নতুন নিয়োগের আগে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেবে মালয়েশিয়া

যুগবার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার আগে মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা দেয়া হবে। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় নিয়োগ করা হবে। এ কথা বলেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অফিস বিষয়ক মন্ত্রী ড. উই কা সিয়ং।
তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে বিদেশী সব শ্রমিককে যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসা হবে। ওদিকে বাংলাদেশী গৃহপরিচারিকা নেয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়ার মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে নানা রকম প্রতিবেদন। তাতে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশী গৃহপরিচারিকা নিয়োগের বিষয়ে মালয়েশিয়া খুব আগ্রহী নয়। ভাষাগত সমস্যা ও পরিচ্ছন্নতা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। ফলে সেখানে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের গৃহপরিচারিকার চাহিদা বেশি।
এসব খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার ইংরেজি পত্রিকা দ্য স্টার। এতে বলা হয়, সেখানে অবস্থানরত বিদেশী শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার প্রক্রিয়া যখন শেষ হবে তখনই পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশী শ্রমিক নেবে সেদেশের সরকার।
ড. উই কা সিয়ং বলেন, এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশী শ্রমিকও। অবৈধদের বৈধতা দেয়ার পর তাদেরকে বিভিন্ন খাতে নিয়োগ করা হবে। মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন খাতে শ্রমিকের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে কারখানায় তা অনেক বেশি। ইয়ং পেং-এ আয়ার হিতাম এমসিএ ডিভিশন চাইনিজ নিউ ইয়ার ওপেন হাউজ অনুষ্ঠানে শুক্রবার সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ড. উই কা সিয়ং।
দ্য স্টার পত্রিকা আরও একটি রিপোর্টে বলছে, অপরিচ্ছন্নতা ও ভাষাগত সমস্যার কারণে বাংলাদেশী গৃহপরিচারিকা নেয়ার বিষয়ে সন্দিহান মালয়েশিয়ানরা। ব্যাংক ম্যানেজার টিঙ্কু নোরানি আহমেদ (৫২) এখন তার বাসার জন্য দ্বিতীয় একজন গৃহপরিচারিকা খুঁজছেন।
তবে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশী গৃহপরিচারিকা নিয়োগের বেলায় বড় কিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে তাদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি আছে। ভাষাগত সমস্যা আছে। তার ভাষায়, মালয় ভাষার সঙ্গে অনেকটা মিল আছে ইন্দোনেশিয়ার ভাষার। এছাড়া ফিলিপাইনের গৃহপরিচারিকারা ইংরেজিতে ভাল ভাব বিনিময় করতে পারেন। ফলে এ দুটি দেশের পরিচারিকাদের নিয়োগ করা তাদের জন্য সুবিধাজনক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী গৃহপরিচারিকা সস্তায় পাওয়া যায়। কিন্তু তাদেরকে আমি নিয়োগ করার কথা তখনি ভাববো যদি তাদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। মার্কেটিং ম্যানেজার পি. অঞ্জলি বলেন, যদি গৃহপরিচারিকারা তাদের কাজ করতে সক্ষম হন, নিজে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকেন তাহলে তিনি যেকোন দেশের গৃহপরিচারিকা নিতে চান। তার ভাষায়, আমার মা ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খুবই সচেতন। ফলে পরিচারিকার প্রশিক্ষণের সময় তাকে এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। যদি এমনটা হয় তাহলে তিনি শুরুতেই একজন বাংলাদেশী গৃহপরিচারিকাকে মাসে ৫০০ রিঙ্গিত বেতন দিতে ইচ্ছুক।
অন্যদিকে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের কন্ট্রাক্টর নোরিয়াহ আরশাদ (৫৪) বলেন, তিনি ইন্দোনেশিয়ার গৃহপরিচারিকা নিয়োগের পক্ষে। কারণ, অন্য দেশের থেকে এ দেশের পরিচারিকারা দীর্ঘ সময় কাজ করে থাকেন। যদি ইন্দোনেশিয়ার গৃহপরিচারিকার বেতন অনেক বেশি হাঁকা হয় তাহলেই আমি বাংলাদেশী পরিচারিকার দিকে ঝুঁকবো। তবে এক্ষেত্রে আমি সন্দিহান যে, তারা ফুল টাইম কাজ করতে পারবেন কিনা।
তার ভাষায়, আমি শুনেছি যেসব বাংলাদেশী তাদের পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়ায় থাকেন তারা প্রতিদিনই তাদের আবাসস্থলে ফিরে যেতে চান। এতে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আরশাদ তিন বছর আগে একজন ইন্দোনেশিয়ার পরিচারিকা নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বছরে মাত্র একবার তার বাসায় যান।
ওদিকে গৃহপরিচারিকা বিষয়ক একটি এজেন্সির ম্যানেজার অ্যালিস চু বলেন, তিনি ইন্দোনেশিয়ার পরিচারিকার পক্ষে। এ বছর তিনি ফিলিপাইনের মানবসম্পদ বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছেন। তার ভাষায়, কোম্পানিগুলো বাংলাদেশী পরিচারিকা নিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী নয়। উল্লেখ্য, আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার কথা রয়েছে মালয়েশিয়ার। এ জন্য খুব শিগগিরই দু’দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তিও হওয়ার কথা।