Home জাতীয় জিসান-মানিকের নতুন মোর্চার দাপট সর্বত্র

জিসান-মানিকের নতুন মোর্চার দাপট সর্বত্র

83

ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকার অপরাধজগতের (আন্ডারওয়ার্ল্ড) দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মোর্চা ‘জে অ্যান্ড জে’ গ্রুপ এখন নিষ্ক্রিয়। গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গেছেন দুবাইয়ে পলাতক ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি। তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন ভারতে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক।

ভয়ংকর এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর ঐক্যে আন্ডারওয়ার্ল্ডে চলছে নয়া মেরুকরণ। নানা হিসাবনিকাশে হাতবদল হচ্ছে ক্ষমতা। এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট সন্ত্রাসী গ্রুপকেও এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা করছেন জিসান-মানিক। ঢাকায় এ দুজনের হয়ে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন স্থানীয় নেতাও কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সূত্রগুলো বলেছে, অপরাধজগতের নয়া মেরুকরণের ধারাবাহিকতায় নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে আছেন মালয়েশিয়ায় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম, দুবাইয়ে পলাতক রবিন এবং ভারতে পলাতক শাহাদাত হোসেন ওরফে সাধু। অপরাধজগতের দখল ধরে রাখতে তাদের সহযোগীরা এখন অতিমাত্রায় সক্রিয়।

ইব্রাহীম ও শাহাদাতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মিরপুর এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্য দখলে নিতে মরিয়া কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের সহযোগীরা। আবার একসময় শাহাদাতের হয়ে যারা কাজ করতেন, তাদের কেউ কেউ গড়ে তুলেছেন অস্ত্রধারী নিজস্ব গ্রুপ।

আর ঢাকার অপরাধজগতে একসময় ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হিসাবে পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয় টেন্ডার, চাঁদাবাজি, খুন-খারাবির পথ থেকে সরে দেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানে রাজনৈতিক অ্যাসাইনমেন্ট তামিলে নতুন তৎপরতা শুরু করেছেন।

কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন ব্যাংককে। সেখানে বসেই নাড়ছেন কলকাঠি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপকমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান বলেন, বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সহযোগী হিসাবে ঢাকায় সক্রিয়দের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে।

তাদের ছবি ও বায়োডাটা সংগ্রহ করে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনার কাজও চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা যায়, বিবদমান উল্লিখিত গ্রুপগুলোই এখন সরকারি অফিস, দপ্তর, অধিদপ্তরের ঠিকাদারির ভাগবাঁটোয়ারায় প্রভাব বিস্তার করছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে চাঁদাবাজি, মার্কেট ও ফুটপাতকেন্দ্রিক তোলাবাজির নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে।

কোনো কোনো গ্রুপ রাজনৈতিক মদদও পাচ্ছে। জে অ্যান্ড জে গ্রুপে ভাঙন, প্রভাবশালী কয়েক সদস্যের নিষ্ক্রিয়তা ও ক্যাসিনো-কাণ্ডে ফেঁসে সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও ঠিকাদার জিকে শামীমের দীর্ঘ কারাবাসের ফলেই ক্ষমতার রদবদল এসেছে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে।

আরও জানা যায়, ঢাকার অপরাধজগতে এখন অতিমাত্রায় সক্রিয় দুবাইয়ে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ওরফে মন্টি ও ভারতে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ ওরফে মানিক।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে নগদ অর্থপুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই তালিকায় এ দুজনেরই নাম আছে। জিসানের সরাসরি সহযোগিতায় গণপূর্তের ঠিকাদারি কাজের একচ্ছত্র অধিপতি হয়েছিলেন গোলাম কিবরিয়া শামীম (জিকে শামীম)।

কাজ বাগিয়ে দিয়ে জিকে শামীমের ব্যবসায়িক অংশীদারও হয়েছিলেন জিসান। কিন্তু ২০১৯ সালের এপ্রিলে কাকরাইলের অফিসে সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জিকে শামীমের সঙ্গে এক গোপন বৈঠক হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্রাট-খালেদের শেল্টার পেয়ে জিসানের কাজের কমিশনের বিপুল অঙ্কের টাকা মেরে দেন জিকে শামীম। তখন জিসান ও খালেদ গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দুই পক্ষ একে-অপরের অপরাধ কর্মকাণ্ড তুলে ধরে পালটাপালটি পোস্টারিং করে নগরজুড়ে।

এ ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই ক্যাসিনো-কাণ্ডে ফেঁসে সম্রাট, শামীম, খালেদ গ্রেফতার হন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সূত্রগুলোর দাবি, সম্রাট, খালেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জিকে শামীম জিসানের কয়েক শ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার পরই ঢাকার অপরাধজগতের একসময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী কয়েক ভাইয়ের সঙ্গে হাত মেলান জিসান।

তখনই ধস নামে ক্যাসিনো রাজ্যে। এরপর ঢাকার অপরাধজগতে আত্মপ্রকাশ পায় ‘জে অ্যান্ড জে’ গ্রুপ। ঢাকার সব ধরনের ‘সেটেলমেন্ট’-এর একক নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এই গ্রুপের হাতে। সম্প্রতি আলোচিত এ গ্রুপে ভাঙনের কারণে জিসান-মানিক এক হয়ে ঢাকার অপরাধজগতের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন।

বিদেশে পলাতক এই দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীর হয়ে কাজ করছেন মতিঝিল ও পল্টন এলাকার দুজন আওয়ামী লীগ নেতা। পল্টনের ওই নেতা ডিএসসিসির একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। জিসান মানিকের হয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার।

একসময় শটগান সোহেল হিসাবে পরিচিতি পেলেও খালেদের দাপটে টিকতে না পেরে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। খালেদ গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পর দেশে ফিরেই জিসান-মানিকের হাত ধরে তার হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে নেমেছেন।

সম্প্রতি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ২০০ কোটি টাকার কাজের ভাগাভাগিতে অপরাধজগতের এই মেরুকরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই কাজ ভাগাভাগিতে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও মানিকের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জিসান-মানিকের এই গ্রুপটিই এখন টেন্ডারবাজিতে সম্রাট-শামীম-খালেদের রাজ্য হিসাবে পরিচিত ক্রীড়া পরিষদ, কমলাপুর আইসিডি, রাজউক ও গণপূর্তের একচেটিয়া দখল নিতে মরিয়া। খালেদও কারাগারে বসেই তার রাজ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

টেন্ডারবাজির বাইরে কমলাপুর, গোপীবাগ, মতিঝিল, খিলগাঁও, শাজাহানপুর, মগবাজার, রামপুরা, বনশ্রী, তেজগাঁও, কালাচাঁদপুরে অপরাধ কর্মকাণ্ডের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে জিসান-মানিকের সহযোগীরা।

কলকাতায় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ও ইখতিয়ারও জিসান-মানিকের নতুন মোর্চার সঙ্গে সমঝোতা করেই অপরাধ মিশন পরিচালনা করছেন। পল্টন এলাকার ওই জনপ্রতিনিধির ভাই পান্না শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদের হয়ে অপরাধকাণ্ডে তৎপর।

তার সঙ্গে কাজ করেন ডিবি পুলিশ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ও কলকাতায় পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইখতিয়ারের ভাগনে বাপ্পী।

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হয়ে কাজ করার বিষয়টি অস্বীকার করে সোহেল শাহরিয়ার জানান, জিসান-মানিকের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো যোগাযোগ তার নেই। তাদের ওপর ভর করে রাজনীতি করার ইচ্ছেও নেই। সমালোচনা এড়াতে তিনি এবার গরুর হাটে পর্যন্ত যাননি।

এলাকায় এখনো খালেদ, রানা মোল্লা ও মানিকের লোকজন সক্রিয়। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

জানা যায়, এক যুগ আগেও ঢাকার অপরাধজগতে ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন তানভীর ইসলাম জয়। কলকাতায় পলাতক অবস্থায় তিনি ঢাকার অপরাধজগতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু নানামুখী চাপে তিনি কলকাতায় থাকতে পারেননি।

যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে নগদ অর্থপুরস্কার ঘোষণা করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেই তালিকার অন্যতম জয়। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার পরিচিতি ঠান্ডামাথার ‘গেম প্ল্যানার’ হিসাবে। একসময় ঢাকার অপরাধ-সাম্রাজ্যের কোনো সেটেলমেন্টই তাকে বাদ দিয়ে করার সাধ্য কারও ছিল না।

ঢাকার বেশ কয়েকটি বড় হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তার জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও তা প্রমাণ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন তিনি।

শীর্ষ সন্ত্রাসীর তকমা মুছতে কানাডার অন্টারিও শহরে তারেক রানা নামে পরিচিতি প্রকাশ করেন। গড়ে তোলেন এসজে ৭১ লিমিটেড নামের ট্যুরিজম ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার কোম্পানি।

এর আগে আমেরিকার সেন্ট জোনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ব্যবসা প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। বিজনেজ ডেভেলপমেন্টের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কানাডায় স্বর্ণপদকও পান। কিন্তু তার আসল পরিচয় প্রকাশ পেলে কানাডায় থাকতে পারেননি।

কানাডার গ্রিন কার্ডধারী জয় এখন নতুন মিশনে সক্রিয়। ব্যাংককে বসে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে তৃতীয় শক্তির উত্থানের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কাজ করছেন। তার বাহিনীর সদস্যরা এখন এ কাজে সক্রিয়।

নাগরিক ঐক্যের একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে তার মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডও আছে গোয়েন্দাদের হাতে। ধানমন্ডি এলকায় তার অপরাধ-সাম্রাজ্য দখলে নিয়েছে কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন।

নারায়ণগঞ্জ কারাগারে বসে মোবাইল ফোনেই নিয়ন্ত্রণ করেন বাহিনী। নিয়মিত আদালতে যাওয়া-আসার পথে কথা হয় সহযোগীদের সঙ্গে। জিসানের সঙ্গেও ইমনের সখ্য রয়েছে।

গোয়েন্দা তালিকায় ঢাকার অপরাধজগতের ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসাবে পরিচিত মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুল এলাকা। এখানকার মানুষের কাছে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচিত ভারতে পলাতক শাহাদাত হোসেন ওরফে সাধু।

একসময় মিরপুর এলাকার অপরাধ-সাম্রাজ্যের পুরোটাই ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু এখন তাকে ছাপিয়ে গেছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহীম। ঘুরেফিরে মালয়েশিয়া ও ব্যাংককে থাকেন তিনি। বিদেশে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন মিরপুর এলাকার অপরাধজগতের বড় অংশ।

তবে কারাবন্দি ভাষানটেকের শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসও সক্রিয়। কাশিমপুর কারাগারে বসেই তিনি দল পরিচালনা করছেন। বাইরে কাজ করছে তার শুটার বাহিনীর সদস্যরা। আব্বাস ও ইব্রাহীম গ্রুপের চাপে শাহাদাত গ্রুপ এখন একেবারেই কোণঠাসা।

মিরপুর-৬ ও ১১ নম্বরের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী দুই সহোদর জামিল ও মামুনের গ্রুপও এখন আর শাহাদাতের কমান্ড ফলো করে না। অথচ এরাই একসময় শাহাদাতের কমান্ডে বিভিন্ন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কথায় কথায় গুলি ছুড়ে ত্রাসের সৃষ্টি করত।

এসব সন্ত্রাসীর বলয়ের বাইরে উঠতি বয়সি তরুণদের দলে টেনে নতুন করে গ্রুপ গোছাচ্ছে শাহাদাত।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে মিরপুর এলাকায় এখনো শাহাদাতের নামেই চাঁদাবাজির অভিযোগ বেশি। মাঝেমধ্যে শাহাদাতের সহযোগী পরিচয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় চাঁদাবাজদের গ্রেফতারও করা হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পান-শাহাদাতের সঙ্গে তাদের কখনো দেখা কিংবা কথাও হয়নি। অথচ শাহাদাতের নামে তারা চাঁদাবাজি করে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তথ্যমতে, ভারতে পলাতক মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাত গ্রুপের মূল কাজ চাঁদাবাজি। জমি কেনাবেচা ও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তার গ্রুপকে চাঁদা না দিয়ে কম মানুষই পার পান।

তার গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় ঘুরেফিরে নতুন বাড়ি নির্মাণ ও জমি কেনাবেচার হালনাগাদ তথ্য শাহাদাতকে জানায়। এরপর সংশ্লিষ্টদের কাছে কল করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে শাহাদাত।

চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নির্ধারিত টার্গেটে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে। এরপর জীবনের মায়ায় তারা শাহাদাতের সঙ্গে আপস করেন। শাহাদাতের এই কৌশল অনুসরণ করে তার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে কাফরুলের ইব্রাহীম।

বিদেশে বসেই শুটার বাহিনী পরিচালনা করেন তিনি। কচুক্ষেত ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের গরুর হাটের টাকার ভাগ চেয়েও দুজন ইজারাদারের কাছে ফরমান পাঠিয়েছে ইব্রাহীম।

অপরাধজগতের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, হালে রাজধানীতে ভাড়ায় কিলিং মিশন পরিচালনায় সবচেয়ে বেশি পারদর্শী রবিন গ্রুপ। তার প্রধান দুই সেনাপতি মাহবুব ও ডালিম। যুবলীগ নেতা মিল্কি খুনে জড়িয়ে আমেরিকা পাড়ি জমান যুবলীগ নেতা বাড্ডার সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল।

আর র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান তার ঘনিষ্ঠ সহচর তারেক। কথিত আছে, মহাখালীর আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মুকুল নিহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। এদের অপরাধ-সাম্রাজ্যে উত্থান ঘটেছে রবিনের।

কখনো দুবাই, কখনো মালয়েশিয়া বসেই রবিন নিয়ন্ত্রণ করেন মজবাজারের একাংশ, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডা, বেরাইদ ও উত্তরা এলাকার অপরাধজগৎ। বাড্ডার আলোচিত দুই সহোদর আলমগীর-জাহাঙ্গীরের সঙ্গেও রবিনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গেও এই গ্রুপের সখ্য রয়েছে। মিরপুর এলাকার যুবলীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই গ্রুপের অস্ত্রধারীদের নানা কাজে ব্যবহার করেন। মূলত জিসানের কমান্ড ফলো করেন রবিন।-যুগান্তর