রোজার আগেই নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

যুগবার্তা ডেস্কঃ রোজা আসতে এখনো প্রায় এক মাস বাকি। এর মধ্যেই লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। বাড়তি দামের হাত থেকে রক্ষা পেতে রোজা শুরু হওয়ার আগেই নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য কিনে রাখছেন। সব থেকে বেশি দাম বাড়ার তালিকায় ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে রসুন। দেশি-বিদেশি সব ধরনের রসুনেরই অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজের। কাঁচা সবজির দামও কিছুটা বাড়তি।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে তারই প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিটি বাজারেই সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে পেঁয়াজ-রসুনের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজির দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে দাম বাড়ার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
যাত্রাবাড়ী, দয়াগঞ্জ, কারওয়ানবাজার, হাতিরপুল, মতিঝিল, কমলাপুর, খিলগাঁও, শান্তিবাগ ও মালিবাগের কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি আমদানি করা মোটা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা থেকে ২৯০ টাকায়। গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) যা ছিল ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা।
অপরদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি রসুনের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা থকে ১৬০ টাকায়। আর এক কোয়ার রসুন ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২২০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। দেশি পেঁয়াজ বাজার ও মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়। যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৩৫ থকে ৪০ টাকা। ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৬ টাকা। পাইকারি দোকানে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়, যা বৃহস্পতিবার ছিল ৫০ টাকা। আর খুচরা দোকানে প্রতিকেজি চিনি বিকি হচ্ছে ৫৮ টাকা দরে।
পাইকারিতে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকায়, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। খুচরা বাজারে ছোলার কেজি ৯০ টাকা ছুঁয়েছে। ব্রয়লার মুরগি (সাদা) প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়। আর ফার্মের লাল মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা ২০০ টাকায়।
বেড়েছে শাক-সবজির দামও। প্রতিকেজি পাকা টমেটোর দাম ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকায় পৌঁছেছে। বরবটি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায়, ঝিঙা ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, করলা ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকায়, বেগুন ২০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে গোল আলু, সয়াবিন তেল, আটা, চাল, মাছের দাম স্থির রয়েছে। প্রতিকেজি গোল আলু ২০ থেকে ২৪ টাকায়, খোলা সয়াবিল তেল ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা, আটা ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৪৪ টাকা থেকে ৪৮ টাকা, নাজির শাল চাল ৪৪ টাকা থেকে ৫২ টাকা, আটাশ চাল ৩৪ টাকা থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঠিক কি কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না পাইকারি ও খুচরা কোনো পর্যায়ের বিক্রেতাদের কাছ থেকে। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে পণ্য কিনে আনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে বেশি দামে। মূলত রোজার কারণেই পণ্যের দামের এ বাড়তি প্রবণতা। ইতোমধ্যে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে, তার সবকটি রোজার সময় বেশি ব্যবহৃত হয়।
যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়ক-সংলগ্ন পাইকারি মার্কেটের দোকানি মো. আলম ও মো. তারেক বলেন, আড়তের মহাজনের কাছ থেকে সব পণ্যই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। রসুন, ছোলা, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে, মহাজনরা বলছেন সরবরাহ কম। কিন্তু মহাজনকে বাড়তি টাকা দিয়ে চাহিদা মতো পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে, আড়তে কোনো পণ্যেরই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না।
যাত্রাবাড়ী আড়তে কথা হয় সাভারের ব্যাপারী মো. মনির হোসেন ও কবির হোসেনের সঙ্গে। তারা বলেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারে শাক-সবজির যে দামই থাকুক মূলত কৃষক প্রকৃত দাম পাচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকদের লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে।
পাইকারি ও খুচরা বাজারের পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারে আলতাফ হোসেন, সোহেল রানা ও মো. রেজাউল ব্যাপারী বলেন, পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কেনার সময় ব্যবসায়ীদের আড়তদারদের শতকরা ১০ টাকা কমিশন দিতে হয়। এর সঙ্গে গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচ যোগ করে তার ওপর শতকরা ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভ ধরে খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করেন।