ডেস্ক রিপোর্ট: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আগামী ১৪ই আগস্ট বাংলাদেশ সফর করবেন। চার দিনের এ সফরে তিনি যাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারকে চাপ দেন সেই আহ্বান জানিয়েছে ৯টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা মানবাধিকার সংস্থাগুলো হচ্ছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এন্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন এগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্সেস, এশিয়ান ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রোজেক্ট, ইলিওস জাস্টিস- মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন এগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এবং রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস।
সংস্থাগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, এই সফরে বাংলাদেশের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং গুমসহ গুরুতর সকল নির্যাতন বন্ধে প্রকাশ্যে আহ্বান জানানো উচিৎ মিশেল ব্যাচেলেটের। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বুধবার ওই বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সফরের সময় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সরকারি কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া তার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথাও রয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শত শত বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হতে হয়েছে। যদিও আগের সরকারগুলোর সময়েও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তবে জোরপূর্বক গুম গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার শাসনকালের ‘হলমার্কে’ পরিণত হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, এই সফরে যদি তিনি এই নির্যাতনের নিন্দা না জানান কিংবা সংশোধনের আহ্বান না জানান, তাহলে শাসক দল আওয়ামী লীগ তার নীরবতাকে নিজেদের নিপীড়ন এবং এক্টিভিস্টদের দমনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করতে পারে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন বা র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। এর জন্য বাংলাদেশ সরকার ভিক্টিমদের স্বজন, মানবাধিকারকর্মী ও তাদের পরিবার এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছে।

হাই কমিশনার ব্যাচেলেটের উচিৎ বাংলাদেশ সরকারকে এসব গুম, নির্যাতন, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনে চাপ দেয়া। এছাড়া ভিক্টিম, তাদের পরিবার এবং স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে কমিশন গঠনে নিজের সংস্থার সাহায্যও প্রস্তাব করা উচিৎ ব্যাচেলেটের।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার স্পষ্ট করে জানানো উচিৎ যে, নিরাপত্তা বাহিনী যদি অব্যাহতভাবে এই নিপীড়ন চালিয়ে যায় তাহলে তা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে বাংলাদেশি সেনাদের মোতায়েনকে হুমকিতে ফেলবে।
বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার এমন এক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন যখন দেশটির সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে আক্রমণ বেড়েই চলেছে। সরকার অনেক সংস্থার ফান্ডিং আটকে দিয়েছে এবং মানবাধিকারকর্মীদের কার্যক্রম বন্ধে চাপ দিচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী এবং সংস্থাগুলো যাতে স্বাধীনভাবে এবং ভয়হীন পরিবেশে কাজ করে যেতে পারে সেটি নিশ্চিতে তাদের উপরে চলমান সকল হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানানো উচিৎ ব্যাচেলেটের।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এক্টিভিস্ট, সাংবাদিক এবং সরকার সমালোচকদের দমন এবং স্তব্ধ করতে ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং ২০০৬ সালের আইসিটি অ্যাক্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে এসব আইনের অধীনে করা মামলাগুলো চলছে। ফলে এর অধীনে অভিযুক্তরা অব্যাহতভাবে হেনস্থা হয়ে চলেছেন। ২০১৩ সালের এক আন্দোলনে সরকার অত্যাধিক বল প্রয়োগ করছে বলে রিপোর্টের কারণে বিচারের মুখোমুখি করা হয় মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের আদিলুর রহমান খান এবং এএসএম নাসিরুদ্দিন এলানকে।
২০২২ সালে সরকার অধিকারের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করে দেয় এবং অভিযোগ তোলে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জোরপূর্বক গুম নিয়ে সংস্থাটির প্রোপ্যাগান্ডা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের কারণেই র‍্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
হাই কমিশনার ব্যাচেলেটের উচিৎ প্রকাশ্যে উল্লেখ করা যে, সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর এমন দমন-পীড়ন ২০২৩ সালে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনকে হুমকিতে ফেলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দলকে বৈঠক এবং সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় সরকার বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

এছাড়া বিবৃতিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ দিতেও ব্যাচেলেটের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আমাদের সময়.কম