যুগবার্তা ডেস্কঃ মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ রায় দেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ নিজামীর মামলায় রায় দেন। এ বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এদিকে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, নিজামীর চরম দণ্ড অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডই বহাল থাকায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নিজামীর রায় ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। গতকাল বিকেল থেকে সুপ্রিম কোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় অসংখ্য পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নাশকতার আশঙ্কায় চট্টগ্রামে ১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিজিবি মাঠে দায়িত্ব পালন করবে। একাত্তরের আলবদরপ্রধান মতিউর রহমান নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আজ শাহবাগে অবস্থান নেয় গণজাগরণ মঞ্চ।সেখানে সমাবেশ চলে ভোর থেকেই। রায় বহালের সংবাদ আসার সাথে সাথে উল্লাস প্রকাশ করেন। একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের একটি সংগঠন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ আপিল নিজামীরটি। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে করা পাঁচটি আপিল নিষ্পত্তি হয়েছে। এসবের মধ্যে চারজনেরই ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এ চারজন হলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা। জামায়াতের আরেক নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এখন কারাবন্দি। আপিল বিভাগ থেকে তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এক রায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৩ নভেম্বর আপিল বিভাগে আপিল করেন নিজামী। এই আপিলের ওপর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শুরু হলেও শেষ হয় ৮ ডিসেম্বর।
নিজামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল চারটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং চারটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। যে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সেগুলো হলো—পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়ীসহ দুটি গ্রামে প্রায় ৪৫০ জনকে গণহত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা ও একজনকে ধর্ষণসহ বাড়িঘরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড (১৬ নম্বর অভিযোগ)। যে চার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় সেগুলো হলো—পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), ঢাকার মোহাম্মদপুরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র করা (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাতজনকে হত্যা ও লাশ গুম করা (৮ নম্বর অভিযোগ)।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয় ট্রাইব্যুনালে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ছাড়াও বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নিম্ন আদালত। এ রায়ের বিরুদ্ধে নিজামীর করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন।