Home জাতীয় আস্থার প্রতীক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

আস্থার প্রতীক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

38

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের সাধারণ মানুষের চিকিত্সা সেবা পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। প্রাচীন এই হাসপাতালে রয়েছে তীব্র শয্যা সংকট। নেই পর্যাপ্ত জনবল। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতালটি সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠেছে। কারণ, দুর্ঘটনায় আহত/জখম, আগুনে দগ্ধ, জটিল ও দূরারোগ্যসহ নানা রোগে আক্রান্ত যেকোনো রোগী এই হাসপাতালে পৌঁছতে পারলে চিকিত্সা সেবা পাবেনই-এমনটা মনে করেন। আর তাই সারাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিদিন বহু রোগী ছুটে আসেন এই হাসপাতালে।

যে জনবল রয়েছে, সেই জনবল দিয়েই দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দেন প্রতিষ্ঠানটির চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোও অনেক রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। চিকিৎসার জন্য আসা কোনো রোগীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ফেরত পাঠায় না। বেডে না হোক, ফ্লোরে, ওয়ার্ডের বারান্দায়, সিঁড়ির নিচে, হাসপাতাল-২ এর সংযোগকারী ফুটওভার ব্রিজের মাঝামাঝি ও বাথরুমের বারান্দায় হলেও ঠাঁই হয়। তবে যেখানেই রোগীরা থাকুক না কেন তাদের সুচিকিত্সা নিশ্চিত করা হয়। করোনার ভয়াবহ থাবার সময় কোভিড ও নন- কোভিড রোগীদের সমানতালে চিকিত্সা সেবা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এই হাসপাতাল। ওই সময় কোভিডের জন্য নন- কোভিড রোগীদের চিকিত্সা সেবায় কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। গতকাল শনিবার ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও রোগী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে চিকিত্সা সেবা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব প্রায় ২৫ একর জমিতে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এসবের মধ্যে রয়েছে কলেজ ভবন, মিলনায়তন, পরমাণু চিকিত্সা কেন্দ্র, ছাত্র ও ছাত্রী হোস্টেল, বার্ন ইউনিট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। ১৯৪৬ সালের ১০ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ চালু হয়। ১৯৫৫ সালে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কলেজ ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৭৫ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পৃথক করা হয়। কলেজের দায়িত্ব ন্যস্ত হয় অধ্যক্ষের ওপর, হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ হয় পরিচালকের ওপর। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঐহিতহাসিক ভূমিকা পালন করা প্রতিষ্ঠানটি ধনী-গরীব সবারই আস্থা অর্জন করেছে। চাহিদার ৯৫ ভাগ ওষুধই রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আগত রোগীদের মধ্যে ৯০ ভাগই দরিদ্র-যাদের বাইরে চিকিত্সা ব্যয় বহন করা সম্ভব না।

গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের মনোগ্রামের বাসিন্দা পান্থ মন্ডল (২৪) পেশায় মুদি দোকানদার। সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা পেয়ে আমি সুস্থ। কোনো খরচ লাগেনি। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা আনছার সদস্য ইমাম হোসেন (৩৩)। তার ব্রেন টিউমার হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন করার পর তিনি এখন সুস্থ। বাইরে এই অপারেশন করার ব্যয় বহন করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। স্কুল ছাত্র জনি (১৫) গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড়ে ব্যথা পেয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা সুজন (৩৫) পেশায় রাজমিস্ত্রী। দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, কত জায়গায় গেছি, সঠিক চিকিত্সা সেবা পাইনি। শেষমেষ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা সেবা পেয়ে সুস্থ হয়েছি।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, আমাদের জনবলের তীব্র সংকট রয়েছে। তারপরেও বিরামহীনভাবে চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। দেশের সাধারণ মানুষের চিকিত্সা সেবা পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল এটি। সেই আস্থা ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই জনবল দিয়ে সর্বোচ্চ চিকিত্সা সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আরো ৫ হাজার বেডের একটি হাসপাতাল তৈরি করার কার্যক্রম চলছে। এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলে জনবলসহ অবকাঠামো বৃদ্ধি পাবে। রোগীদের শয্যা পেতে কোনো সমস্যা থাকবে না। রোগীরা বিনামূল্যে পাবেন অত্যাধুনিক চিকিত্সা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম বলেন, করোনার ভয়াল থাবার মধ্যেও একাই ছাতার নিচে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিত্সা সেবার ব্যবস্থা করেছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ওই সময় দিনে দুই সহস্রাধিক নন- কোভিড রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। একই সঙ্গে কোভিড রোগী ৯০০ থেকে এক হাজার ভর্তি ছিল। সীমিত জনবল দিয়ে এতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে করোনার প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও আছে। আট লক্ষাধিক মানুষের করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। করোনার সময় ডাবলের চেয়ে বেশি জনবল থাকার কথা ছিল। কিন্তু জনবল বাড়েনি।-ইত্তেফাক