Home সারাদেশ জাবি উপ-উপাচার্যের দৌড়ে ‘বিতর্কিত’ দুই শিক্ষক

জাবি উপ-উপাচার্যের দৌড়ে ‘বিতর্কিত’ দুই শিক্ষক

48

জাবি প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদটি শূন্য থাকলেও হঠাৎ চলছে নিয়োগের গুঞ্জন। এ পদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষকের নামসহ একটি ফাইল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী উপ-উপাচার্য কে হবেন- তা নিয়ে আলোচনার চেয়ে সমালোচনা বেশি হচ্ছে। কারণ তাদের মধ্যে দু’জনের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকা এবং ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সুত্রে জানা যায়, গত বছরের গত ১২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মেয়াদ শেষ হয়। এর আগে, গত ২ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১১(২) ধারা অনুযায়ী তাকে উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে উপাচার্যের পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। ফলে এক বছরের অধিক সময় ধরে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, সিনেট ও একাডেমিক কাউন্সিলসহ গুরুত্বপূর্ণ সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে, অধ্যাপক বশির আহমেদের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজের বিরুদ্ধে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধ্যাপক বশির আহমেদ ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি নিয়মিত ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতেন এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছেন তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ। এমনকি ছাত্রদলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তৎকালীন (১৯৯১-৯২) ছাত্রদল নেত্রী শামীমা সুলতানার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন তিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে শামীমা সুলতানাকে নিয়োগ দিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সহযোগিতা নেন তিনি।

এদিকে অধ্যাপক বশির আহমেদের বিরুদ্ধে সিলেকশন বোর্ডের সদস্য এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খুরশীদা বেগমের নোট অব ডিসেন্ট থাকা সত্ত্বেও ‘ক্ষমতার জোরে’ অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পাওয়া অভিযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে তার বিরুদ্ধে গবেষণাপত্র প্রকাশে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বশির আহমেদের বিরুদ্ধে প্রশাসনে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের বিরোধিতা ও বিএনপি-জামায়াতপন্থীদের পুনর্বাসন করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকে অধ্যাপক বশির আহমেদের বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়াই নামের পূর্বে ‘ডক্টরেট’ ব্যবহারের অভিযোগ আছে। জানা যায়, তিনি ২০১০ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার জন্য ছুটি নেন। তবে তিনি পিএইচডি গবেষণা শেষ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি নিজ বিভাগে কর্মরত অবস্থায় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আবারও পিএইচডিতে ভর্তি হয়েছেন বলে তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এছাড়া অধ্যাপক বশিরের নিজের পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলেও তার অধীনে পিএইচডির জন্য শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি শাহনাজ পারভীন নামে এক শিক্ষার্থীকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটি গঠনে পক্ষপাতদুষ্টতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক মফিজুল কবির টানা তিনবার ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। অধ্যাপক ফিরোজ ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা ও অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নে জালিয়াতির পৃষ্ঠপোষক ও প্রশ্রয়দাতা ছিলেন বলেও জানান অনেকেই। পরে তৎকালীন প্রশাসন ওই বিভাগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি স্থগিত করেন।

এছাড়া একই সময়ে একই শিক্ষাবর্ষে তিনবার ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্নাতক (সম্মান) পর্বে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক রাজনীতিতে কখনও সক্রিয় ছিলেন না, যে কারণে দলের কোনো পদেও তাকে দেখা যায়নি। এছাড়াও বিএনপির রাজনীতির সাথে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও রয়েছে। জানা গেছে তিনি বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের কোনো পদেও নেই।

এছাড়া অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফীর বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন নারী শিক্ষিকাকে যৌন নিপীড়ন, ১৯৯৬ সালে ইতিহাস বিভাগের এমফিল পর্যায়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় সাভারের একজন প্রকৌশলীর স্ত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ২০০০ সালের ২৫ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যৌন নিপীড়ন, ডাকাতি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে এলাকাবাসীর পক্ষে এক ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে সেসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন। এছাড়া সেসব অভিযোগের বিপরীতে প্রমাণপত্র উপস্থাপন করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কখনোই এ ধরণের কাজের সাথে (ভর্তি পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি) জড়িত ছিলাম না।’ এছাড়া তখন সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী রাজনীতিতে তার অবদান ও বিএনপি রাজনীতি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

অন্যদিকে অধ্যাপক বশির আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে এর আগে ছাত্রদল সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, আমি কখনও ছাত্রদল সংশ্লিষ্ট রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’ এছাড়া তখন অন্য অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।