Home বাণিজ্য ও অর্থনীতি করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগ প্রয়োজন

করোনা-পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে উদ্যোগ প্রয়োজন

47

ডেস্করিপোর্ট: আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এটা স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম এবং বর্তমান সরকারের টানা ১৪তম এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি হবে চতুর্থ বাজেট। এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে তাতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এতে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে এটি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংকট পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে প্রধান্য দিয়ে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা করা হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

মূলত আমদানি-রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাতে চাঙ্গাভাব ফিরে আসা, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছর জনশক্তি রপ্তানিতে ৩৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় খুব শিগ্গিরই রেমিটেন্স প্রবাহেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৪২.৮১ শতাংশ ও জুলাই-জানুয়ারি সময়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার হার বেড়েছে ৫১ শতাংশেরও বেশি। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪৮ শতাংশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ২৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাকি সময়েও প্রধান দুই বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে বিশ্ববাজারে তেল ও খাদ্যপণ্যসহ পণ্যবাজার সার্বিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সামনের দিনগুলোতে উন্নয়ন ব্যয়সহ সরকারের সার্বিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আন্তর্জাতিক মূল্য পরিস্থিতিতে জ্বালানি, বিদু্যত্, ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি ও কাঁচামালও খাদ্যপণ্যের দাম সাহসাই কমবে—এমন ধারণা করার ভিত্তি নেই। পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্ট, গ্যাস, বিদু্যত্সহ বাংলাদেশে কিছু গৃহস্থালি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী রয়েছে, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। আবার ফেব্র‚য়ারিতে ঋণপ্রবৃদ্ধি কমে গেছে। বিদ্যমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে আগামী বছর বিনিয়োগ থেকে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আসবে বলে মনে হয় না। ভোক্তা ব্যয় বাড়ছে মূলত মূল্যস্ফীতির কারণে। তাই ভোক্তার প্রকৃত ব্যয় বাড়েনি। সরকারি ব্যয়ও খুব একটা বাড়েনি। রেমিটেন্স প্রবাহও আগের অর্থবছরের তুলনায় এবার কমে গেছে, যা ভোক্তার ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করছে।

তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হলেও ইউরোপের মন্দার ঝুঁকি রয়েছে, যা আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে। বর্তমানে টাকার মান কমানো হচ্ছে, আগামীদিনে টাকার আরো অবমূল্যায়ন প্রয়োজন হতে পারে, যা মূল্যস্ফীতি উসকে দেবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হলে জ্বালানি তেলের দাম কমবে। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে গেলেও সরকার দেশে দাম সমন্বয় করেনি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমবে, তার প্রভাব দেশের বাজারে পড়বে।

দেশে কোভিড সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের (এপ্রিল-মে ২০২০) সময়ে শিল্প উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। কিন্তু ঐ বছরের জুলাই থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায়। ২০২১ এর মে-জুলাই সময়ে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় শিল্প উৎপাদন কিছুটা স্তিমিত হলেও মহামারি পূর্ব সময়ের অবস্থার ওপরে ছিল। এখন ম্যানুফ্যাকচারিং খাত কোভিডের ক্ষতি সামলে নিয়ে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছে। এতে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পের উৎপাদন সূচকে উল্লেখযোগ্য উলম্ফন ঘটেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় জিডিপির প্রবৃদ্ধির ঊধ্বর্মুখী বর্তমান অর্থবছরে এবং আগামীদিনেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্ব জুড়ে যে মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে, তা ‘উদ্বেগজনক’। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দীর্ঘায়িত হলে এবং নতুন করে বিশ্বব্যাপী করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হলে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও শ্রমবাজার চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। চাহিদার দিক থেকে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালকগুলোর মধ্যে আমদানি-রপ্তানি, কৃষিঋণ বিতরণ ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিসহ সার্বিক ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি রয়েছে। বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেট সফল বাস্তবায়নের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিশেষ করে করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠে অর্থনীতি আগের অবস্থানে ফিরে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এর মাধ্যমেই অর্থনীতি চাঙ্গাভাব তৈরি হবে।-ইত্তেফাক