Home রাজনীতি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার প্রথম জানাযা সম্পন্ন

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার প্রথম জানাযা সম্পন্ন

37

জাকির হোসেন আজাদী: আজ (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে দশটায় জাতীয় ঈদগাহে ডেপুটি স্পিকার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। জানাজা পড়ান সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব আবু সালেহ মোহাম্মদ সলিমুল্লাহ।

জানাজায় রাজনৈতিক ও আইন অঙ্গনের বরেণ্য ব‍্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ‍্যে উল্লেখযোগ্য প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, কামরুল ইসলাম, সরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী প্রমুখ।

জানাযার পূর্বে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

জানাজা শেষে ডেপুটি স্পিকারের মরদেহবাহী কফিনে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় নেতাদের নিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্রদ্ধা জানান।

এরপর বেলা ১২টার দিকে তাঁর মরদেহ পুরাতন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে মরদেহ গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায় নিয়ে যাওয়া হবে।

উল্লেখ্য যে, গত ২২ জুলাই নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। এই সংসদ সদস্য দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন ফজলে রাব্বী মিয়া। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। আওয়ামী লীগ এর প্রতিবাদ করে। সেই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন তৎকালীন ছাত্রলীগ কর্মী ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল তাঁর; ১১ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন। পাশাপাশি সেই সময় স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

পিতার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী আর কিছু হতে পারে না। ফজলে রাব্বী মিয়াকে সন্তানতুল্য জামাতার লাশ কাঁধে বহন করতে হয়েছে। গতবছরের শুরুতে তাঁর বড় জামাতা হাসান ইকবাল শামীমের মৃত্যু হয়। সন্তান আজীবন বাবা-মায়ের কাছে শিশুই থেকে যায়। ৬১ বছর বয়সে জামাতার মৃত্যু শ্বশুর ফজলে রাব্বীকে মানসিকভাবে আঘাত করেছিল। তিনি জামাতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। সে ভিডিও সেইসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের পক্ষে যত শক্ত মনের মানুষই হোন, চোখের জল আটকে রাখা কঠিন হবে। এর আগে ২০২০ সালে স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের মৃত্যুও তাঁর মধ্যে বড় রকমের শূন্যতা তৈরি করেছিল।

তিনি ৯ মাস আগে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রাক্কালে জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে বেশ কয়েকবার দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেছিলেন ফজলে রাব্বী মিয়া। স্পিকারের সভাপতিত্বে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্যের জন্য নির্ধারিত আসনে বসতেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। এখনও যদি কেউ ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে সেই মোনাজাত দেখেন তাহলে ইসলামের প্রতি তাঁর দরদ অনুধাবন করতে পারবেন।

জাতীয় সংসদে তুলনামূলক আইনজ্ঞ ও তৃণমূলের রাজনীতিবিদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিল্পপতি ও পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে রাজনীতিতে আসা জনপ্রতিনিধি বাড়ছে। তারপরও হাতেগানো যে কয়েকজন আইন প্রণেতার কারণে এখনও সংসদ প্রাণবন্ত হয়, তাঁদের একজন ছিলেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তাঁর এই চলে যাওয়ার শূন্যতা পূরণ হবে না। তবে তিনি আমৃত্যু তরুণদের ঘিরে যে স্বপ্ন দেখতেন, হয়তো তরুণদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার নেতৃত্ব। নির্বাচনী এলাকার জনগণ, সহকর্মীদের পাশাপাশি বাবার মৃত্যুতে শোকে কাতর ৩ কন্যা। ‘যে যায় সে চলে যায়/ যারা আছে তারাই জেনেছে/ দু’হাতের উল্টোপিঠে কান্না মুছে হাসি আনতে হয়।’ স্বজনদের সমবেদনা; কর্ম আর মানুষের ভালোবাসায় অমর হয়ে থাকবেন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ ফজলে রাব্বী মিয়া।