মমতা ব্যানাজীর আদলে দুর্গা মূর্তি

যুগবার্তা ডেস্কঃ দুর্গতিনাশিনী’ দেবী দুর্গা এবার কলকাতার এক পূজামণ্ডপে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‌্যােপাধ‌্যায়ের রূপ ধরে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চাকদহের প্রান্তিক ক্লাবের মণ্ডপে মঙ্গলবার সাড়ে পাঁচ ফুট দীর্ঘ মমতারূপী এই দুর্গা প্রতিমা উন্মোচনের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
প্রতিমাটি গড়েছেন নদিয়ার কৃষ্ণনগর ঘূর্ণির বাসিন্দা রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুবীর পাল। তার হাতের ছোঁয়ায় দশভূজা দেবীর মুখমণ্ডলই কেবল মমতারূপ পায়নি, পশ্চিমবঙ্গের দিদির মতই তার পরনে দেখা যাচ্ছে নীল পাড়ের সাদা শাড়ি।
এই দুর্গাপ্রতিমার হাতে মহিষাসুর বধের অস্ত্র দেওয়া হয়নি, বরং দুটি হাত দেখা যাচ্ছে নমস্কারের ভঙ্গিতে করজোড়ে, যেভাবে সভামঞ্চে মমতাকে দেখা যায়। আর দশ হাতে মমতারই উন্নয়নের জয়গান- কোনোটিতে জঙ্গলমহাল, কোনোটিতে দার্জিলিং পাহাড়ের জনজীবন; কোনো হাতে সেইফ ড্রাইভ- সেইভ লাইফের প্রচার; কোনোটিতে আবার সবুজসাথী ও কন্যাশ্রীর মত প্রকল্প।
‘দিদি’র পেছনে থাকা মানচিত্রে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ২৫ জেলার অবস্থান; মঞ্চে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মূখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ‘নবান্নের’ ছবি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, মাটি আর ফাইবার গ্লাসে এই প্রতিমা বানাতে খরচ পড়েছে প্রায় চার লাখ রুপি।
অবশ‌্য পূজা ঠিক রাখতে আলাদা একটি সনাতনী দুর্গা প্রতিমাও প্রান্তিক ক্লাব রেখেছে। পূজার সময় সেটি মমতামূর্তির সামনে রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে।
আয়োজকরা বলছেন, ভক্তরা যেন দুর্গা ও মুখ্যমন্ত্রী দুজনকেই সম্মান জানাতে পারে, সে ভাবনা থেকেই এ ব‌্যবস্থা।
“দুর্গাপ্রতিমার উচ্চতা থাকবে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট; এটি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে রাখা হবে,” বলেন প্রান্তিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র ভট্টাচার্য।
ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, দ্বিতীয়বার রাজ্যের ক্ষমতায় আসা তৃণমূলনেত্রী মমতা এবার দুর্গাপূজার শুরু থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা উদ্বোধন করে চলছেন। মহালয়ার দিন তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবে নিজের হাতে দেবী দুর্গার ‘তৃতীয় নয়ন’ এঁকেছেন।
পূজা উপলক্ষে গানও গেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী; সোমবার তার গাওয়া ‘পৃথিবী একটিই দেশ’ গানটি মুক্তি পেয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবানীপুরের একটি মণ্ডপেও মমতা বন্দ‌্যােপাধ‌্যায়ের ‘অবতার’ পাওয়া গেছে। তবে সেখানে তার স্থান দুর্গার পায়ের কাছে; রাজ্যের জনগণের হয়ে তিনি দেবীকে অঞ্জলী দিচ্ছেন।
ওই মণ্ডপে মহিষাসুরের জায়গায় বসানো হয়েছে রাজ‌্যরে বিরোধীদলীয় নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মূর্তি। এই মহিষাসুর আবার উদ্ধত নন, দেবীর কৃপা পাওয়ার আশায় খানিকটা অবনত।
পূজা উদযাপন কমিটির আয়োজক অসীম বসু অবশ্য মণ্ডপে রাজনীতির এ আবহকে স্বীকার করছেন না।
স্থানীয় এ তৃণমূল নেতার ভাষ্য, “যারা এখানে আসছেন তারা তাদের মত করে ব্যাখ্যা করছেন। আমাদের অবশ্য এ ধরনের কোনো ইচ্ছা ছিল না, কেবল চেয়েছি পূজামণ্ডপে যেন নারীর ক্ষমতায়ন ফুটে ওঠে।”
তবে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে এনিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে ব্যাপক। ভক্তরা অনেকেই এতে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হয়েছেন। তাদের ভক্তি ও ভালবাসার দেবী দুর্গার প্রতিমাতে এরকম রাজনীতিকরণ মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
ফেসবুকে অনেকেই মমতা ব্যানার্জিকে ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, উপহাস করেছেন, গালিগালাজও করছেন অনেকে। অনেকে আবার পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যত পরিণতি নিয়ে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় এই সংবাদের নিচে পাঠকরা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। রাজকুমার দাস নামে একজন পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘এটা সৃজনশীলতার অপপ্রয়োগ।’
লজিক্যাল ইন্ডিয়ান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, What shud we expect on Dashmi? Dissolution of the Bengal assembly as “Ma” MB will be taken for bhaashan..’অর্থাৎ ‘দশমীর দিনে আমরা কী প্রত্যাশা করি? মা মমতা ব্যানার্জির ভাসানের মাধ্যমে বাংলার অ্যাসেম্বলি লুপ্ত হোক।’