Home কৃষি বিনা চাষের কাশখড়; চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস

বিনা চাষের কাশখড়; চরাঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস

37

গাইবান্ধা থেকে মেহেদী হাসান জেসী: যমুনা বেষ্টিত গাইবান্ধার ফুলছড়ির চরাঞ্চলে কাশখড় (শুকনো কাশফুলের গাছ) বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মানুষ।কাশখড়ের বাণিজ্যিক ব্যবহারে আর্থিক সচ্ছলতাও ফিরে পেয়েছেন অনেকে।এসব কাশখড় যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া, উড়িয়া, কঞ্চিপাড়া ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের চরগুলোর মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে বেশি জন্মনেয় কাশফুলের গাছ।এরজন্য চাষবাসের প্রয়োজন নেই, নেই কোনো যত্ন আত্তির বালাই।শরতে নদীরধার কিংবা বিস্তীর্ণ বালুচরে অবহেলায় ফোটে এই কাশফুল।দেশের প্রায় সব এলাকাতেই কাশফুল দেখা যায়।বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলোতে কাশের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।

চরে জন্মানো কাশখড় ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন বুলবুলিরচরসহ বিভিন্নচর-দ্বীপচর থেকে শুকনো কাশফুলেরগাছ ‘কাশখড়’ কিনে তিস্তামুখ ঘাটে নিয়ে আসেন।পরে এখান থেকেই পাঠান দেশের বিভিন্ন স্থানে।ঘাটখরচ, শ্রমিকের মজুরি এবং ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত পরিবহন ব্যয়ধরে ১০ মুঠির প্রতিটি আঁটি ১০থেকে ১২টাকা দরে বিক্রি করছেন।এবছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম।দুই বিঘা চরের জমি থেকে তিনি সাত হাজার আঁটি ‘কাশখড়’ কিনেছেন।প্রতি আঁটি পাঁচ টাকা দরে কিনে ১২ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৮৫ হাজার টাকা।

তিনি জানান, কাশফুল নদীর চর এমনিতেই জন্মায়।এটি চাষ করতে হয়না।সার বা কীটনাশক কিছুই প্রয়োজন হয়না।শুধু লাগে চর থেকে কাশফুলের গাছ কেটে আনতে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ।দুই বিঘা জমিতে এবাবদ তার খরচ হয়েছে ১০হাজার টাকা।চরের কৃষকদের কাছ থেকে কাশখড় কিনে রাজশাহী, দিনাজপুর, বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, কুষ্টিয়াসহবিভিন্ন অঞ্চলে পান চাষিদের কাছে বিক্রি করেন।পাঁচ টাকায় কেনা আঁটি বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ টাকা দরে।এভাবে জেলার ২৬০টি দ্বীপচরের প্রায় সব কৃষকই বিনাচাষের কাশখড় থেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

জেলার সুন্দরগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলার পান চাষিরা জানান, কাশবনে দু’ধরনের গাছ জন্মায়।চিকন আকারের ছোট গাছগুলো খড়হিসেবে ব্যবহূত হয়।আর বড় এবং মোটা আকারের গাছ গুলোকে ঝাঁটি বলে।কাশবন থেকে পাওয়া খড় ও ঝাঁটি পানের বরজের জন্য প্রয়োজন।খড় দিয়ে পানের বরজে ছাউনি দেওয়া হয় এবং পানগাছ বাঁশের শলাকার সঙ্গে বেঁধে উপরে তুলতে হয়।সুতলি বা অন্য কিছু দিয়ে বাঁধলে বৃষ্টির পানিতে ভিজে অল্পদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়।খড় দিয়ে বাঁধলে দীর্ঘদিন ভালো থাকে, নষ্ট হয়না।একারণে বরজে খড় ব্যবহার করা হয়।অন্যদিকে ঝাঁটি বরজের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।ঘরের ছাউনি দিতেও ব্যবহূত হয় এখড়।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শস্য) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কাশফুল চাষের জন্য কোনো বীজ কিংবা চারা নেই।এটি প্রাকৃতিকভাবে বর্ষাকালে নদীর চরে গজায়।প্রতি বছর বর্ষায় জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে কাশফুলের গাছ প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়।কাশ কাটা হয় মধ্য নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাইবান্ধার উপ পরিচালক মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, কাশফুলের আবাদের চিন্তা কখনও করা হয়নি।তবে ‘উদ্ভাবনীফসল’ হিসেবে কাশফুল চাষের জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।এতে চাষিরা লাভবান হবেন।