Home রাজনীতি বিএনপি-জামাত নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রশ্ন ফয়সালা করতে চায়–ইনু

বিএনপি-জামাত নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রশ্ন ফয়সালা করতে চায়–ইনু

42

স্টাফ রিপোটার: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভা আজ ১৫ জানুয়ারি শনিবার শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে শুরু হয়েছে।

সভার সভাপতি জনাব হাসানুল হক ইনু এমপি তার প্রারম্ভিবক ভাষণে বলেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনীতির প্রধান প্রশ্ন, মূল বিরোধ নিরপেক্ষ নির্বাচন, না-কি ২০০৮ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের ধারার সূত্রপাত হয় তা রোধ করা, পাল্টে দেয়া? নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনকালীন সরকারের ধরণ, ধারণ, ক্ষমতা, এখতিয়ার, ভূমিকা ইত্যাদি কি আসল বিষয় না-কি নির্দলীয় সরকারের নামে বর্তমান সরকারকে হঠিয়ে বা পদত্যাগে বাধ্য করা বা উৎখাত করা আসল বিষয়? বিএনপি-জামাত ও তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনের আগেই ক্ষমতার প্রশ্ন ফয়সালা করতে চায়। তাদের আসল কথা কি নিরপেক্ষ নির্বাচন, না-কি সরকার উৎখাত? তিনি বলেন, দেশে ক্ষমতার জন্য বিরোধ হচ্ছে, সংঘাত হচ্ছে। এই বিরোধে একপক্ষ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা, মীমাংসিত মৌলিক বিষয় বিরোধী পাকিস্তানপন্থী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক ধারা, আরেকপক্ষে দূর্বলতা-সীমাবদ্ধতাসহই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অসাম্প্রদায়িক শক্তি। তাই শুধু নিরপেক্ষ নির্বাচন এই রাজনৈতিক বিরোধ, ক্ষমতার বিরোধের অবসান করে গণতন্ত্র, রাজনৈতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা দিতে পারছে না। বরং অতীতে আন্তর্জতিকভাবে স্বীকৃত নিরপেক্ষ নির্বাচনের পর এই মীমাংসিত মৌলিক রাজনৈতিক বিরোধের সমাধান হয়নি। বরং যুদ্ধাপরাধীদের সাথে নিয়ে নির্বাচনের পর সরকার গঠিত হয়েছে। ক্ষমতায় থেকেই রাষ্ট্রীয় মদদ দিয়ে বাংলাভাই, জেএমবির মত তালেবানি শক্তি তৈরি করেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে নিশ্চিন্থ করতে ২১ আগস্টের মত ঘটনা ঘটিয়েছে। জনাব ইনু বলেন, এই যুদ্ধ পরিস্থিতির অবসান, বিরোধের অবসান, সংঘাতের অবসান করে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক শান্তি চাইলে শুধুমাত্র নির্বাচন না, মীমাংসিত মৌলিক রাজনৈতিক প্রশ্নে ঐকমত্য প্রয়োজন। জনাব ইনু বঙ্গবন্ধু হত্যা, কর্নেল তাহের হত্যা পরবর্তীতে রাষ্ট্র, সংবিধান, রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতিতে যে পাকিস্তানি ধারা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, দেশকে আবার সেই ধারায় ঠেলে দেয়ার রাজনীতির বিরুদ্ধে দেশের সকল অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক-দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করার আহ্বান জানান। জনাব হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকার চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে না পারায় সরকার ও প্রশাসনের চারিদিকে দুর্নীতির চোরাবালি তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির সিন্ডিকেট সরকারকে ঘিরে ফেলছে। রাজনীতি ও প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় গুন্ডাতন্ত্রের উদ্ভব হয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি হলেও, জাতীয় অর্থনীতির সক্ষমতা বাড়লেও মুক্তবাজার অর্থনীতির ভ্রান্তি ও মোহ থেকে বের হতে না পারা এবং নীতি-কাঠামোগত অন্যায্যতার কারণে সমাজ ও অর্থনীতিতে ভয়ংকর বৈষম্য বেড়েই চলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোটাদাগে একদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জকারী বাংলাদেশ বিরোধী পাকিস্তানপন্থার অপরাজনীতি অন্যদিকে দুর্নীতির সিন্ডিকেট-গুন্ডাতন্ত্র-বৈষম্য বাংলাদেশের জন্য বিপদ ও আপদ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। জনাব ইনু বলেন, জাতীয় রাজনীতির এই বাস্তবতায় সাম্প্রদায়িক শক্তি-ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী তথা পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি ও তাদের রাজনৈতিক পার্টনার বিএনপি-জামাতকে মোকাবেলায় আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে ঐক্যবদ্ধ সর্বব্যাপক রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ, সঙ্গতিপূর্ণ সাংস্কৃতিক আন্দোলন অব্যাহত রাখা ও জোরদার করা, দুর্নীতির সিন্ডিকেট ও গুন্ডাতন্ত্রকে দমন-ধ্বংস করতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রচ্ছায়া থেকে দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-গুন্ডাদের বের করে দেয়া, দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-গুন্ডাসহ অপরাধী যেই হোক তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় রাজনৈতিক সংগ্রাম জোরদার করাই প্রধান রাজনৈতিক কর্তব্য।

সভায় দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর খসড়া রাজনৈতিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি। খসড়া রাজনৈতিক রিপোর্টের উপর আলোচনা করেন দলের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন রাঙ্গা, অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান মুক্তাদির, আব্দুল্লাহিল কাইয়ূম, রোকনুজ্জামান রোকন, নইমুল আহসান জুয়েল, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুল হাই মাহবুব, আবদুল আলিম স্বপন, মোঃ নুরুন্নবী, গোলাম মারুফ মনা, জাহাঙ্গীর আলম, জসিম উদ্দিন বাবুল, কুমারেশ রায় প্রমূখ।

সভায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ অংশগ্রহণ করছেন।