোন বিমান বন্দরে ফ্লাইট ওঠানামায় বিপত্তি দেখা দেয়। তিন দিন আগে কক্সবাজার বিমানবন্দর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের পাখার ধাক্কায় দুই গরুর মৃত্যুর পর নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ফের আলোচনায় উঠে এসেছে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কক্সবাজার বিমান বন্দরে ২০১৭ সালে একটি বেসরকারি উড়োজাহাজের চাকায় পিষ্ট হয়ে রানওয়েতে তিনটি কুকুরের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিমানের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সব বিমানবন্দরে পাহারা স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়ানো হয়। তারপর ধীরে ধীরে আবারো শিথিল হয়ে পড়ে নিরাপত্তা।

সিভিল এভিয়েশনের একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বিমানবন্দরগুলোর প্রবেশ গেট সর্বোচ্চ সুরক্ষা রাখা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নেই। চেকিং এর ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি থাকে না। তবে বিমান বন্দরগুলোর বিশাল রানওয়ে পুরোপুরি সুরক্ষা বেশ কঠিন। রানওয়ের সীমানা প্রাচীরের তার খুলে ছিঁড়ে অথবা ভেঙে ভেতরে যাতায়াত করে এলাকার লোকজন। কোন কোন রানওয়ের ভেতর ঘাস খাওয়াতে গরু ছেড়ে দেয় গ্রামের মানুষ জন। রানওয়ে নিরাপত্তায় আনসার থাকলেও তাদের গাফিলতি আছে। কক্সবাজারে গরু নিহতের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের মতো সৈয়দপুর,বরিশাল,যশোর,চট্টগ্রাম,রাজশাহী,সিলেট বিমান বন্দরের রানওয়ের নিরাপত্তাও শিথিল হয়ে পড়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, মূলত রানওয়েতে গরু ঢুকেছে সংস্কার কাজের জন্য অরক্ষিত হয়ে পড়া সীমানা প্রচীরের অংশ দিয়ে।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন,কয়েকটি পয়েন্টে সীমানাপ্রাচীর সংস্কারের কাজ চলছে। দ্রুত তা শেষ হলে এসব গবাদিপশু বা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঝুঁকি কেটে যাবে। বিমানবন্দরের পূর্বদিক থেকে নতুন প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর সীমানা আর অরক্ষিত থাকবে না। এখন পুরোদমে প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলছে। রানওয়ের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। তার কাছে পাইলটদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

একজন পাইলট জানান, বরিশাল বিমান বন্দরের রানওয়েও নিরাপত্তার দিক থেকে অরক্ষিত। চারপাশের সীমানাপ্রচীর থাকলেও কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। রহমতপুর থেকে বাবুগঞ্জ যাওয়ার সড়কে নিরাপত্তাপ্রাচীর অনেকটা অরক্ষিত। সৈয়দপুর বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীরও কয়েক জায়গায় অরক্ষিত।অভ্যন্তরীণ রুটে আরেকটি ব্যস্ত বিমানবন্দর যশোর। এর রানওয়েও অরক্ষিত বলে জানা গেছে। রাজশাহী ও চট্টগ্রামের প্রবেশে কড়াকড়ি থাকলেও রানওয়ে নিরাপত্তাহীন।সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের চারপাশে দেয়াল তুলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল কয়েক বছর আগে।এখন প্রাচীর বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে লোক ঢোকে।

এদিকে সিভিল এভিয়েশনের অপারেশন্স ও প্ল্যানিংয়ের দায়িত্বে থাকা সদস্য এয়ার কমোডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী বলছেন নিরাপত্তা নিয়ে সব বিমানবন্দরেই যথাযথ ব্যবস্থা আছে। তবে এর মধ্যেও কক্সবাজারের ঘটনা ঘটে যাওয়ায় তারা এখন তা নিয়ে তদন্ত করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরুর চলে আসার ঘটনা দেশের বিমানবন্দরগুলোর রানওয়েতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার যে সংকট সেটিকেই উন্মোচন করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার আগে কক্সবাজার রানওয়ের আশেপাশে চরা দুটি গরুর সঙ্গে বিমান বাংলাদেশের একটি বিমানের ডানায় ধাক্কা লাগে। এতে গরু দুটি ঘটনাস্থলেই মারা গেলেও বেঁচে যান বিমানের ৯৪ আরোহী।এ ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে চার আনসার সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিমানবন্দরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু

বিমানের ধাক্কায় গরু মারা যাওয়ার ঘটনার পর অরক্ষিত কক্সবাজার বিমানবন্দরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) নতুন প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানবন্দর সংস্কার কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুস ভুঁইয়া বলেন, বিমানবন্দরে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দর সীমানা আর অরক্ষিত থাকবে না। বিমানবন্দরের টাওয়ার কর্মকর্তা রাকেশ ঘোষ বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মেম্বার সিকিউরিটি গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফি। পরে তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেভাবে কাজ শুরু হয়েছে। -ইত্তেফাক