যুদ্ধাপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি জোরালো হচ্ছে

যুগবার্তা ডেস্কঃ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর এখন তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের দাবি জানিয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার। মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়ে বর্তমান আইনে না থাকলেও তারা এক্ষেত্রে নুরেমবাগং ট্রায়ালের কথা বলছেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সাকা মুজাহিদের ফাঁসির পর প্রথম এই দাবি করেন।
এবিষয়ে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছি। মানবতাবিরোধীদের বিচারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের যাবতীয় সহায়-সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের হাতে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের দ্বারা যারা ক্ষতিগস্ত হয়েছেন, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন অনেক ক্ষতিগ্রস্তকেই চিনি, যারা এখনও ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হ”েছন। তাছাড়া এসব অপরাধীর সম্পদ মৌলবাদের অর্থনীতিকে আবারও সমৃদ্ধ করবে।
তাদের এই দাবি এখন জোড়ালো হ”েছ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের কারণে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারের একমাত্র উপাজর্নক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেক শহীদ পরিবারে অমানিশার অন্ধকার পর্যন্ত নামে। শহীদ পরিবারগুলো মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ একই সময়ে যুদ্ধাপরাধীরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এখন সরকারের উচিত তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে যেসব শহীদ পরিবারের প্রয়োজন রয়েছে, তাদের কল্যাণে এসব অর্থ ব্যয় করা। যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দলের সম্পদ বাজেয়াপ্ত না করলে তারা এসব অবৈধ অর্থ জঙ্গি অর্থায়নে ব্যয় করবে। রাষ্ট্রের উচিত তাদের সব সম্পদ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে দুই মানবতাবিরোধী অপরাধীর সাজা শেষ হয়ে যায়নি। এখন এ অপরাধীদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করে শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। তিনি বলেন, সাকা স্বাধীনতার পরও ৪৪ বছর বেঁচে ছিলেন। তার ফাঁসিই যথেষ্ট নয়, তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এ সম্পদ শহীদ পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। সাকা ছিলেন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এজেন্ট। সাকাকে বাঁচানোর জন্য সে দেশের কূটনীতিকরা মরিয়া হয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ করেছেন ও তাকে রক্ষার ষড়যন্ত্র করেছেন। একাত্তরে পাকিস্তানের সামরিক পরাজয় হয়েছিল। কিš‘ এবার সাকার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরাজয় হলো। সাকা মনে করেছিলেন তার হাত অনেক লম্বা। কিš‘ বাংলাদেশের আইন প্রমাণ করেছে, আইনের হাত তার চেয়েও অনেক লম্বা।
মানবতা বিরোধী অপরাধে চুড়ান্ত অভিযুক্তদের মধ্যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সবচেয়ে বেশি বিত্তশালী। তিনি পারিবারিকভাবেই দেশের প্রধান বিত্তশালীদের মধ্যে একজন। তবে ফাঁসি কার্যকর করা তিন জামায়াত নেতার যে সম্পত্তি রয়েছে তাতে বিত্তশালী বলা যায় না। কাদের মোল্লার সম্পত্তির মধ্যে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানাগেছে। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ফসলী জমি রয়েছে। আর কামারুজ্জামান মিরপুর সাংবাদিক পল্লীতে প্লট পেয়ে সেখানে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে পাঁচতলা বাড়ি করেছেন। এছাড়া আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের উত্তরা ১১ নং সেক্টরে রয়েছে ছয় তলা বাড়ি।
জানাগেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের শেষের দিকে ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর রাজউক থেকে প্লট বরাদ্দ পান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার বিশেষ বিবেচনায় তিনি এ প্লট পান। বর্তমানে সেখানে ডেভেলপার কোম্পানীর সহায়তায় ছয়তলা বাড়ি বানানো হয়েছে।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীরর পৈত্রিক বাড়ি গুডস হিলে একাত্তোরে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো বলে নির্যাতিতদের অভিযোগ রয়েছে। সেজন্য এই বাড়িকে একাত্তোরের চর্টার সেল হিসাবে চিহ্নিত করে তা রাষ্ট্রিয়ভাবে সংরক্ষনের দাবি উঠেছে।আমাদের সময়.কম