Home মতামত জন্ম নিচ্ছে মূর্খ মৌলবাদীর দল

জন্ম নিচ্ছে মূর্খ মৌলবাদীর দল

55

তাছলিমা নাসরিন: হৃদয় মণ্ডল জামিন পেয়েছেন। তিনি কি এখন ওই বিনোদপুর রামকুমার ইস্কুলেই ফের দশম শ্রেণীর ওই শিক্ষক অবমাননাকারী ধর্মান্ধ ছাত্রদের বিজ্ঞান পড়াবেন? যদি পড়ান, আমার আশংকা, তিনি আবারও অপদস্থ হবেন, আবারও তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এই সময় সবচেয়ে জরুরি হলো, শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলাটি সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া, বরং যারা শিক্ষক অবমাননা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া, হৃদয় মণ্ডলকে হেনস্থা করার পেছনে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের শাস্তি হওয়া। এই কাজগুলো না হলে বিজ্ঞানমনস্কদের শুধু অপমান আর অপদস্থ হওয়া হয়, তাদের খুন হয়েও যেতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না অভিজিৎ রায়, অনন্ত বিজয় দাশ, ওয়াশিকুর রহমান, রাজিব হায়দার, নিলয় নীল –এঁরা সবাই বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন। এঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ধর্মান্ধ জিহাদি গোষ্ঠী। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ অন্ধকারে পড়ে থাকা ধর্মান্ধ জিহাদিদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।কারণ বিজ্ঞানমনস্ক জ্ঞানীরাই মানুষকে আলোকিত করতে চায়, সমাজকে নষ্ট অন্ধকারের নাগপাশ থেকে মুক্ত করতে চায়। দেশে লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা বানানো হয়েছে, এইসব মাদ্রাসায় জন্ম নিচ্ছে মূর্খ মৌলবাদীর দল। এরাই ওয়াজ করছে, এরাই আজ মসজিদের ইমাম, এরাই আজ সমাজ শাসন করছে। এরাই আজ মূলত ক্ষমতায়। এদের দাবিই সরকার মেটাচ্ছে। এদের খুশি করতেই মাদ্রাসার ডিগ্রিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য করা হয়েছে। এরাই বলে বিজ্ঞানের থিওরি এসেছে কোরান থেকে। এই ভুল শুধরে দিলে কারাগারে যেতে হয়। ধর্ম অবমাননার মামলা হয় দেশে, বিজ্ঞান অবমাননার মামলা হয় না। ধর্মকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞানীদের, বিজ্ঞান শিক্ষকদের, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা দেশে নেই।
আমার আশংকা হৃদয় মণ্ডল এখন আর আগের মতো তাঁর ছাত্রদের বলতে পারবেন না যে কোরানের কোনও প্রমাণ নেই। হয়তো তাঁকে বাঁচার জন্য বলতে হবে, কোরানই বিজ্ঞান, বিজ্ঞানই কোরান। তা না হলে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশের মতো কোরানপ্রেমীদের দেশে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
দুঃখ হয়, একাত্তর সালে অতুল সম্ভাবনা নিয়ে জন্ম হওয়া দেশটি কী করে এত দ্রুত অজ্ঞানতার অন্ধকারে তলিয়ে গেল। লক্ষ কোটি হৃদয় এখন ধর্মের শেকলে বন্দি, এই হৃদয়ের মুক্তি চাই। যুক্তিবুদ্ধি এখন কারাগারে, যুক্তিবুদ্ধির মুক্তি চাই।