Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি নিত্যপণ্যের বাড়তি দরে পিষ্ট ভোক্তা

নিত্যপণ্যের বাড়তি দরে পিষ্ট ভোক্তা

35

ডেস্ক রিপোর্ট: পরিবহণ ধর্মঘটের প্রভাবে রোববার বাজারে পণ্য সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়। সকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বল্পসংখ্যক ট্রাক রাজধানীর পাইকারি আড়তে পণ্য সরবরাহ করেছে, যা বেলা ১১টার মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ফলে বিকাল নাগাদ রাজধানীর পাইকারি আড়তে পণ্য সংকট তৈরি হয়। সকাল থেকে পাইকারি আড়তে বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারে চাল-ডাল থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, সব ধরনের সবজি, আলু, আদা-রসুনসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। আর এই বাড়তি দরের বোঝা ক্রেতাকেই বহন করতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ধর্মঘটের প্রভাবে তিন দিনের ব্যবধানে রাজধানীর খুচরা বাজারে সরু চাল কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে। বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন লিটারে ৫ টাকা করে বেড়েছে। পাশাপাশি খোলা ও পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটারে বেড়েছে ৫ টাকা। পেঁয়াজ ও মসুর ডাল কেজিতে ৫ টাকা ও প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া খুচরা বাজারে বেশ কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আলুর দাম বেড়েছে ৩ টাকা। একই সময়ে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আদা ২০ টাকা, রসুন ১৫ টাকা, হলুদ ১৫-২০ টাকা ও জিরা ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে জ্বালানি তেলের দাম না কমা পর্যন্ত ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পণ্য পরিবহণ মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ কথা না বলায় ধর্মঘট চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহণ মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক-লরি ও প্রাইম মুভার মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এ অবস্থায় বাজারে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আরও ভেঙে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়বে। পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে পর্যাপ্ত পণ্য বাজারে আনা যাচ্ছে না। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত ফসল নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে বাজারে যেটুকু পণ্য আসছে, পরিবহণে বেশি ভাড়া দিয়ে আনতে হচ্ছে। যে কারণে বাজারে বেশি দরে পণ্য কিনতে ভোক্তা পিষ্ট হচ্ছে। তিনি জানান, এমনিতেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। সেই ধকল বাংলাদেশের সব শ্রেণির ক্রেতাকে বহন করতে হচ্ছে। পাশাপাশি করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে, এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে নতুন করে পণ্যের দাম বাড়ছে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর কাঁচাবাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্মঘটের আগে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৬ টাকা, যা রোববার ছিল ৬৭-৭০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিনের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, যা ধর্মঘটের আগে ১৫৫ টাকা ছিল। খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল সুপার লিটার ১৪৫ ও ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি সরু মসুর ডাল ধর্মঘটের আগে প্রতি কেজি ১১০ টাকা বিক্রি হয়, যা এখন ১১৫ টাকা। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ধর্মঘটের আগে ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে, যা এখন ৬০-৬৫ টাকা। প্রতি কেজি আলু ২৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এদিন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা আদা ১২০, রসুন ১২৫ ও জিরা ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। ধর্মঘটের প্রভাবে সবজির দাম অনেক বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে আসতে পারছে না কাক্সিক্ষত পরিমাণে সবজি। যা আসছে তার দামও আকাশছোঁয়া। তিন দিনের ব্যবধানে দাম সবজিভেদে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, কোনো কিছু হলেই এ দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। কোনো দিবস বা ধর্মীয় উৎসবের সময় বিক্রেতারা পণ্যের দাম বাড়ায়। সময়-অসময়ে এক একটি পণ্য সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায়। দেখার যেন কেউ নেই। এবার সরকারের কারণেও পণ্যের দাম বাড়ল। এ সময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনো দরকার ছিল না। সুযোগ পেয়ে ভাড়া বাড়াতে পরিবহণ ধর্মঘট পালন করল মালিক-শ্রমিকরা। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে গিয়ে পণ্যের দাম বাড়ল। বাড়তি দাম আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাকেই বহন করতে হচ্ছে।-যুগান্তর