Home জাতীয় পৃথিবীতে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী !

পৃথিবীতে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী !

33

রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ পৃথিবীতে কিছু মৃত্যু পাখির পালকের চেয়ে হালকা আর কিছু মৃত্যু পাথরের চেয়েও ভারী। বিশেষ করে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী আর কিছুই নেই। সেরকমেরই একজন হতভাগ্য পিতা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে অচিন্তনীয় বিয়োগান্তুক অধ্যায়ের শোকগাঁথায় যিঁনি পিতাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মাত্র চার বছর বয়সী নিজ শিশু পুত্র সুকান্ত বাবুকে হারিয়েছেন। জীবন সায়হেৃ দাঁড়িয়ে আজও সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি আর পিতা ও পুত্রসহ স্বজন হারানোর যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন বর্ষিযান এ আওয়ামী লীগ নেতা। সেই থেকে তাঁর হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে অনবরত ব্যথার করুন রাগীনি বেজে চলছে। শোকের মাস এলেই তার দ’ুচোখে বয় কান্নার সাঁতার। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর সহধর্মীনি সাহান আরা বেগমও আমৃত্যু এ যন্ত্রনা বয়ে বেড়িয়েছেন। পুত্র শোকে অঝোরধারায় কেঁেদ কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। ১৫ আগস্টের ভয়াল সেই কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে শহীদদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সের ছিলেন সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে সাবেক চিফ হুইপ ও বর্তমানে মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ কমিটির আহবায়ক এবং বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর অতি আদরের বড় পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। সেইদিন ভাগ্যক্রমে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রাণে বেঁচে গেলেও ঘাতকের নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শহীদ হওয়া চার বছরের আদরের সন্তানের মুখটাও শেষবারের মতো দেখার সুযোগ হয়নি তাঁর। সেই কষ্ট এখনও প্রতি নিয়ত তাঁেক তাড়িত করে । ঘাতকের নির্মম বুলেটে বড় ছেলেসহ বাবা, ভাই ও বোনকে হারিয়ে সেইদিনের নির্মম ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুলিবিদ্ধ সহধর্মীনি সাহান আরা বেগমকে নিয়ে টানা ৪৪ বছর শোকদিবস পালন করেছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। রাজনৈতিকভাবে নানা চড়াই উৎরাইয়ের কন্টকার্কীণ পিচ্ছিল পথে সার্বক্ষনিক অকৃত্রিম সারথী সাহান আরা বেগমকে ছাড়া এবছর দ্বিতীয় বারের মত ৪৭শোক দিবস পালন করতে হবে তাঁকে। কারন ঘাতকের নির্মম বুলেটবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়া শহীদ জননী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম ২০২০ সালের ৭ জুন রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ছেলে ও স্বজন হারানোর একবুক কষ্ট নিয়ে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চির অচেনার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে জাতীয় শোক দিবস আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জন্য আরও বিষাদের ছায়া বয়ে আনে। ১৫ আগস্ট ভয়াল কালরাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মিন্টো রোডের ২৭ নম্বরে তাঁর বোন জামাতা ও তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী কৃষককুলের নয়নের মনি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতেও হামলা চালায় ঘাতকরা। যেখানে খুনীরা নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তার ভাইয়ের ছেলে সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত,কন্যা বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত,নাতি সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত এবং বরিশালের ক্রিডেন্স শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য আব্দুর নঈম খান রিন্টুকে। এ ছাড়া ঘাতকের নির্মম বুলেটে সেদিন আহত হয়েছিলেন-আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সহধর্মীনি ও বঙ্গবন্ধুর বোন আমেনা বেগম,তার পুত্রবধূ সাহান আরা বেগম,কন্যা বিউটি সেরনিয়াবাত,হামিদা সেরনিয়াবাত,পুত্র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, ক্রিডেন্স শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য খ.ম জিল্লুর রহমান,ললিত দাস, রফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ মাহমুদ। হঠাৎ গুলি শব্দে বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ঘাতকরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। বাড়িতে আক্রমণের শুরুতেই আব্দুর রব সেরনিয়াবাত তার বাড়ির রেডফোন দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ মনিকে বিষয়টি অবহিত করে জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতেও একই অবস্থা। এতে তিনি মুহুর্তে বিমূঢ় হয়ে বসে পড়েন। ঠিক সেই মূহূর্তে ঘাতক সৈনিকরা দরজা ভেঙ্গে বাসার মধ্যে প্রবেশ করে সকলকে নিচতলায় নিয়ে আসে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, মেয়ে বেবী ও বিউটি সেরনিয়াবাত, ছেলে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, আবুল হাসানাত আব্দুরøাহর স্ত্রী সাহান আরা বেগম ও তার সন্তান বরিশালের অনেকেই। ঘাতকরা দোতালা থেকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে নিচতলায় নামিয়ে আনার সময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ৪ বছর ১ মাস ২৩ দিন বয়সের শিশুপুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত মায়ের কোলে যেতে চাইলে শহীদ সেরনিয়াবাত তাকে কোলে তুলে নেন। পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের ঘাতকরা একটি কক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখেন। শুরু হয় ঘাতকদের নির্মম ব্রাশফায়ার। ঘাতকের ক্রমাগত ব্রাশফায়ারে একে একে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, পুত্রবধূ সাহান আরা বেগম, শহীদ সেরনিয়াবাত ও কোলে থাকা সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতসহ অন্যান্যরা। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাহান আরা বেগমসহ অন্যরা কাতরাচ্ছিলেন। ঘাতকরা এ অবস্থায় চলে যায়। এ সময় আহত বিউটি সেরনিয়াবাত রক্তাক্ত রব সেরনিয়াবাতকে ধরে চিৎকার করে কেঁদে উঠলে ঘাতকরা ফিরে এসে দ্বিতীয় দফায় গুলি চালায়। ঘাতকের নির্মমতায় ১৬টি বুলেট বিদ্ধ হয় বেবী সেরনিয়াবাতের শরীরে। এ সময় ভাগ্যক্রমে রক্ষা পেয়ে যায় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর একমাত্র মেয়ে কান্তা সেরনিয়াবাত ও দেড় বছরের ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। গুলিবিদ্ধ মায়ের কোলের মধ্যে থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া স্বজনের রক্তে ভেজা সেই সময়ের মাত্র দেড় বছরের শিশু আজকের বরিশাল সিটি কর্পোরেশের নন্দিত মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুবরতœ সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।