Home জাতীয় বাংলাদেশে সরকারবিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে: দ্য গার্ডিয়ান

বাংলাদেশে সরকারবিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে: দ্য গার্ডিয়ান

25

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনটি শুরু হয়েছে কার্টুনিস্ট কিশোরের গ্রেপ্তার ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে। কিশোরকে ২০২০ সালের মে মাসে কীভাবে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, নির্যাতন চালানো হয়; সেই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর কিশোর নেপাল হয়ে সুইডেন চলে যান, এখন সেখানেই আছেন। রিপোর্টে কারা হেফাজতে লেখক অ্যাকটিভিস্ট মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে।

গার্ডিয়ান বলছে, কিশোর ও মুশতাক যে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, একই রকম নিপীড়ন চলছে অসংখ্য অ্যাকটিভিস্ট, লেখক, শিল্পী, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী এবং আইনজীবীদের ওপর। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিরোধী দলগুলো, দেশের সব বড় শহরে বাড়ছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মী রাজপথের বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানি ও খাদ্যের মূল্য বাড়ছে। এগুলোকে ইস্যু করে মাঠে নেমেছে বিরোধী দল। ইস্যুর তালিকায় আরো রয়েছে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভোট কারচুপি।

শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সমালোচকরা আশঙ্কা করছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি বলেছে, শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
কিন্তু বিএনপি ও এর সমমনাদের দাবি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। আওয়ামী লীগ যখন বিনা বাধায় বড়ো বড়ো সমাবেশ করছে, তখন কর্মসূচীর জন্য বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বরং বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচীতে জনসমাগম ঠেকাতে পরিববহন ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বিরোধী দলের প্রতি সহিংস হয়ে উঠেছে। গত ৫ মাসে পুলিশের গুলীতে বিএনপির ৮ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে, গুলী ও পিটুনিতে আহত হয়েছে ২০০ জনেরও বেশি। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অন্তত ২০ হাজার মামলা দায়ের হয়েছে এই সময়ে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭ হাজার জনকে। শুধু ডিসেম্বর মাসেই বিএনপির শীর্ষনেতাসহ ১ হাজার নেতাকর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়।

গার্ডিয়ানের সঙ্গে আলাপে বিএনপি নেতা একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আগে তারা বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাতো। এখন প্রকাশ্যে দিনের আলোয় খুন করছে। এই অবস্থায় এই সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আশা করা যায় না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পের প্রধান সরবরাহকারী দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান শক্ত করেছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও এই সময়কালে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদ কায়েম এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত খুন ও গুমের অভিযোগে র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, নাম জাকির হোসেন। ২০১১ সালে তাকে বাসা থেকে ধরে আনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা করার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। মুক্তি পাওয়ার পর ২০২১ সালে তিনি যুক্তরাজ্য চলে যান।

গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাকির হোসেন বলেছেন, সরকার উৎখাত প্রচেষ্টার অভিযোগ আনা হলেও তাকে কখনো আদালতে হাজির করা হয়নি। তিন বছর অজ্ঞাতস্থানে একাকী বন্দী রাখা হয়েছিলো। মুক্তি দেওয়ার আগে ১১ মাস তাকে কারাগারে রাখা হয়। নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, আমি এখনো বেঁচে আছি।
মানবাধিকার সংস্থার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ১ বছর পার হয়ে গেলেও র‌্যাবের ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। নিখোঁজের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ১৬টি নাম।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বলপূর্বক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলোই এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপ বাড়ছে, বলছে দ্য গার্ডিয়ান। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিরোধী দলের ওপর দমন পীড়নের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়েই ক্ষমতাসীন হয়েছে। এবারও একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে।

কিন্তু হংকংভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে, তা কল্পনাও করা যাচ্ছে না। কারণ বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলকে দায়বদ্ধ করার মতো কোনো স্বাধীন প্রতিষ্ঠান নেই। বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একে অপরের সঙ্গে মিলে নির্বাচনে ভোটচুরিতে সাহায্য করে। এবং এরা সরকারের অপকর্ম ঢাকতেও ভূমিকা রাখে।
আমাদের সময়.কম