Home রাজনীতি খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দেয়া অমানবিক

খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দেয়া অমানবিক

36

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। এমতাবস্থায়, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে জেডআরএফ। ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার শনিবার (২৭ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি চরম নিষ্ঠুর ও অমানবিক আচরণ করছে। তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। যার প্রমাণ তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি না দেয়া। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার মেডিকেল বোর্ড বার বার পরামর্শ দিচ্ছেন। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একাধিক আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের নেতাকর্মীরা চরম আশঙ্কা ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, সরকার বার বার আইনের দোহাই দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। অথচ মানবতার কাছে আইন কোনো বিষয় নয়। সিনিয়র আইনজীবীদের মতে- প্রচলিত আইনেই খালেদা জিয়াকে মুক্তির বিষয়ে সরকারকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমরা সরকারের এহেন অগণতান্ত্রিক ও বেআইনী সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বিবৃতিতে বলা হয়- খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির চেয়ারপারসন নন, তিনি বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তিনি। বর্তমান সরকার মহামারী করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানবিক বিবেচনায় নিয়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারতো। এ কথা মনে রাখতে হবে যে, বেগম খালেদা জিয়া কোনো সাধারণ নারী নন। তার স্বামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক সেনাপ্রধান। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি তার ছোটো ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তার বড় ছেলে দেশনায়ক তারেক রহমানও নির্বাসনে। তাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে খালেদা জিয়ার হাত ধরেই। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেয়াটা সত্যিই বেদনাদায়ক, অমানবিক ও নজিরবিহীন ঘটনা।
ডা. ডোনার বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার সহ এদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। ১৯৯১ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসে তিনি দেশের নাজুক অর্থনীতিকে কাঠামোগত নানা পরিবর্তন ও সংস্কারের মাধ্যমে চাঙ্গা করেছেন। অর্থনীতির উদারীকরণ ছাড়াও খালেদা জিয়ার আমলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার বিস্তারে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক ও উপবৃত্তি দেওয়ার যুগান্তকারী প্রকল্প তিনি সূচনা করেন।
জেডআরএফের বিবৃতিতে বলা হয়- বিশেষ বিবেচনায় অতীতে অনেক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা পাওয়ার নজির রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক ক্ষমা করার বিধান রয়েছে শুধু চরম মানবিক বিষয় বিবেচনার জন্য। শুধু তাই নয়, দÐ স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো নজিরবিহীন ঘটনা নয়। থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, পাকিস্তান সহ অনেক দেশে চিকিৎসার জন্য অনেক সাবেক রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের বেলায় এমনটি ঘটেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ৭ বছরের সাজা হলেও ২০১৯ সালে লাহোর হাইকোর্ট তাকে জামিন ও সাজা স্থগিত করে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ভারতের কংগ্রেস দলের নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছিলো। এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। এমতাবস্থায়, আমরা সরকারের প্রতি আহŸান জানাবো- খালেদা জিয়ার প্রতি মানবিক হোন। আমরা বিশ্বাস করি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিবে। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।