যুগবার্তা ডেস্কঃ দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় গণপরিবহনকে টার্গেট করা হতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশ ও পরিবহন মালিকদের। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে সংশ্নিষ্টরা বলেন, ২০১৩-১৪ সালের মতো যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে রাজধানীতে চলাচলকারী সব বাসে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বসানোর পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া গণপরিবহন পার্কিংয়ের স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসাতে বলা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে নাশকতাকারীরা যেন তাদের টার্গেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, রাজধানীর কোনো পরিবহনে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই। আমরাও মনে করি, এসব যন্ত্র থাকা জরুরি। পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়েছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার পরিবহন মালিকরা বৈঠক করে সবাইকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
ডিএমপির উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে পরিবহন খাতের নেতারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বারবার পরিবহন খাতকে সহজ টার্গেট করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন। এতে পরিবহনের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটছে উল্লেখ করে পরিবহন মালিকরা বলেন, এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি তারা দেখতে চান না। গণপরিবহন পার্কিংয়ের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন তারা। ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের রায় সামনে রেখে নিজেদের শঙ্কার কথাও জানান পরিবহন মালিকরা। পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবহন মালিকদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখার অনুরোধও জানানো হয়েছে।
পরিবহন সংশ্নিষ্টরা জানান, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বাস চলাচল করছে। পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হবে।
কোচিং সেন্টারের ওপর নজরদারি : ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে যে কোনো নৈরাজ্য ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর সব কোচিং সেন্টার, মেস ও আবাসিক হোটেলের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজধানীর সব প্রবেশপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বাস, লঞ্চ এবং ট্রেনের ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলাও করা হতে পারে। কেপিআইভুক্ত সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেলপথ ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করতে সারাদেশ থেকে রাজধানী ছাড়াও অন্যান্য বড় শহরে জড়ো হওয়ার চেষ্টা চলছে। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলতে পারে। এমন আশঙ্কার আলোকে এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে সতর্ক করেছে পুলিশ।-সমকাল