যুগবার্তা ডেস্কঃ ‘গ্রাম হবে শহর’ এর অর্থ গ্রামকে ঢাকা শহর বানানো নয়। এর অর্থ শহরাঞ্চলের মৌলিক সুযোগ সুবিধা গ্রামাঞ্চলে নিশ্চিত করা এবং গ্রামে একটি ‘সিস্টেম্যাটিক’ টাউন স্থাপন করা – যা আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। বিকেন্দ্রীয়করণেও ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ল্যান্ড-জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের সময় আমরা লক্ষ্য রাখছি কৃষি জমির সুরক্ষার ব্যাপারে, যেন দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত না হয়।
আজ ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘Challenges of Real Estate in Urbanization and Decentralization’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে প্রদান কালে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এসব কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল কারিগর বেসরকারি সেক্টর – এবং, এতে এটাও প্রমাণ হয় বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ‘ফ্যাসিলিটেটর’ (সহায়তা প্রদানকারী) হিসেবে সফল। ভূমিমন্ত্রী মনে করেন আবাসন খাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাশ্রয়ী মূল্যের বাসস্থান সংস্থান। ভূমিমন্ত্রী উপস্থিত সবাইকে সাধারণ ভাবনা থেকে বের হয়ে সমগ্র বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা বলেন। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরে অবকাঠামো নির্মাণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একসময় উন্নয়ন শুধু ঢাকা কেন্দ্রিক ছিল, এখন বর্তমান সরকার দেশের সামগ্রিক এবং সমানুপাতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তবে, সরকার কি করবে তা নিয়ে বসে না থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ নিয়েও ঢাকার বাইরে বিনিয়োগ করার আহবান জানান সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন ঢাকা বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশ ঢাকা নয়।
মন্ত্রী বলেন, কোন নতুন কাজ শুরু করার আগে সরকারের অনেক কিছু ভাবতে হয়। বেসরকারি সেক্টরে সেই অসুবিধা অনেক কম। তিনি সবাইকে ‘আউট অফ দ্যা বক্স’ চিন্তা করার পরামর্শ দেন। ভূমিমন্ত্রী মনে করেন প্রাইভেট পর্যায়ে কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে পিপিপি’র আওতায় দেশের প্রান্তিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। মন্ত্রী এক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণও প্রদান করেন।
“সরকার কেন নিজেও সরাসরি সার্ভিস প্রদান করে” – উপস্থিত আলোচকবৃন্দের এই অনুযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন ‘ফ্যাসিলিটেটর’ এবং ‘রেগুলেটর হিসেবে মূল দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এবং জনস্বার্থে সরকারেরও উদীয়মান সেক্টরে সরাসরি কাজ করতে হয়। এছাড়া, মন্ত্রী মনে করেন জমির দাম বাড়ার কারণ মোটেও কোনও ধরণের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রভাবে হয় নাই। এটা মূলত অর্থনীতির মৌলিক ব্যাপার – চাহিদা এবং যোগানের প্রভাব। এজন্যই অনেক সময় কোন কোন ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কে জমির মূল্যের ৬০ শতাংশ অর্থ কাজের শুরুতেই প্রদান করা হয়।
১৯৭৫ সালের পরে দেশের অর্থনীতি এবং গণতন্ত্র স্থবির হয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই অবস্থা থেকে ইতোমধ্যে উত্তরণ লাভ করে নিম্ন-মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবার পথে। বর্তমান গতিতে চললে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।
মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন এই বছরের জুন কিংবা জুলাই নাগাদ সমগ্র দেশে ই-নামজারি চালু হয়ে যাবে এবং ভূমি সম্পর্কিত বিভিন্ন ফি এবং কর প্রদানের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে পেমেন্ট গেটওয়ের স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। মন্ত্রী বলেন আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমরা সঠিক পথেই আছি। অর্থনৈতিক খাতসমূহের উপাত্ত তাই প্রমাণ করছে। আমাদের উন্নয়নে ইনশাল্লাহ কেউ বাধা দিতে পারবেনা।
মন্ত্রী বলেন, এই সরকার এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনা। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা বিশ্বাসী। আমরা আরও বিশ্বাস করি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা যাবে। এসব গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ। বাংলাদেশ জনগণের রাষ্ট্র – জনগণকে সামনে নিয়েই আমাদের আগাতে হবে – এটাই গণতন্ত্র। কেবল একদিনের ভোট প্রদানের দিন ভোট দেওয়া গণতন্ত্র নয় বলে মন্ত্রী বলেন।
বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব আতিকুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে প্রাণের শহর ঢাকাকে নিরাপদ করার জন্য একযোগে মিলে কাজ করার জন্য সবাইকে আহবান জানান। সেই সাথে সমষ্টিগত এবং সু-সংহতভাবে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার কথাও তিনি জানান। তিনি স্যাটেলাইট সিটির গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করেন।
সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি জনাব কাজী গোলাম নাসির। তিনি তাঁর বক্তব্যে নগরায়ণ এবং বিকেন্দ্রীকরণে ১৬ টি সমস্যা চিহ্নিত করেন এবং সেসব থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সরকারী এবং বেসরকারি আবাসন সেক্টরের অংশীদারীত্বের সম্ভাবনা এবং গুরুত্বের কথাও আলোচনা করেন।
এছাড়া, অন্যান্য নির্ধারিত আলোচকবৃন্দের মধ্যে ছিলেন অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড হোল্ডিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান সেলিম আখতার খান, প্যারাডাইস ডেভেলপমেন্ট এন্ড কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আল আমিন এবং ভিসতারা আর্কিটেক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আবাসন মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)- এঁর সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন।
উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের উন্মুক্ত আলোচনার মধ্যে দিয়ে সেমিনারের কার্যক্রম শুরু হয়। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী আলোচকবৃন্দের বক্তব্যের উপর স্থপতি জনাব কাজী গোলাম নাসির তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন।
সেমিনারের সভাপতিত্ব এবং স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ওসামা তাসীর এবং সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন উক্ত সমিতির জ্যৈষ্ঠ সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী।
সরকারি-বেসরকারি আবাসন সেক্টরের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং নির্বাহী সহ উক্ত সেক্টরের সাথে স্বার্থসংশ্লিষ্ট পেশাজীবী ব্যক্তিবর্গ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন এবং উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। সেমিনারের শেষে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে ঢাকা চেম্বার এবং রিহ্যাবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্বারক প্রদান করা হয়।