Home মতামত বাংলাদেশে বাঙ্গালী ও বাংলা নববর্ষের উৎসব অবিচ্ছেদ্য

বাংলাদেশে বাঙ্গালী ও বাংলা নববর্ষের উৎসব অবিচ্ছেদ্য

80

শামসুন নাহার:

বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালীর সার্বজনীন উৎসব। এটি বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব। সম্রাট আকবর বাংলা নববর্ষ চালু করলেও ইউনেস্কো বাংলা নববর্ষ পালনকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বলে স্বীকৃতি দিলেও খোদ বাঙ্গালীর ধর্মান্ধ সন্তান বাংলাদেশে বা প্রবাসে বসে ধর্মের সাথে নববর্ষ পালনকে মিশিয়ে যে ধর্মীয় ফতোয়ার শরবত বাংলাদেশের আপামর জনতাকে বিগত কয়েক যুগ ধরে খাইয়ে এসেছেন এবং প্রচার করেছেন বাংলা নববর্ষ পালন গুণাহ, কাল সারাদেশে সর্ব স্তরের সর্ব বর্ণের সকল ধর্মের বাঙ্গালীর একাত্ম হয়ে নববর্ষ পালন করে বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের অপচেষ্টা এই বাংলায় কোনদিন সফল হয়নি, কোনদিন সফল হবে না।নববর্ষ বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব – বাঙ্গালীর থেকে বাংলা নববর্ষ আলাদা করা যাবে না কারণ বাংলাদেশে বাঙ্গালী ও বাংলা নববর্ষের উৎসব অবিচ্ছেদ্য।

বাংলার সর্বস্তরের মুসলমান, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রী্স্টান, নিধার্মিক বাঙ্গালী সবাই গতকাল সারা দেশে মঙ্গল যাত্রায় অংশগ্রহণ
করে বুঝিয়ে দিয়েছেন- তারা কি চান। তারা নববর্ষও চান, রোজা, নামাজ করে ধর্মের শান্তিও চান। তারা কাল প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশে ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।এ উৎসবে কাউকে কেউ ভাড়া করে বা প্রলোভন দেখিয়ে আনেনি, এখানে অংশগ্রহণরত সব বাঙ্গালী এসেছেন নিজের ভেতরের জাতি স্বত্ত্বার সাথে একাত্মতার তাগিদে, বাঙ্গালীর প্রানের উৎসবে মুখরিত হবার তাগিদে।

হিন্দিতে একটি কথা আছে- আকলমন্দ কে লিয়ে ইশারাহি কাফি হোতেহে।গতকাল মেয়েরা কেউ লাল সাদা হিজাব পরে নববর্ষের অনুষ্ঠানে এসেছেন, কেউ পরেছেন লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, লাল সাদা পান্জাবী পোষাকে পুরুষরাও ছিলেন সজ্জিত, সব বয়সের মানুষের অংশগ্রহণে এই রমজানেও মুখরিত ছিল রাজপথ থেকে গ্রামের মেঠোপথ নববর্ষের উৎসবে।ঘরে ঘরে ছিল পান্তা ইলিশ বা সাধ্যমতো নববর্ষে ভালো কোন খাবারের আয়োজন।আমার ছোটবেলায় আমি দেখেছি হিন্দু বা মুসলিম সব ঘরেই এ দিনে মাছ কেনা হতো, রান্না করা হতো ভাল খাবার, গ্রামে গন্জে মেলা হতো, সে মেলা চলতো কখনও মাস ব্যাপী। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীসহ বেড়াতে আসতো বাপের বাড়ী। ঘরে ঘরে একরকম উৎসবের আমেজ বয়ে যেতো। এখনকার মতো পান্তা ইলিশের তেমন চল মফস্বলে দেখিনি, হালখাতা উৎসব করতেন ব্যবসায়ীরা নতুন বছরে, মিষ্টি বিতরণ হতো- ক্রেতা বা বিক্রেতার
ধর্ম কি তা নিয়ে মাতামাতি ছিল না।

বাংলাদেশে বাঙ্গালী কি চায় তার প্রমাণ তারা আচরণে প্রকাশ করে দিয়েছে। বাঙ্গালী শান্তি প্রিয় সম্প্রীতিময় জাতি যারা অপরকে ভালবাসতে জানে, সম্মান করতে জানে, পরের মত সহ্য করার ক্ষমতা বাঙ্গালীর আছে।সব ধর্ম ও সব বর্ণ মিলে আমরা বর্ণে বর্ণে বাঙ্গালী- আমরা মিলেমিশে পাশাপাশি থাকবো – এটাই আমাদের বাঙ্গালী জাতির আবহমানকালের ধারাবাহিকতা।আমাদের মসজিদে আযান যেমন হবে তেমনি মন্দিরে পুজোর ঘন্টিও বাজবে, প্যাগোডায় প্রবারণা তো গীর্জায় বড়দিনের উৎসব, উপজাতি বাঙ্গালীরাও তাদের স্ব স্ব উৎসব যেমন মার্মারা
করেন সাংগ্রাই উৎসব তেমন করে সবাই সবার তরে পাশাপাশি
হাত রেখে হাতে এক বাংলার গান গাইবেন – এই বৈচিত্র্যই বাঙ্গালীর সৌন্দর্য্য।

বাঙ্গালী গতকাল স্বগৌরবে সারা দেশে রমজান মাসে পহেলা বৈশাখে নববর্ষের উৎসবে যোগদান করে তাদের প্রাণের ভাষায়
“আইলো আইলো আইলো রে
রঙ্গে ভরা বৈশাখ আমার আইলো রে” গান করে চারিদিকে ঢাক ঢোল ঝাঁঝর বাজিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে,
আমরা হারবো না কোন মৌলবাদের কাছে, ধর্মান্ধতার কাছে,
আমরা বাঙ্গালী ছিলাম, আছি এবং থাকবো স্ব গৌরবে, স্ব মহিমায়, আপন আলোয়, আপন ভাষায়, আপন সংস্কৃতিকে আমরা বিশ্বের কাছে তুলে ধরবো – গর্ব করে বলবো আমি বাঙ্গালী, বাংলা নববর্ষ আমাদের হাজার বছরের বর্ষবরণ উৎসব যা সকল বাঙ্গালী একসাথে পালন করে নববর্ষকে বরণ করেন, নতুন বছরে মঙ্গলের প্রার্থনা করেন, এক সাথে সবাই গান করেন
মঙ্গল শোভা যাত্রায়-

তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে॥
তব, পূণ্য-কিরণ দিয়ে যাক্, মোর মোহ-কালিমা ঘুচায়ে।…

একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়-
শুভ হউক সবার নতুন বছর – শুভ নববর্ষ- এ শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে, নববর্ষের আনন্দ উদযাপনে, মঙ্গল প্রার্থনায় কেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি – এতো ছোট তুচ্ছ চিন্তা আমার মহান শ্রষ্টার হতে পারে না। তাই বাঙ্গালীর নববর্ষ পালনকে ধর্মান্ধতার বিষাক্ততা ছড়িয়ে কেউ বাঙ্গালীর থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না- এ কথা বাঙ্গালী নববর্ষের উৎসব মহা ধুমধামে পালন করে পরিষ্কার করেছে তার অবস্হান, বাঙ্গালীর সারাদেশে নববর্ষ পালনের দৃশ্য পরম শান্তির, এ দৃশ্য দেখে মরেও সুখ যেন।
বাংলাদেশে বাঙ্গালী ও বাংলা নববর্ষের উৎসব
প্রকৃতই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ – এটাই আমাদের নির্মল ও পবিত্র সত্য।–লেখকঃ কানাডিয়ান প্রবাসী
Saskatoon, Saskatchewan,
এপ্রিল ১৪, ২০২২