বাংলাদেশ ক্ষপতমজুর সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোহেল আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অর্ণব সরকার আজ এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমানে ধান কাটার মৌসুমে বিভিনś গণমাধ্যমে ‘১ মণ ধানের দামেও ক্ষেতমজুরের মজুরি হয় না’, ‘সময়মত কামলা মিলছে না’ ইত্যাদি নানা ধরণের বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ক্ষেতমজুর কেন পাওয়া যাচ্ছে না বা মজুরি কেন ১ মণ ধানের দামের বেশি সেসবের দিকে নজর না দিয়ে একপ্রকার এই শ্রমজীবী মানুষদের প্রতি বিরুদ্ধতার সুরেই কথা বলা হচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গ্রামাঞ্চলে বছরে ক্ষেতে তিন মাসের অধিক কাজ থাকে না। ফলে বাকি নয় মাস তাকে বেঁচে থাকার আশায় অন্য পেশা বেছে নিতে হয়। বাঁচার আশায় ক্ষেতমজুররা পরিবার-পরিজন, বাড়িঘর ফেলে আবার কখনও পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যায় এবং বস্তিতে মানবেতর জীবনযাপন করে। এই কাজ খুঁজতে গিয়ে শহরে সে অন্য পেশার সাথে যুক্ত হয়ে যায় অথবা গ্রামেই যখন যা পায় (যেমন রিক্সা, ভ্যান, অটো ইত্যাদি চালানো, ইটভাটার কাজ) সে কাজ করে। এবং বর্তমানে সে যে পেশায় যুক্ত আছে দেখা যাচ্ছে তা ধান কাটার মজুরির চাইতে বেশি, ফলে ধান কাটার মৌসুমে কৃষিশ্রমিকের অপর্যাপ্ততা তৈরি হয়েছে। অপরদিকে কৃষিশ্রমিকের উচ্চ পারিশ্রমিকের কথা বলা হলেও তাদের জন্য কোনো নির্ধারিত কর্মঘন্টা না থাকায় তারা অতিরিক্ত পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে মৌসুমে এ অতিরিক্ত মজুরি উপার্জন করে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ কৃষকের ধানসহ ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে আরও বলেন, ধানের উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কৃষিতে যে বর্গা-চুক্তি প্রথা আছে তাকে একটি নিয়মতান্ত্রিক আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে জমির মালিকরা কৃষি আবাদ না করে ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষকদের সাথে উচ্চমূল্যে জমি চাষের চুক্তি করে থাকে, ফলে বিঘাপ্রতি ধান উৎপাদনে কৃষকের তিন থেকে চার হাজার টাকা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে চাতাল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে ধান বিক্রয় করতে কৃষক লাভজনক দাম পাচ্ছে না। কৃষকের ক্ষতির এই মূল কারণকে আড়াল করতেই মজুরের ন্যায্য মজুরিকে অধিক মজুরি হিসেবে অপপ্রচার চালিয়ে কৃষক ও মজুর উভয়কে শোষণের জালে বন্দী করে নিজেদের পিঠ বাঁচাচ্ছে এই সিন্ডিকেট গং। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার সারাবিশ^ জুড়ে চলছে। আমাদের দেশেও এখন চাষাবাদ, ধান মাড়াই, সেচ ইত্যাদিতে যন্ত্রের ব্যবহার চলছে। কিন্তু ধান কাটার সময় আদিম পদ্ধতিই এখন বহাল আছে। ফলে ধান কাটার সময় প্রতিবছরই ক্ষেতমজুরের সংকট ও বেশি মজুরির প্রশ্নটি সবার সামনে চলে আসে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একজন ক্ষেতমজুরের শরীরের শ্রমই তাঁর বেঁচে থাকার মূল অবলম্বন।