ডেস্ক রিপোর্ট: ‘ইসলাম বিলাসিতা সমর্থন করে না। খাঁটি ইমানদার বিলাসিতা ভোগ করবেন পরকালে, বেহেশতে’-এই আদর্শে বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট পলাতক আব্দুল রশিদ দোস্তামের বিলাসবহুল ‘কাবুল ম্যানশন’ও দখলে নিয়েছে তালেবান। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ের দিকেই সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে যান দোস্তাম। সে সময়ই মাজার-ই-শরিফে থাকা দোস্তামের আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ির দখল নেয় তালেবান। আর এবার শেরপুরপাড়ার ‘কাবুল ম্যানশন’। আফগান নেতাদের এমন অনেক বাড়িই এখন তালেবানদের কব্জায়। সবগুলোর খবর না পাওয়া গেলেও কাবুল ম্যানসনে তালেবানদের এ নতুন আস্তানায় তালেবান রাজত্বের দৃশ্যগুলো ক্যামেরবন্দি করেছে এএফপি। ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বন্দুক হাতে তালেবান যোদ্ধারা স্বর্র্ণ-কারুকাজখচিত আসবাবপত্রে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। নরম সোফায় বসে একে অপরের সেলফি তুলছেন। কেউ আবার প্রাসাদের দেয়াল চিত্র, গঠনশিল্পের নান্দনিক কারুকার্য দেখে অভিভূত। পুলের পাশের মনোরম বাগানে গোল হয়ে আড্ডায় মজেছে এক দল। যোদ্ধাদের প্রায় দেড়শ সদস্যের একটি দল বর্তমানে এই ‘রাজবাড়ি’ দেখভাল করছেন। আদর্শ ও শরিয়া বর্জিত তালেবানদের এমন জীবনাচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তালেবানের চার প্রদেশের সামরিক কমান্ডার বলেন, তার লোকেরা বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত হবে না। তালেবানরা কখনো এই ধরনের ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশে বাস করবে না।’ কাবুল ম্যানশনের নেতৃত্বে থাকা কারি সালাহউদ্দিন আইয়ুবি নতুন শাসনামলের সবচেয়ে ক্ষমতাধর কমান্ডারদের একজন। দলের মতাদর্শ সম্পর্কে এএফপিকে তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম কখনোই চায় না আমরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করি, প্রকৃত মুসলমানদের বিলাসিতা হবে মৃত্যুর পরের জীবনে।’

বিলাসবহুল কার্পেটে মোড়ানো বাড়িটিতে রয়েছে মূল্যবান অসংখ্য ঝাড়বাতি। অন্দরমহলে রয়েছে সাতটি সুইমিং পুল, রয়েছে কয়েকশ বর্গমিটারের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গ্রিনহাউজ। দখলের পর বাড়িটিতে অবস্থান নেওয়া তালেবানরা বলছে, বছরের পর বছর দুর্নীতির আয়ে দোস্তামের এই বিলাসিতা নিন্দনীয়। এক কথায় তালেবানের দখলকৃত দোস্তামের দুটি প্রাসাদই সাধারণ আফগানদের কাছে অকল্পনীয়। আপেল-সবুজ বর্ণের গালিচা বিছানো অন্তহীন করিডোর। জলকেলি খেলায় মগ্ন রয়েছে একটি পুলে বসবাসরত বিশাল বিশাল দৃষ্টিনন্দন মাছগুলো। কাচের বিশাল ঝাড়বাতিগুলো ঝুলছে গুহার ঘরগুলোতে। তুলতুলে বিশালাকারের সোফাগুলো লাউঞ্জে জ্বলজ্বল করছে গোলকধাঁধার মতো। সুইমিং পুলটি সাজানো হয়েছে ফিরোজা রঙের সুদৃশ্য টাইলস দিয়ে। পাশেই রয়েছে তুর্কি স্টিমিং সিস্টেমসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামসমৃদ্ধ জিম। মাজার-ই-শরিফের মতো এই প্রাসাদও এখন তালেবানদের বাসস্থান।

প্রাক্তন যুদ্ধবাজ, কমিউনিস্ট কমান্ডার আব্দুল রশিদ দোস্তামকে চরম শত্রু মনে করে তালেবান। ৩০ বছর ধরে কট্টরপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন এই নেতা। তালেবান কর্তৃক মাজার-ই-শরিফ পতনের পর উজবেকিস্তানে পালিয়ে যান ৬৭ বছর বয়সি মিলিশিয়া নেতা দোস্তাম। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনৈতিক দল জুনবিশ-ই মিলি এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০২০ সালে তাকে ‘আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ’ পদমর্যাদায় ভূষিত করে ঘানি সরকার। নির্মম সামরিক আগ্রাসনেরও কুখ্যাতি আছে। তিনি ট্যাংকের চাকার নিচে বন্দিদের পিষে মারার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। ২০০১ সালে তার বিরুদ্ধে দুই হাজারের বেশি তালেবান যোদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, দোস্তাম সেই নেতা, যিনি মরুভূমির মাঝখানে একটি পরিত্যক্ত ধাতব জাহাজের ওপর বন্দিদের প্রখর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।-যুগান্তর