Home সাহিত্য ও বিনোদন গল্প: ১৮ নং বিসিসি রোড

গল্প: ১৮ নং বিসিসি রোড

105

পলাশ কলি হোসেন শোভা: সময়টা দেশ স্বাধীনের কয়েক মাস পর। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। এরপর মাস তিনেক নরসিংদীতে আব্বার চাকরির সুবাদে, পরে ঢাকায় চলে আসি। আমার আব্বা ঢাকা মুসলিম গভমেন্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা করে তারপর কলকাতায় পড়াশোনা করেন। বলতে গেলে আমরা সব ভাইবোন ঢাকাতেই জন্মেছি।

পুরানো ঢাকার ঠাটারিবাজারের ১৮ নং বিসিসি রোডে আমরা এসে উঠি। জীবনেও এমন বাসায় থাকিনি। সব কিছুই অদ্ভুত। এখানে বাসা নেয়ার আব্বার যুক্তি ছিলো আমরা অনেক গুলো ভাইবোন দেশের পরিস্থিতি বুঝে জনবসতি বেশী এমন জায়গায় থাকা। রাস্তাটা খুব বেশী চওড়া না হলেও ট্রাক গাড়ি সব ই চলতে পারে। রাস্তার উপরেই সদর দরজা কোন বাউন্ডারি নেই। সব গুলো বাড়ি একই কিসিমের ইকটু বারান্দা, ওখানে দাড়িয়ে দরজায় কড়া নাড়ো। খুলে দিলেই বসবার রুম। মনে হয় অনেক আগে হিন্দুদের বাড়ি ছিলো। আমাদের বাড়িওয়ালি ছিলেন শেরেবাংলা এ,কে ফজলুর হক এর ভাগ্নি। অসাধারণ ভালো বিধবা মহিলা।


এই ১৮ নং বিসিসি রোডের বাড়িতে আমরা এক বছরের ও বেশি ছিলাম খুব আনন্দে। আমাদের বাসার রাস্তায় ওপাশে থাকেতো রুবেলরা ( পরে নায়ক হয়েছিলো)। ওরা অনেকগুলো ভাই আর এক বোন (অভিনেত্রী তানিয়ার মা) ।
বিকেল হলেই ভোঁদৌড় ছাদে। চারপাশের দূরের বাড়ি গুলি মনে হতো একটার সাথে একটা লেগে আছে। বিকেলের চা বানানোটা আমার কপালেই থাকতো। আমি নাকি চা ভালো বানাই, তাই কাজের লোক থাকা সত্বেও আমিই চায়ের ইঞ্জিনিয়ার। প্রতি শনিবার দাদা আর মেজদি হোস্টেল থেকে আসতো, দুজনেই ঢাকা মেডিকেলে পড়তো। দাদা ডাঃ হয়ে গেছে। আর তাই চার বোন দুই ভাইয়ের জম্পেশ আড্ডা হতো। বড় বোনের বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিলো, আমার ৬/৭ বছর বয়সে। আমরা ভাই বোনরা এতটাই ফ্রী সবাই সব কথা শেয়ার করতাম, তা এখনও বজায় আছে।

কয়েকটা বাসা পরে নতুন বন্ধু পারুলদের বাসা, ( ওরে এখনও খুঁজে মরি শুনেছি নিউইয়র্ক থাকে) হদিস পাচ্ছি না। পিছনের দিকে পারভীনদের একতালা বাড়ি। আরও নতুন বন্ধু হয়েছে আমার বনগ্রামে শেলী যুগী নগরে নীলু, আমরা তখন প্রতি দিনই এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি। ডুপ্লেক্স বাডি প্রায় সব গুলো। উপরে ভাই বোনরা থাকতাম বলে পড়ার চেয়ে আড্ডা বেশী হলেও পরীক্ষার রেজাল্ট খুব ভালো থাকতো। শুধু আমি সারা বছর সারা ক্লাসে অংকে ডাব্বা মারতাম। কখনো অংকে পাশ করতে পারতাম না। অংক কোন ভাবেই মাথায় ঢোকে না। আজও একই পরিনতি।
ইকটু রাত হলেই ছাদে গিয়ে এক্সেসাইজ করতাম। অন্ধকার কেউ দেখবে না। অথচ কেউ যে আমাকে দেখছে তা জানতে পারি বেশ কিছু দিন পর। বিকেলে ছাদে হাটছি। অনেকেরই আমাদের ছাদের দিকে নজর কারণ? কারণ আর কিছুই নয় এলাকায় নতুন ভাড়াটিয়া কারা? জানার আগ্রহ ।
হঠাৎ রাস্তার ওপারের বাসার ছাদে খুবই হ্যান্ডসাম একটা ছেলে জিগ্যেস করলো, এ্যাই তোমার নাম কি?
ছেলেটি প্রায় সময় আমি বারান্দায় গেলে সেও এসে দাড়ায় কোন কথা বলে না।
সেই ছেলেটাই তো! বললাম ,
শোভা, তোমার নাম কি?
নেহাল।জীবনেও এমন নাম শুনিনি।
তুমি যে এক্সেসাইজ করো অনেক ভুল হয়
মানে?তুমি কেমনে জানো? ( সহজে কাউকে আপনি আসেনা)
আমি তো রোজ দেখি
আমি তো তোমাকে দেখি না। আমি শুয়ে থাকি তাই দেখো না।
দূর শুয়ে থাকলে কিভাবে দেখো? ওয়ালটা তো নিচু তাই দেখা যায়
ওওওওহ
আমার বন্ধু হবা?
নাহ
কেন?
ঐ বয়সে ক্লাস এইটে পড়ি বন্ধু মানে ভালো কিছু নয় মনে হতো প্রেম। তাই, না বলেদেই
না কেন করছো? কারন বলো?
একটা ছেলে আর একটা মেয়ের কখনো বন্ধু হয় না
হয়, হবে আমাদের। হও বন্ধু হও
হতে পারি শর্ত আছে
কি শর্ত? আমি রাজী বলো?
সারাজীবন বন্ধু থাকবো। একটা ছেলে আর মেয়ে যে বন্ধু হতে পারে তা সবাই দেখবে। প্রেম করা যাবে না।
নেহাল খুব হাসলো বললো, আরে তুমি তো সুন্দরী নও যে প্রেমে পড়বো। তোমাকে আমার বন্ধু মনে হয় তাই।

সেই থেকে আমাদের বন্ধুত্ব, এটা দুবাড়ির সবাই জানলো, ভাইয়া ( নায়ক সোহেলরানা) অনেক আদর করতো, আমি খুব সাজতাম আমি সাজার ভুল ধরিয়ে দিয়ে বলতো, এটা এভাবে দিবি তোর ব্লাসন ঠিক হয়নি। আরও কত কি বলতো ভাইয়া। তখন উনি মাসুদ রানার শুটিং করছেন।
অনেক রাত ছবির গান গাইতেন বারান্দায় দাড়িয়ে, কতদিন ভাবতাম কিসের গান কোন ছবির? শুনিনি তো আগে। নেহালই বললো মাসুদ রানার গান।
আমার বন্ধু নেহাল আজও আমরা বন্ধু যদিও ও এখন আমিরিকায় থাকে। হঠাৎ কল দিয়ে খবর নেয়। বন্ধু আমরা আজও।
ঢাকা কলেজে ইন্টার পড়ার সময় পলিটিক্সএ জড়িয়ে পড়ে ভাইয়া তখন ওকে জার্মানীতে পাঠিয়ে দেয় পলিটিকাল শেল্টারে। চলে যাবার দিন পুরান এয়ারপোর্টে সবার সাথে আমিও গেছি আর ছিলো রুবেলের বন্ধু আমারও কাছের মানুষ মালেক ভাই ( মানিক যার সাথে আমার সাত বছরের প্রেমের পর বিয়ে হয়।) এত কেঁদেছিলাম বলার নয়। সবাই শান্তনা দিচ্ছিলো। মানিকও বোঝাচ্ছিলো। কেন কাঁদলাম? বন্ধুর জন্য বন্ধুর কান্না
তারপর………


তারপর? আরও অনেক গল্প রয়ে গেছে ১৮ নং বাড়িটার। ছোটবোন শিমুল কলি হোসেন প্রভা, আমার তিন বছরের ছোট কিন্তু অনেক শান্ত। আমার মত চঞ্চল না। প্রায়ই দুজনের ঝগড়া লেগে যেতো। বিষয় আর কিছুই না, বন্ধু নিয়ে। আমার কোন বন্ধু কে পচা বললে,আমিও বলতাম চেঁচামেচি এমন পর্যায়ে যেতো যে সেজদি ( কুসুম কলি হোসেন রেবা) থামাতে পারতো না। আম্মা নীচ থেকে উঠে এসে বলতেন,কি হইছে তোমাদের?
দুজনেই একসাথে বলতাম আমার বন্ধু কে পচা বলছে প্রভা প্রথমে আমারে বলছে
আম্মা খুব একটা রাগতেন না, বললেন,
থো ফালায়া বন্ধু । কোথাকার বন্ধুদের লাইগা বোনে বোনে ঝগড়া করে মাইনষে শুনলে কি কইবো? থামো।
দুজনেই চুপ। কয়েকঘন্টা কথা বন্ধ । আবার ভুলে যেতাম সব।।
আব্বা আমাদের বেশি ভালো বাসতেন।পাঁচ টা মেয়ে ওনার। খুব আদর করে আমাদের বড় করেছেন। জীবনে কখনো কোন মেয়েকে তুই করে কথা বলেন নি।
অনেক ছোট বেলার একটা গল্প আছে আমার, ” তুই ” করে মা বাবা কখনো বলতেন না। আব্বার জ্বর হয়েছে আমাকে বললো যাও ডাঃ চাচার থেকে ঔষধ নিয়ে আসো, কয়েকটা বাসা পর ওনার বাসা। আমি গেছি। আমাকে দেখেই উনি বললেন,কিরে, কেন আসছিস? তোর আব্বা কেমন আছে? আমি আর ইকটুও দাড়াইনি চলে আসছি উনি সমানে ডেকে চলেছেন। আব্বা বললেন,ঔষধ দেয়নি?
না আমি বলিনি,
কেন?
আমাকে তুই করে বলছে।
আব্বা খুব জোরে হো হো করে হাসলেন। থাক আর যেও না।
বিকলে চাচা এলে আব্বা আমার চলে আসার কারণ বলাতে উনি খুব অবাক হয়েছিলেন। আমাকে ডেকে আদর করে বললেন, মা ভুল হইছে আমার।
আমার নামের সাথে একটা লেবেল জড়ানো আছে, তাহলো ঘুমের রানী। এত ঘুম আমার যে বলার নয়। ঘুম নিয়ে অনেক গল্প আছে আমার। বন্ধু দের বাচ্চা ইকটু বেশী ঘুমালেই বলবে, জানোস একদম তোর মত হইছে খালি ঘুমায়। ঘুম মানে শোভা। আমি বিয়ের আগে মানিক কে একটা শর্তই দিয়েছিলাম। ঘুমালে ডাকা যাবে না। আজও তা বহাল আছে। কখনোই ডাকে না। আল্লাহ বাঁচাইছে আমারে।
ওওহ্ ঠাটারিবাজারের ১৮ নং বাসায় এক শনিবার আব্বা বললেন,আগামীকাল ছুটির দিন, ( রবিবার হলি ডে) তোমাদের জন্য প্রতিযোগিতা কে কতক্ষণ ঘুমাতে পারো। দাদাও অনেক ঘুমাতে পারে। সবাই রাতে ঘুমিয়ে গেছি, পরদিন আব্বা এসে ডাকছে, শোভো উঠো, উঠো তুমিই ফাস্ট হইছো, চোখ মেলে দেখি সবাই হাসছে আর দুপুর একটা বাজে।হাসি আনন্দে দিন কাটে আমাদের।

রাস্তার ওপারে নেহালদের বাসায় সব সময় কিছু নাকিছু  ঘটনা ঘটেই যায় আর তা আমাদের হাসির যোগাড় দিতো। প্রতিদিন  ও বাড়িতে ঠিক এগারোটার দিকে একটা লোক আসতো ভাইয়ার স্টাফ। দরজায় কড়া নাড়তো খুব  জোরে জোরে টাইমলি এই আসাটাকে আমরা বলতাম “রুটিন মাফিক “।গুলজার বলে একজন আসতো ফিল্মের এসেই রাস্তার উপর দরজা, চিৎকার করে বলতো, ওই দরজা খোল। ওনাকে দেখলেই বলতাম দরজা খোল আসছে। আপা ( তানিয়ার মা)  ইউনিভার্সিটিতে  বাংলায় এম এ পড়তেন, তানিয়া  আর রানা আমাদের বাসায় অনেকটা সময় থাকতো খুব  ছোট  ছিলো ওরা। ফুটবল খেলতো রুবেল তাই বাসায় খুব  একটা থাকতো না মিশনে চলে যেতো খেলতে। আমার সাথে অনেক গল্প  হতো, দুষ্টামী মারামারি ওর সাথে সমানে চলতো, পরবর্তী সময়ে রুবু আমার ই বন্ধু  হাসির ছোট বোন নীলার সাথে ( আমরা বুড়ি বলে ডাকতাম)  প্রেম হয়, বিয়ে করে। নীলা প্রভার বন্ধু  ছিলো। কোন কিছু  খাচ্ছি  নেহাল বলতো ( নেহাল তখনও জার্মানী যায়নি) কি খাস? যেটাই বলতাম, বলতো দে ঢিল মারতাম কখনো লিচু, কখনো পিঠা কখনো আম।ঢিল মিস হলেই রাস্তায় পথচারীর গায়ে, হাবা হয়ে  যেতাম, উপরের দিকে তাকিয়ে দেখতো কে মারছে, খুঁজে  না পেয়ে কি পরছে তা দেখে অখুশি  হতো না। আম পড়লে খবর ছিলো, পাকা আম ফটাশ। আমি আর নেহাল এমন ভাব করতাম যেন আমরা কিছুই জানিনা, কথা বলছি। এই সবের সাক্ষী  ছিলো পটলা বলে একটা লোক। সারাক্ষণ  রাস্তার পাশে বসে থাকতো আর একবার এদিক একবার ওদিক তাকাতো। নেহাল তাকে সব সময় সমীহ করতো। বাজারের কাছেই বাসা ছিলো আর পটলা ঐ খানেই বসে থাকতো। একদিন দেখি সে চিৎকার করছে, মাটিতে রীতিমতো  গড়াগড়ি  পেটের ব্যথায়। দাদাকে বললাম, দাদা পটলা ব্যথায় গড়াগড়ি দিচ্ছে । দাদা বারান্দায়  এসেই রোগ ধরে ফেলে আলীকে  বললো (আলী আমাদের গৃহকর্মে সাহায্য কারী)  মুড়ি কিনে দাও খেয়ে পানি খেতে  বলো, আধঘন্টা  পর সে সুস্থ । সেই থেকে আমাদের বাড়ির প্রতি তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আর…….. 

আমার ছোট বেলার কথা এত মনে আছে কিভবে? এই প্রশ্ন অনেকেরই। আর অনেক ছেলেবেলার কথা সব মনে আছে। চার বছর বয়স থেকে স্মৃতি তে সব স্টোর হয়ে আছে। ভাইবোনরা কোন কিছু মনে করতে না পরলে বলবে শোভারে জিগা ও জানে। তাই মনে হয় ঠাটারিবাজারের যাপিত জীবনের গল্প গুলো অনায়াসে বলতে পারছি। যদিও ধারাবাহিকতা ব্রেক হচ্ছে ।
একটা জিনিস খেয়াল করতে লাগলাম আমাদের পড়ার রুম এর জানালা দিয়ে বেশ কয়েকটা বাড়ি পর একটা বাড়ি ছিলো ওদের দোতালা উঠবার সিড়ি টা খোলা ছিলো। বৃষ্টি আসলে ভিজে উপরে উঠতে হতো। সব সময় দেখি একটা ছেলে সিড়ি কয়েকটা উঠেই আমাদের জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতো। দেখতে কেমন?এক্কেবরে নায়ক ফারুক এর মতন। আমিও উৎসুক হয়ে দেখতাম, সেজদিকে বললাম, সেজদি দেখে বললো থাক তোমার তাকানোর কাজ নাই ।
ঐ বয়সে কিউরিওসিটি বলে একটা কথা। বিষয়টা নেহাল কে বললাম। ওদের ঘর থেকে দেখতে পায়না কিন্তু ছেলেটার সাথে ওর বন্ধুত্ব আছে। দল বেধে স্কুলে যেতাম। পাড়ার অনেক গুলো মেয়ে, সবাই আমরা বন্ধু । একজন আয়া আমাদের গাইড করে নিয়ে যেতো মাসিক বেতনের ভিওিতে। তখনকার সময় ভদ্র ঘরের মেয়েদের এভাবেই বাইরে পাঠানো হতো। ছোট বেলা থেকেই আমরা এভাবে স্কুলে যেতাম। আমি পারুল প্রভা, দুটা প্রভা ছিলো। আমার ছোট বোন আর পারুলের বড় বোন। পারভীন তাপসী আরও দুটা মেয়ে যেতো। ঐ আয়ার কারনে রাস্তার ছেলেরা কোন কমেন্ট করতে পারতো না এখন যাকে বলা হয় ইভটিজিং।
পারুল জানতো ঐ ছেলেটার কথা ওদের বাসার বিপরীতেই থাকতো। প্রতিদিন স্কুলে যাবার টাইমে দরজা খুলে বসে থাকতো। পারুল খোচা মেরে ইশারা করতো দ্যাখ,আসা যাওয়ার পথের ধারে এমনই হতো। কিন্তু কখনো কোনদিন একটা কথাও বলেনি। কত বিকেলে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পারুলদের বাসায় গেছি কেউ কিছু বলতো না। আসলে তখনকার সময় ছেলেমেয়েরা অনেক সভ্য ছিলো। প্রেম প্রীতি বা একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করা ছিলো অন্যায় । অনায়াসে এবাড়ি ওবাড়ি যাওয়া যেতো।
একদিন স্কুল থেকে আসছি কতগুলো ছেলে কি যেন বললো ছোট বোন প্রভা বললো,” আবার তোরা মানুষ হ “। আমরা খুব জোরে হেসেছিলাম আর আয়া দিলো বকা চুপ রাস্তায় হাসাহাসি করবা না, বাড়িত যাইয়া লও।
বৃষ্টি হলে তো স্কুল থেকে আসতে সবচেয়ে মজা। ভিজতে কি যে মজা কেডস এর চৌদ্দ টা বাজতো। ছাতির নিচে কেউ থাকতাম না। হঠাৎ প্রভা রিকশা ওয়ালাকে বললো যাবেন?
কয়জন যাইবেন?
তিনজন
বারো আনা
একজন যাবো চার আনা দিবো যাবেন?
এমনি ও উপস্থিত কথা বলতে পারতো। আমি আবার গাধা কিসিমের অতশত পারিনা ।
১৮ নং বাড়িতে খুব সুন্দর সময় গুলো কাটছিলো। এক ঈদের দিন বিকেলে পারভীন দের বাসায় আমরা সব বন্ধু রা এক হইছি। ওদের বাসাটা একতালা। আমাদের বারান্দা থেকে পুরা ছাদ দেখা যায়। ছাদে সবাই উঠছি দারুন এক্সাইটেড কারণ? কারণ আর কিছুই না বন্ধু রা মিলে সিগারেট খাবো। জীবনে প্রথম। পারভীন কিভাবে যেন যোগাড় করছে একটা, মানুষ হচ্ছি ছয়জন। প্রথম হাতে নিয়ে দেখলাম। এইটা কি? সিগারেট এমন হয় নাকি? কফি কালার নাম ” মোর ” জীবনেও জানিনা এমন সিগারেট আছে। দে টান, কে প্রথম টান মারছে জানিনা তবে কাশি শুরু হয়ে গেছে। যে টানে সেই কাশে। আমার অবস্থা আরো খারাপ।
কাশতে কাশতে শেষ । নিচ থেকে পানি এনে খাওয়ানো হলো। সিগারেট শেষ করা চাই। কেউ ফেলে দিলো না। আর এই পুরা বিষয় টা দাদা বারান্দা থেকে দেখছে আমরা তো জানিই না। চুপ করে উনি আমাদের অবস্থা দেখেন। সন্ধ্যায় বাসায় আসতেই বললো, কেমন লাগলো সিগারেট?
তুমি দেখছো? কেমনে?
দেখলাম তে, হইছে তো খাওয়া? আর খেয়ো না।
আর জীবনে ও খাইনি মানিক সিগারেট খেতো অনেক সময় বলতো খাবা নাকি?
আরে নাহ!
দাদা আমদের বড় ভাই হলেও বন্ধুর মত ছিলো,এখনও তাই। ফোন দিলে ঘন্টা পার হয়ে যায় কথা শেষ করতে। আরেকটা মজার কাহিনি আছে। এখন বলবো? নাহ্ থাক আগামী তে বলবো সেই মজার গল্প টা আসলে এসব তো জীবনে ঘটে যাওয়া মুহূর্ত । এখন যা গল্পের মত মনে হয়। হয় না কি?……..

লেখক : অধ‍্যাপক (অব) মীরপুর গার্লস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা।