যুগবার্তা ডেস্কঃ দ্বিদলীয় রাজনৈতিক ধারার বাইরে অসম্প্রদায়িকতাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে আস্থাশীল একটি জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এরই মধ্যে তিনি ‘ঐক্য প্রক্রিয়া’র ব্যানারে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে তাঁর ওই উদ্যোগকে জীবনের শেষ চেষ্টা বলে মন্তব্য করেন।
ঐক্যের ডাক দিয়ে এ লক্ষ্যে জনমত সংগ্রহ করতে তিনি বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন বলে গণফোরাম সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র মতে, বিশিষ্ট এই আইনজ্ঞ গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে স্থানীয় গণফোরাম আয়োজিত এক নাগরিক সংলাপে অংশ নেন। সেখানে তিনি বড় দুই দলের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এরপর ২৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরায়ও একই রকম আরেকটি নাগরিক সংলাপে অংশ নেন তিনি।
গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানান, ড. কামাল হোসেন ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি এখন বিভিন্ন জেলা সফরের কর্মসূচি নিয়েছেন। সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা দুটি জেলায় গিয়েছি। সাধারণ মানুষের বেশ সাড়া পাচ্ছি। ’
বিকল্প রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সম্ভবনা অনেক।
আমরা দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। মানুষ গণতন্ত্র চায়, ভোটের অধিকার চায়, বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা চায়। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করছি ঐক্যবদ্ধ হতে, দেখি কী হয়। আশা করি, কিছু হবে। ’
গত ২২ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে ‘চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করেন ড. কামাল হোসেন। তাঁর আমন্ত্রণে ওই সভায় হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা। আরো ছিলেন সুধীসমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি। বেশির ভাগ আলোচক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি বিকল্প রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলার তাগিদ দেন। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তমসহ সাম্প্রতিক সময়ে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট গড়ার একাধিক উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে। গত বছর ৪ ডিসেম্বর আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠকের পর ‘যুক্তফ্রন্ট’ নামে একটি রাজনৈতিক জোট ঘোষণা করা হয়। এর আহ্বায়ক করা হয়েছে বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। এ জোটে আরো আছে আবদুল কাদের সিদ্দিকীর দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ স ম আবদুর রবের জেএসডি এবং মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য। গত বছর জুলাই মাসে ঐক্য প্রক্রিয়ায় শামিল হয়েছে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার আটটি দল।
জানা যায়, নতুন জোট গঠনে আগ্রহী কয়েকটি দল এইচ এম এরশাদের সঙ্গে জোট গড়তে অনেক দূর এগিয়েছিল। তবে ড. কামাল হোসেনের আপত্তিতে সে উদ্যোগ আর এগোয়নি। আবার বিএনপির সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী ছিল যুক্তফ্রন্টে থাকা দুটি দল। কিন্তু ওই জোটে যেতে নারাজ আবদুল কাদের সিদ্দিকী। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মূল ভিত্তি ধরে বড় দুই জোটের বাইরে একটি ঐক্য গড়ার দিকে জোর দেন ড. কামাল। এতে সায় দেয় যুক্তফ্রন্ট ও বাম দলগুলোর জোট। তবে বাম দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘরে বসে জোট গড়ার মধ্য তারা নেই, আন্দোলনের মাঠে থেকে জনতার আস্থা অর্জন করতে হবে।
বিকল্প রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির ওই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনীতি বিশেষকদের কারো কারো। গবেষক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশে দ্বিদলীয় ধারা টিকে আছে শুধু ছোট ও মাঝারি দলগুলোর দায়িত্বহীনতার কারণে। রাজনীতির পরিবর্তন আনতে হলে ছোট দলগুলোকে আগে সঠিক পথে রাজনীতি করতে হবে।
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘হ্যাঁ আমরা ঐক্য চাই, বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি চাই। তবে তা হতে হবে রাজপথের ঐক্য, ঘরে বসে নয়। আমরা রাজপথে আছি উনারাও আসুক। সবাই মিলে পথে নেমে আগে জনতার আস্থাশীল হোক। তাহলেই সত্যিকারের বিকল্প গড়ে উঠবে। ’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘কামাল হোসেনের ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাম ও উদারপন্থার দল ও লোকেরা আছে। আগে স্ব স্ব অবস্থান থেকে প্রত্যেকে আন্দোলনে নেমে প্রমাণ করতে হবে সুযোগ-সুবিধা পেলেই আবার দ্বিদলীয় ধারায় শামিল হয়ে পড়ব না। ’
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা দ্বিদলীয় ধারার বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট গড়তে চাই। সে কারণে ড. কামাল হোসেনের ডাকে গিয়েছিলাম। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, আমরা প্রক্রিয়ার সঙ্গে আছি। তবে শর্ত হলো সকলকে রাজপথে আসতে হবে। ’
বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর-উত্তম অবশ্য বলেন, ‘আশা করছি একটা কিছু হবে। এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না। দেখা যাক কী হয়। ’
তবে আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘দ্বিদলীয় ধারার বিরপীতে ঐক্য তো হয়েই গেছে। আমরা ইতিমধ্যে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছি। এখন অন্যদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বৃহত্তর রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে তুলব। ’-কালেরকন্ঠ